
শহরে ঈদগাহ মোড়ে নিত্য যানজট
ইজিবাইক, রিক্সা, মোটরসাইকেলের চাপে যশোর শহরের রাস্তায় চলাচল করা দায়। রাস্তায় নামলে মনে হয় চতুর্দিক থেকে গাড়ি আসছে। ফলে শহরে প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
প্রায় ১৬০ বছরের পুরনো যশোর পৌরসভা। দেশের প্রাচীনতম এ পৌরসভায় আকাশচুম্বী ভবন বাড়ছে, বাড়ছে জনসংখ্যাও। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন কিন্তু রাস্তার প্রশস্ততা বাড়েনি সেভাবে। ব্রিটিশ আমলের সরু রাস্তা জনসংখ্যার চাপে এখন গলিপথ হয়ে গেছে। এর পরও এর প্রশস্ততা বাড়ানোর তেমন উদ্যোগ নেই। এ জন্য বড় শহরের ছোট রাস্তায় নগরবাসীকে প্রতিনিয়তই নানাবিধ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
১৮৬৪ সালে যশোর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে এর আয়তন কম থাকলেও বছর খানেকের মধ্যে পৌর এলাকার আয়তন দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৪ বর্গমাইল। বর্তমানে এর আয়তন ১৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এবং প্রস্তাবিত আয়তন ২২ দশমিক ৩২ বর্গকিলোমিটার।
পৌরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৌরশহরের পাকা রাস্তা রয়েছে ১৭৬ কিলোমিটার। এ ছাড়া আরসিসি সড়ক ৩০ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, সোলিং ৫১ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৩০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। পৌর তথ্যে জানানো হয়েছে, এই রাস্তা সবই পৌরসভার নিজস্ব। তবে পৌরসভার মধ্যে প্রশস্ত কয়েকটি সড়ক রয়েছে সেগুলো সড়ক বিভাগের। দড়াটানা থেকে পালবাড়ি, দড়াটানা থেকে মণিহার হয়ে মুড়লি, দড়াটানা থেকে চাঁচড়া, দড়াটানা থেকে জেলখানা হয়ে নিউ মার্কেট এবং পালবাড়ি থেকে বোর্ড অফিস হয়ে মণিহার। এই সড়কগুলো সড়ক বিভাগের হলেও সবচেয়ে কম প্রশস্ততার সড়ক দড়াটানা-মণিহার পর্যন্ত। এ সড়কের থানা মোড়ের অংশ খুবই সরু। অবশ্য সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এসব সড়কের প্রশস্ততা ২৪ মিটার আছে।
সম্প্রতি তৈরি হওয়া মণিহার থেকে মুড়লি সড়কটির সব মিলিয়ে প্রশস্ততা ১১০ মিটার। পালবাড়ি থেকে শিক্ষা বোর্ড অফিস হয়ে মণিহার পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা ২৪ মিটার। শহরের এই সড়কগুলো বড় দেখা যায়। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, তাদের নিজস্ব সড়ক ৬০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত। উদাহরণ হিসেবে তিনি রেল রোডের (যেটি আশ্রম হয়ে চলে গিয়েছে) কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পৌরসভার নিজস্ব পাকা সড়কের সর্বনিম্ন প্রশস্ততা ১০ মিটার। এ রকম সড়ক পাওয়ার হাউজ পাড়ায় পাওয়া যাবে। মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ জানান, গত ২ বছরে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পে ৬০টির বেশি নতুন রাস্তা আরসিসি ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
এ রাস্তার সর্বোচ্চ প্রশস্ততা ৮ ফুট এবং সর্বনিম্ন প্রশস্ততা ৪ ফুট। পৌর শহরের পূর্ব বারান্দিপাড়া, পশ্চিম বারান্দিপাড়া, শংকরপুর, আশ্রম রোড, বেজপাড়া, ঘোপবেলতলা এলাকাসহ বেশিরভাগ এলাকার মানুষের অভিযোগ, এত পুরনো শহরের কোনো রাস্তাই বড় নয়। বেশিরভাগ রাস্তা সরু এবং এর দু’পাশ চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় দুটি রিক্সা, ভ্যান বা ইজিবাইক পাশাপাশি চলাচল করতে পারে না। এর ওপর অতিরিক্ত বাহনের চাপ থাকায় প্রায় প্রতিটি সড়কে দিনের বেশিরভাগ সময় জট পাকিয়ে যায় রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক-মোটরসাইকেল-মালগাড়ির। এর সঙ্গে হুটহাট করে ঢুকে পড়ে থ্রিহুইলার, নসিমন-করিমন, মাছ ও পণ্যবাহী পিকআপ, ট্রাক, স্কুলবাস, বিভিন্ন কুরিয়ারের বড় বড় কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য গাড়ি। ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, কোনো পরিকল্পনা নেই এ শহরের জন্য।
বলা হচ্ছে মডেল টাউন কিন্তু কোনো পরিকল্পনা নেই, রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সর্বত্রই অপরিকল্পনা, অব্যবস্থাপনা, চলাচলের অনুপযোগী শুধু নয় একটা ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু শহরটাকে দেখলে কোনোভাইে সে কথার প্রমাণ করা যায় না। সবচেয়ে পুরনো শহরের এই অবস্থা দেখতে কষ্ট লাগে। যশোরবাসী আর কত পেছনে থাকবে?
শহরের রাস্তাঘাট ছোট ও অপরিকল্পিত স্বীকার করে মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে শহর বর্ধিত হয়েছে। ইংরেজ আমলে এর শুরু সাহেবদের প্রয়োজনে, স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রয়োজনে নয়। পরবর্তীতে কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে তবে একটি শহর তৈরিতে যে ধরনের পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল তার ছাপ রাখা হয়নি। ফলে শহর ও বড় রাস্তা, পরিচ্ছন্ন নগর ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তা অতীতে পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার এ শহরের উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটা বড় বড় রাস্তা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হচ্ছে।