ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. পূর্বা ইসলাম, ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম, ডাঃ অরূপ ইসলাম, ডাঃ আমেনা খাতুন;###;ডাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস, ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক

নোভেল করোনাভাইরাস সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য Immuno-chromatographic kit এবং Molecular detection পদ্ধতির সংবেদনশীলতা

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২ এপ্রিল ২০২০

নোভেল করোনাভাইরাস সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য Immuno-chromatographic kit এবং Molecular detection পদ্ধতির সংবেদনশীলতা

সম্প্রতি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত নোভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ আলোচনা বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত জানতে পারছি। একজন গবেষক, শিক্ষক, চিকিৎসক কিংবা ভেটেরিনারিয়ান হওয়ার সুবাদে এই দুঃসময়েও এই ভাইরাস এবং তা নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে একটু পড়াশোনা করলাম। আমাদের সীমিত পুঁথিগত এবং ব্যবহারিক বিদ্যা থেকে কিছু উপলব্ধি পাঠকের অবগতির জন্য তুলে ধরছি। উল্লেখ্য, লেখাটা পড়তে হলে ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়তে হবে। কেননা অল্প কথায় এই লেখাটি শেষ করা যাবে না। চেষ্টা করেছি সহজবোধ্য করে লিখতে। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে, এই লেখাটি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোকপাত মাত্র। বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রহণযোগ্য যে কোন ব্যাখ্যা কেউ দিলে তা সব সময় স্বাগত। আমাদের দেশে উদ্ভাবিত নোভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট এর কাজ করার পদ্ধতি- বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পেজ মারফত জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত এই কিটটি কাজ করবে ‘র‌্যাপিড ডট ব্লট পদ্ধতি’তে, যা কিনা ব্লাড গ্রুপ শনাক্তকরণের মতো। এই পদ্ধতিটি ২০০৩ সালে ঝঅজঝ-পড়ঠও, যা বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ভাইরাস দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। র‌্যাপিড ডট পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীর SARS-coVI এর দ্রুত শনাক্তকরণের ওপর প্রকাশিত জার্নাল প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, এটি আসলে এক ধরনের dot blot enzyme-linked immunosorbent assay (ELISA) পরীক্ষা (তথ্য সূত্র- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pme/articles/PMC3322936/?fbclid=IwAR2eCaf vzuclBz vZsFopOmfulwfikK QpPEaoqd6aYm0VgSOXmBKxvV ly4w)। ডট ব্লট টেস্টের মূলমন্ত্র হলো- Recognition and binding of an antigen by the specific antibody. মানে হলো- নির্দিষ্ট এ্যান্টিবডি কর্তৃক নির্দিষ্ট এ্যান্টিজেনকে চিহ্নিত করে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে প্রথমে একটি কমপ্লেক্স তৈরি করা এবং পরবর্তীতে সংযুক্ত থাকা। এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি কি? এ্যান্টিজেন হলো এমন যে কোন বহিঃস্থ পদার্থ (Foreign to the body) যা কিনা প্রাণীদেহে প্রবেশ করে তার বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। এই রোগ প্রতিরোধকারী উপাদানগুলোর একটি হলো এ্যান্টিবডি বা immunoglobulin (Ig), যা কিনা এ্যান্টিজেনকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য দেহের ভেতর তৈরি হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধের স্বীকৃত দুটি পদ্ধতি হলো- ১) এ্যান্টিবডি বা immunoglobulin (Ig) mediated যাকে সহজ ভাষায় বলে এ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম; ২) কোষ নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ Cytotoxic T cell পবষষ নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম। এ্যান্টিজেনের প্রভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের Ig তৈরি হয়ে থাকে (যেমন- IgM,IgG, IgG, IgD এবং IgE| সকল Igs--এর উপস্থিতির ভিত্তিতে কি ধরনের সংক্রমণ হয়েছে সে সম্পর্কে একটি ধারণাও পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, কি ধরনের এ্যান্টিজেন শরীরে প্রবেশের ফলে (সংক্রমণটি জীবাণুঘটিত নাকি এ্যালার্জিজনিত নাকি পরজীবীজনিত) কি ধরনের এ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। আমরা জানি যে, প্রাণীদেহে জীবাণুঘটিত সংক্রমণের প্রথম ধাপে Interferon (প্সব্জব্দ) ও এর পরে পাওয়া যায় ওমগকে; আর ওমগ-এর পরে ওমএ-কে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ওমগ এর উপস্থিতি জানিয়ে দেয় যে, সংক্রমণটি প্রথমবারই ঘটেছে কিংবা সংক্রমণটি নিকটবর্তী সময়ে ঘটেছে কিংবা এখনও সক্রিয় আছে। এর পরের ধাপে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য