
সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন
সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন সোমবার জমজমাট প্রচারে উত্তাল হয়ে ওঠে নগরী। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারে নগরী ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়। অনেকটা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট আনতে ব্যস্ত ছিলেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নগরীর ওয়ার্ড ও মহল্লার সড়কে সড়কে মিছিল ও শোডাউন করে প্রার্থীরা শক্তিমত্তার জানান দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরের পর থেকেই ওয়ার্ড মহল্লায় খণ্ড খণ্ড মিছিল ও শোডাউন করেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। নগরীজুড়ে শুরু হয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে মাইকিং। মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বিরামহীন মাইকিংয়ে মানুষের কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। শেষ দিনের প্রচারে কোনো প্রার্থীই গণসংযোাগে ছাড় দেননি।
শেষ দিনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচার ॥ সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন সোমবার দিনভর কখনো হাল্কা, কখনো মাঝারি বৃষ্টিতে প্রচার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। বৈরী আবহাওয়াতেও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সারাদিন টানা গণসংযোগ করেছেন। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনী শেষ মিছিল করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেন। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা সোমবার ঘরে ঘরে গিয়ে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে দেন। নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সোমবার নগরীতে গণসংযোগকালে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। নিজের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে প্রচারে অনেকটই সফল হয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান।
তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও আধুনিক ও স্মার্ট নগরী গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া এবং নৌকায় রায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান। সোমবার বিকেলে নগরীর চালিবন্দর এলাকায় গণসংযোগকালে নৌকার মেয়র প্রার্থী স্থানীয় অধিবাসী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে লিফলেট ও ইশতেহারের কপি বিতরণ করেন। এ সময় তিনি সচেতন অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত হন এবং নির্বাচিত হলে দলমত নির্বিশেষে সবার মতামত নিয়ে সে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এদিকে সোমবার দুপুরে জেলা যুবলীগের উদ্যোগে নৌকার পক্ষে প্রচার মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত পথসভার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
আনোয়ারুজ্জামানকে এক ওয়ার্ডের সব প্রার্থীর সমর্থন ॥ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ১৬নং ওয়ার্ডের সব কাউন্সিলর প্রার্থী মেয়র পদে সমর্থন করেছেন নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা রবিবার রাতে প্রকাশ্যে নৌকায় নিজেদের সমর্থন ঘোষণা করেন। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নয়জন কাউন্সিলর প্রার্থী। কিশোরী মোহন বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হয়ে তার প্রতি নিজেদের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ইশতেহারে সিলেটবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন হলে সিলেট হবে সত্যিকার অর্থেই একটি স্মার্ট ও তিলোত্তমা নগরী। তিনি বলেন, খুলনা ও বরিশালের মতো সিলেটবাসীও নৌকার জয় নিশ্চিত করে তিলোত্তমা নগরী গড়ার পক্ষে রায় দেবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ জেবুন্নেছা হক বলেন, নৌকায় ভোট দিলে আপনাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে। আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে নির্বাচনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
যুব মহিলা লীগের প্রচার ও গণমিছিল ॥ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সমর্থনে সিলেট জেলা ও মহানগর যুব মহিলা লীগের উদ্যোগে প্রচার ও গণমিছিল করা হয়েছে। মিছিলটি জেলা পরিষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়। পথসভায় বক্তারা আগামীকাল ২১ জুন সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের গণসংযোগ ॥ নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, সিলেট জেলা গণসংযোগ করেছে। নগরীর সোবহানীঘাট পয়েন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক, বিপনী বিতান, পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ শেষে চালিবন্দরে গিয়ে শেষ হয়। লিফলেট বিতরণকালে নেতৃবৃন্দ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
