ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

সাপাহারে জমে উঠেছে চারাগাছের হাট

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২০ জুলাই ২০১৯

 সাপাহারে জমে উঠেছে  চারাগাছের হাট

চলতি বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় জমে উঠেছে চারা গাছ কেনা-বেচার মৌসুমী হাট। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ অতি সুলভ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বরেন্দ্র ভূমি হওয়ার কারণে এখানে বর্ষার পানি ওঠে না। তাই এলাকায় বাগানে গাছের চারা লাগানো খুবই সহজ সময় এখন। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পরিষদের অদূরে বসছে এই চারা গাছের মৌসুমী হাট। এখানে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুল গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে দেদার। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিদেশী প্রজাতির আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনিসহ দেশী জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা, জলপাই, পেঁপে এবং নিমসহ নানা ঔষধি গাছের চারা বিক্রি হতে দেখা গেছে। উপজেলা সদরের অদূরে অবস্থিত এই বিশাল চারা গাছের হাটে প্রায় ৪০-৫০টি চারা গাছের দোকান রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার চারাগাছ বেচা-কেনা হয়। চারা বিক্রেতা রিপন, সালাম ও শরিফুল জানান, এবারে উপজেলার এই মৌসুমী চারার হাটে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিদিন তারা আম বিক্রি করে এই হাট থেকে আম্রপালি, গৌরমতি, বারী-৪, খিরশাপাত, নাক ফজলি, আশ্বিনা ও বারমাসী কাঠিমন জাতের আমের চারা, চায়না থ্রি লিচু ও থাই হাইব্রিড নারিকেল গাছের চারা বেশি কিনছেন। আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনিসহ অন্যান্য বনজ গাছের চারা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হলে ও ফলদ গাছের চারা যেমন আম্রপালি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, কাঠিমন ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা, আশ্বিনা ১শ’ থেকে ১২০ টাকা, বারী-৪, ৭৫ থেকে ৮০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ বছর বাজারে আমের দাম খুব ভাল থাকায় কৃষকরা নতুন নতুন বাগান তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সব ধরনের গাছের চারার দাম একটু হলেও বেশি। সাপাহার ও তার আশপাশের নার্সারি মালিকরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ এই হাটে বেচা-কেনা করছে। এ ছাড়া রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও নওগাঁ জেলা থেকে চারা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার চারা গাছ এনে এ উপজেলার মৌসুমী হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে রেখে বিক্রি করছে। বাজারে বেশ কয়েক চারা ব্যবসায়ীরা জানায়, সাপাহার অঞ্চলের লোকজন বনজ জাতের চারা গাছ লাগানোর চাইতে ফলজ জাতের চারা গাছ বিশেষ করে আম গাছের চারা রোপণের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, ঠাঁঠা বরেন্দ্র অঞ্চলের এই উপজেলায় জলবায়ুর কারণে ধানের চাইতে আম চাষে কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে এ উপজেলার উৎপাদিত সুমিষ্ট রসালো ফল আম বর্তমানে দেশের সর্বখানে বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আম বাগান তৈরি করে ইতোমধ্যে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম জানান, উপজেলা সদরের অদূরে স্থাপিত ওই চারার হাটে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারার সমাহার দেখে এ উপজেলার লোকজনের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে এসে আমের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আম বাগান তৈরি হয়েছে। আম এ উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখছে। তাই সব মিলিয়ে সাপাহার উপজেলার সর্বস্তরের কৃষকদের মাঝে আম চারা রোপণে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর তাই তো এখানকার মানুষ চারা গাছের বাজারে ভিড় করছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×