শরীরে পাওয়া যায় ওমএ-কে। ওমএ এর উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, সংক্রমণটি অনেকদিন ধরে চলছে কিংবা সংক্রমণটি আরোগ্য হয়েছে, কিন্তু শরীরকে পরবর্তীতে একই সংক্রমণ হতে রক্ষা করার জন্য স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। কোন ক্ষেত্রে ওমগ এর সঙ্গে ওমএ এর উপস্থিতি একই সঙ্গে দেখতে পারলে বোঝাবে যে, ওই সংক্রমণটি পূর্বেও কমপক্ষে একবার হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ডেঙ্গুর সংক্রমণের কথা। কোন সংক্রমণের প্রাথমিক তীব্রতার (ওহপঁনধঃরড়হ ঢ়বৎরড়ফ, অপঁঃব রহভবপঃরড়হ) সময়ে আমরা সাধারণত ওমগ-কেই পেয়ে থাকি; যদি ওমএ-এর সঙ্গে ওমগ-কে একই সঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এ ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। ধারণা করা যায়, নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে। তবে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বা পুনরাবৃত্তির কোন ইতিহাস এখনও প্রমাণিত হয়নি। নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য রক্তে ওমগ বা ওমএ-এর উপস্থিতি শুধুমাত্র সংক্রমণ হয়েছে জানাবে, কিন্তু সংক্রমণের কারণ অর্থাৎ নোভেল করোনাভাইরাস দিয়ে যে সংক্রমণ হয়েছে তা বলতে পারবে না। কেননা, নোভেল করোনাভাইরাসের (ঝঅজঝ-ঈড়ঠ২) নির্দিষ্ট এ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ঝঅজঝ-ঈড়ঠ২-এর নির্দিষ্ট মনোক্লোনাল/ পলিক্লোনাল এ্যান্টিবডিটিকে প্রথমে শনাক্ত করবে। এ ছাড়াও এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিন (ং চৎড়ঃবরহ)-এর বিরুদ্ধে পলিক্লোনাল এ্যান্টিবডি দিয়েও এই ভাইরাস সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে পাওয়া যাবে এই নোভেল করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট মনোক্লোনাল/পলিক্লোনাল এ্যান্টিবডি? এই নির্দিষ্ট পলিক্লোনাল এ্যান্টিবডি শরীরে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়া কি কি ভাবে পাওয়া সম্ভব তারও কিন্তু কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, কোন গবেষণাগারে নির্দিষ্ট ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিনের বিরুদ্ধে যখন কোন মনোক্লোনাল এ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়, সেই ক্ষেত্রে কিন্তু যথেষ্ট সময় লাগবে; এমনকি এর জন্য বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। তা ছাড়া এর সঙ্গে আরও যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো, কোথা থেকে পাওয়া গেল এই নোভেল করোনাভাইরাস ঝঢ়বপরভরপ এ্যান্টিজেন? এই নোভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে কথা বলার কারণ হলো- সাধারণত দেখা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিনের নির্দিষ্ট অংশকে নির্ধারণ (Target) করে এ্যান্টিবডি- এ্যাান্টিজেন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শনাক্তকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- এইচআইভির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ভাইরাসটি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়। একইভাবে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের জন্যও ভাইরাসটির বিভিন্ন ধরনের এ্যান্টিজেনকে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই নোভেল করোনাভাইরাসের কোন অংশটি শনাক্তকরণের জন্য কি কি ব্যবহৃত হচ্ছে সে সম্পর্কে কোন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না এই কিটে। এমনকি এই টেস্টের জন্য কোন রোগী থেকে কিভাবে এ্যান্টিজেনটিকে (নোভেল করোনাভাইরাস) পৃথক করে কোন অংশটিকে শনাক্ত করার জন্য নেয়া হয়েছে তা যদি নির্দিষ্ট করা না থাকে তাহলে এই কিট কখনই শুধুমাত্র নোভেল করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারবে না। এই কিটটি নোভেল করোনাভাইরাসের জন্য হয়ে যাবে অনির্দিষ্ট (ঘড়হংঢ়বপরভরপ শরঃ) একটি কিট। সেক্ষেত্রে এই কিটটি দিয়ে ঝঅজঝ-ঈড়ঠ২ ছাড়াও অন্য অনেক সংক্রমণেরই ফলাফল পজিটিভ আসবে (এমনকি Corona virus-এর অন্যান্য strain এর জন্যও), যার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলস পজিটিভ ফলাফল আসবে, যা থেকে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ জনমনে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই কিটে পজিটিভ ফলাফল পেলে যে কোন আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিশ্চিত হবার জন্য পরবর্তীতে এ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয়করণ টেস্টের (ঠঘঞ) শরণাপন্ন হতে হবে আবারও। কেননা, যে SARS-CoVI শনাক্তকরণ কিটকে রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রেও কিন্তু এ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয়করণ টেস্ট করত একাধিক ফলস পজিটিভ ফলাফলের কথা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যদিও ফলস পজিটিভ ফলাফল ফলস নেগেটিভ ফলাফলের চেয়ে কম ক্ষতিকর। কিন্তু এই ফলস