নৌকার সমর্থনে বাউলদের মতবিনিময় ॥ নৌকার সমর্থনে বাউল কল্যাণ সমিতি, সিলেট বিভাগের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর তালতলার মাহমুদ শাহ শপিং সেন্টারে সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেলের সভাপতিত্বে নগরীতে বসবাসরত সকল বাউলশিল্পী, যন্ত্রশিল্পীসহ সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় প্রধান অতিথি বিশিষ্ট গীতিকবি জগন্নাথপুর কালচারাল ফোরাম ইউকের সভাপতি ও নর্থইস্ট আওয়ামী লীগ ইউকের সভাপতি সৈয়দ দুলাল বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানকে নির্বাচিত করলে বাউলশিল্পী, সংগীত শিল্পীরা নিরাপদে সংগীত পরিবেশন করতে পারবেন। কারণ আনোয়ারুজ্জামান আপাদমস্তক একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তিনি হৃদয়ে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বাউল গান লালন করেন।
আদালতপাড়ায় গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও সিলেটের সরকারি কৌশলী (জিপি) রাজউদ্দিনের নেতৃত্বে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নৌকার সমর্থনে গণসংযোগ করা হয়েছে। সোমবার প্রচারের শেষ দিনে জেলা আইনজীবী সমিতিতে নৌকার সমর্থনে গণসংযোগ করেন তিনি। গণসংযোগে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন।
জাপা প্রার্থীর প্রচার মিছিল ॥ লাঙল প্রতীকের সমর্থনে দক্ষিণ সুরমায় প্রচার মিছিলের পূর্বে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেছেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে লাঙলের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। সরকার সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো তামাশা খেলার চেষ্টা করলে জাপা নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। তিনি সোমবার বিকেলে নগরীর দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে লাঙল প্রতীকের সমর্থনে প্রচার মিছিলের পূর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে, পেশিশক্তি প্রয়োগও চলছে। কিন্তু পবিত্র এই নগরীর ভোটাররা ২১ জুনের নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়ে তাদের সব ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রচারের শেষ দিনে বিভিন্ন পথসভায় বাবুল পরিকল্পিতভাবে নগরীর উন্নয়নে লাঙল মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটের শঙ্কা থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হলে লাঙলের বিজয় নিশ্চিত।
ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করেন জাপার মেয়র প্রার্থী বাবুল। তার অভিযোগ- সিলেটের এমসি ও সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রতিপক্ষ প্রার্থী সন্ত্রাসী বাহিনী জড়ো করছেন সহিংসতা ঘটানোর জন্য। এ জন্য ভোটের দিন এ দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ রাখতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাবুল।
রাজশাহীতে লিটনের প্রেস ব্রিফিং ॥ সোমবার মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রেস ব্রিফিং করেছেন। এছাড়া শেষদিনে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছেন বিশাল মিছিলের মাধ্যমে। লিটন ভোটের মাঠে চাঙ্গা থাকলেও প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটাই নিঃসঙ্গ দেখা গেছে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থীকে। ভোটের শেষ প্রচারেও সাড়া ফেলতে পারেননি তারা।
দুপুরে নগরীর একটি রেস্তরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষদিনের প্রচার শুরু করেন নৌকার মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। বিকেলে তার নেতৃত্বে নগরীর জয়বাংলা চত্বর থেকে বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ১৪ দলের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর এলাকায় শেষবারের মত গণসংযোগ করেন লিটন। এ সময় তারসঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এবার আমার নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম বিষয়টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। রাজশাহীর মানুষের জন্য কর্মের ব্যবস্থা করা, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলোকে কার্যকর করা। রাজশাহীতে ইতোমধ্যে বিসিক শিল্প নগরী-২ তৈরি হয়েছে। সেখানে বিনিয়োগকারী এনে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হবে। নগরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মের ব্যবস্থা হবে। পদ্মা নদীকে বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে চাই। ভারতের মুর্শিবাদের ধুলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ হয়ে রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত নৌরুট চালু করতে চাই। এটি চালু হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে, কর্মংস্থান বাড়বে।
নগরবাসীকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে নৌকার মেয়র প্রার্থী লিটন বলেন, কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই সবাই ভোট কেন্দ্র আসুন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করবেন।
লিটন বলেন, নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশের ব্যত্যয় ঘটানোর অপচেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণকে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।