ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুর রেলওয়ে বাসভবন থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার!  

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১৭ মার্চ ২০২৩

সৈয়দপুর রেলওয়ে বাসভবন থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার!  

রেলওয়ের বাংলো

সৈয়দপুরে রেলওয়েতে কর্মরতরা ভিন্ন নামের বরাদ্দকৃত রেল কোয়াটার ভাড়ায় বসবাসের পর অবসরে গিয়ে কোয়াটারগুলো কর্তৃপক্ষকে বুঝে না দিয়ে গোপনে লাখ-লাখ টাকায় করছে হাত বদল। বিক্রি করা হচ্ছে স্থাপনার খালি জায়গা। এতে শুধু বাড়ি ভাড়া থেকে অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটলেও দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, ব্রিটিশদের হাতে গড়া সৈয়দপুর রেলওয়ের জায়গা রয়েছে মোট ৭ শত ৯৯.৯৮ একর। এ জমির মধ্যে ১১০ একর জুড়ে রেলওয়ে কারখানা। অবশিষ্ট জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলো, সাব-বাংলো, দুই কক্ষ ও এক কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ও আধাপাকা কোয়াটার। ৩১টি বাংলোর মধ্যে অবৈধ ভাবে ২৫ বাংলো, ১৩৯টি সাব বাংলো, ৭ শতটি দুই কক্ষেও ও ১৬ শত এক কক্ষের বাসায় অবৈধ বা ভিন্ন নামে বরাদ্দ নিয়ে নাম মাত্র ভাড়ায় বসবাস করছেন রেলে কর্মরতরা।

এ সকল বাসাবাড়ির মধ্যে ১৩১৪ টি বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তহিদুল ইসলাম নামে বাংলোতে বসবাসকারী এক কর্মকতা জানান, সরকারী বেতনের বিধি মতে, কর্মচারীদের বেসিক কম। ওই বেসিকের ৫০ ভাগ তার অতিরিক্ত হাউজ রেন্ট পায়। আর অফিসারদের বেসিক বেশি। অফিসাররা নিজের নামে বাংলো বা কোয়াটার ভাড়ায় বসবাস করলে অনেক টাকা ব্যায় হবে। মুলত ব্যায় কমাতে কর্মচারিদের নামীয় বাংলো বা কোয়াটাওের সকল শেণী পেশাজীবিরা বসবাস করছেন।

এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে উর্ধ্বমূল্যের বাজারে আমরা রক্ষা পাচ্ছি। হেমায়েত আলী নামে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারী জানান, সিঙ্গেল কোয়াটার বরাদ্দ নিলে বেসিকের ৫ ভাগ ও ডাবল কোয়াটারের বাড়ি ভাড়া সরাসরি কেটে নেয়া হয়। আর নিয়মে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে বসবাস করছেন সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা রেলকারখানার প্লট বরাদ্দ বা হাউজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই এই অনিয়ম করায় কয়েক যুগে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব জমা হয়নি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।

শুধু তাই নয়, কোয়াটার ও বাংলোতে বসবাসকারীরা লাখ-লাখ টাকার বিনিময়ে সামনের জায়গা বিক্রি করছেন। সেখানে বহিরাগতরা বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় সাহেব পাড়াসহ রেলের কর্তাবাবুদের নামকরণের বাংলোগুলোর জৌলুস আর দৃশ্যমান হয় না। ঘিঞ্জি বস্তিতে পরিণত করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা বাংলোতে তৈরি করেছেন মেস। তারা বিধিই তোয়াক্কাই করেন না।  

এমন দৃশ্য দেখা গেছে, শহরের সাহেব পাড়া, অফিসার কলোনী, বাশবাড়ি, হাতিখানা, রসুলপুর, ইসলামবাগ, বাবুপাড়া, উচু কলোনী, গাডপাড়া, নিচু কলোনী, মিস্ত্রিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় রেলের কোয়াটার ও বাংলোগুলো নিয়ে কর্মচারীরা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।  জিন্নাতুল ইসলাম নামে রেলের অবসর প্রাপ্ত হিসাব রক্ষক বসবাস করেন অফিসার্স কলোনী এলাকায়। তিনি ৫৫৭ ও ৫৫৮ নম্বরের দুটি কোয়াটার অবৈধ দখলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।

এ নিয়ে রেলের মো: শরিফুল ইসলাম নামে উপ-সহকারি প্রকৌশলী পূর্ত বিভাগ ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতননদের কাছে এক পত্র প্রেরণ করেন। সেখানে ঊর্ধতনরা দ্রুত অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। তবে অজ্ঞাত কারণে আজও দখল মুক্ত হয়নি রেলের কোয়াটার ও বাংলো। 

রেলওয়ে ভুমি পাকশির নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, অভিযান চলমান রয়েছে। নির্দেশনা আসলে এবার চিহ্নিত রেলের কোয়াটার ও বাংলো দখলমুক্ত করা হবে।

 এসআর

×