
ড. এ এফ এম আবদুল মঈন
প্রশ্ন : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর কেমন কাটল?
উপাচার্য : চ্যালেঞ্জিং ছিল, অনেক নতুনত্ব ছিল। কিন্তু কম সময়ের মধ্যে আমরা যথেষ্ট কাজ করতে পেরেছি। সেদিক দিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
প্রশ্ন : চলার পথে চ্যালেঞ্জ কী কী ছিল?
উপাচার্য : গবেষণার জন্য যেসব প্রোগ্রাম করা দরকার সেসব ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। শিক্ষকদের গবেষণার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে কোনো ট্রেনিং কিংবা ভালো পাবলিকেশনের জন্যে অ্যাওয়ার্ড কোনোটারই ব্যবস্থা ছিল না। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটা ভিশন থাকা দরকার। এখন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা সবাই বুঝতে পেরেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল তা শিথিল হয়েছে। যার ফলে সবার কাছে ভিশনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও শিক্ষকদের গবেষণায় অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার এই ধারণা কিভাবে এলো?
উপাচার্য : শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের দক্ষতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রণোদিত করতে হবে বৃত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া না, তাদেরকে তাদের মেধার একটা স্বীকৃতি প্রদান করা। আমি চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে, তাদের সমস্যাগুলো কাছ জেনে, উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার।
প্রশ্ন : কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। রিসোর্স বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?
উপাচার্য : ল্যাব রিসোর্সের জন্য প্রতিবছরই একটা ফান্ড বরাদ্দ থাকে। কিন্তু যেহেতু এই চাহিদাটা ডাইনামিক, তাই আমরা রিসোর্স বাড়ানোর জন্য দেশী বিদেশী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশনে যাব। যাতে করে আমরা আমাদের ম্যান পাওয়ার দিয়ে তাদের রিসোর্সগুলো ব্যবহার করে গবেষণার কাজে এগিয়ে যেতে পারি। যেহেতু আমাদের এখন তেমন অ্যালামনাই নেই, আশা করা যায় ভবিষ্যতে যখন তারা ভালো পজিশনে যাবে তখন আমরা আরও সুবিধা পাব।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি আছে, যেটা নিয়ে শিক্ষক নির্বাচনে দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট। নতুন বছরে শিক্ষকদের প্রতি আপনার কী আহ্বান থাকবে?
উপাচার্য : শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান থাকবে, আপনারা রাজনীতি করেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেন গুণগত মান অক্ষুণœ থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
প্রশ্ন : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সামনের তিন বছরের পরিকল্পনা কী?
উপাচার্য : প্রথমত, আমার ভিশন হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি বাংলাদেশের সামনের সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি করতে চাই। পাশাপাশি রিসার্চ, স্কলারশিপ এগুলো অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে কিছু ফ্যাকাল্টি আনার ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া আমাদের অনুষদগুলো থেকে যে জার্নাল বের হবে সেই জার্নালগুলোর এডিটর প্যানেলে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞ লোকেদের আনার ব্যবস্থা করব।
প্রশ্ন : অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প চলছে, এটার কাজ কতদূর?
উপাচার্য : জমি নিয়ে কিছু ঝামেলার জন্যে ৪ বছর ধরে কাজ আটকে ছিল। এখন সেই সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং কাজও চলছে। যেহেতু এলসি ইস্যুতে সমস্যা, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের সময় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সব কিছু ঠিক থাকলে দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব।
প্রশ্ন : প্রশাসনকে গতিশীল করতে সামনে কি কোনো উদ্যোগ আছে?
উপাচার্য : আমি যে ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই ভিশনটাকে সবাই যদি আত্মস্থ করে তা হলে প্রশাসন অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের ওনারশিপ নিতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে। আমি তো ছুটির দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে সময় দেই। এ ছাড়া ক্রিয়েটিভ, ইনোভেটিভ কাজ করতে হবে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন : সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
উপাচার্য : এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা নিউজ। আমার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়ে আসা।
যোগ্যতা যারা প্রমাণ করতে পারবে, মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবে তারাই নিয়োগ পাবে। এগুলো মূলত তাদের কাজ, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল এবং নিজেদের স্বার্থ এখন পূরণ করতে পারছে না।