পজিটিভ ফলাফলের কারণে করোনা ব্যতীত অন্য রোগে রোগাক্রান্ত রোগীকে নিশ্চিতকরণ পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল বা টেস্ট কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতে পারে যা কিনা সেই ব্যক্তির করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে। তা ছাড়া রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এ ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। উপরন্তু SARS-CoV-এর জন্য উল্লিখিত জার্নাল প্রবন্ধে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ওমএ-এর সঙ্গে এ্যান্টিজেন সংযুক্ত হয়ে ঝঅজঝ-ঈড়ঠ১-কে শনাক্ত করা হয়েছে, যা এই ক্ষেত্রে কি করে সম্ভব তা বোধগম্য নয়, কেননা এখানে সংক্রমণের প্রাথমিক তীব্রতার ধাপ (অপঁঃব রহভবপঃরড়হ) বিরাজমান থাকবে এবং ওমএ অনুপস্থিত থাকবে। এক্ষেত্রে কিটটি ফলস নেগেটিভ ফলাফল দেবে। যা কিনা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। একজন ব্যক্তি যিনি কিনা করোনাতে আক্রান্ত কিন্তু এই কিটের ফলাফল বলছে তিনি আক্রান্ত নন, তখন সেই আক্রান্ত ব্যক্তি বিনা দ্বিধায় রোগ ছড়াতে থাকবেন সবার মাঝে । এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি উপযুক্ত চিকিৎসা না নিয়ে রোগকে জটিল করে ফেলবেন, এমনকি এর ফলে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি ধরেও নেয়া হয় যে, ওমগ এর সঙ্গে SARS-CoV2 সংযুক্ত হয়েছে তবে আরও অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় করে- আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ওমগ-এর উপস্থিতি ধরা পরে সাধারণত ৭ দিনের পরে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মিলিয়ে যায় ১২ দিনের মাথায়; আর এর পরে আসে ওমএ। নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উন্মেষপর্ব বা ওহপঁনধঃরড়হ ঢ়বৎরড়ফ ২-১৪ দিন (সূত্র-WHO)। সেক্ষেত্রে সাধারণ হিসেব মতে, ওমগ-এর উপস্থিতি কিন্তু ৭ দিনের আগে ধরা পড়বে না এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিটটি আবারও ফলস নেগেটিভ ফলাফল দেবে। উল্লিখিত আল-জাজিরা সংবাদ মাধ্যমের ২০ মার্চ ২০২০-এ এই কিট নিয়ে এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, এই কিট নিয়ে বিজ্ঞানী সেখানে যা বলছেন- When asked about the supposed disadvantages of the test kit, Dr. Sil said, ’The rapid dot blot test could rerord false-negative if used at a wrong time.’ ’Sometimes, it takes more than three days to develop antibodies in the blood cell, so if a test is conducted before three days, then it might come as false-negative’. অর্থাৎ এই কিটের অসুবিধা নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রধান বিজ্ঞানী নিজেই বলেছেন যে, র‌্যাপিড ডট ব্লট টেস্ট কিটটি ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিতে পারে যদি ভুল সময়ে ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও রক্তে এ্যান্টিবডি তৈরি হতে তিন দিনের বেশি সময় লাগতে পারে, তাই এই টেস্ট কিটটি যদি তিন দিনের আগে ব্যবহার করা হয় তাহলে ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিতে পারে। যেখানে দ্রুত রোগ নির্ণয় করে রোগীকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন, সেখানে কিটের মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে তিনদিন বিনা চিকিৎসায় অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে রোগীর অবস্থা কেমন হতে পারে তা সহজে অনুমেয়। উল্লেখ্য, রোগভেদে শরীরে এ্যান্টিবডির উপস্থিতিতে দিনের তারতম্য হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই তিন দিনের গণনাটা কখন থেকে করা হবে? উপরন্তু নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য শরীরে এ্যান্টবডির উপস্থিতি যে তিন দিনের মাথায়ই হবে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে কি? কেননা এই তিন দিনের তথ্যের বিপরীতে উহানের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে করা এক পরীক্ষাকে সামনে এনে ‘The ConversationÕ-Gi 26 gvP© 2020-G Alexander Eduwards (Associate professor in Biomedical Technology, University of Reading)-এর এক লেখাতে Zhang et al. (২০২০)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, ‘সাধারণত নতুন সংক্রমণে শরীরে এ্যান্টিবডি তৈরিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায় এবং এ্যান্টিবডি ভাইরাসের চেয়েও দীর্ঘ সময় রক্তে থাকতে পারে এবং সংক্রমণের ইতিহাসকেই প্রতিফলিত করে। SARS-CoV2 ভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়।’ অর্থাৎ ভাইরাসের ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রারম্ভিক সময়ে অর্থাৎ সংক্রমণের প্রথম ধাপেও (তৃতীয় দিনে!!) এই কিট দিয়ে নেগেটিভ ফল আসার সম্ভাবনাই প্রবল। যেহেতু এই কিটটি SARS-CoV1 শনাক্তকরণ কিটেরই আরেকটি নতুন সংস্করণ, তাই উল্লেখ্য, SARS-CoV1 শনাক্তকরণ কিটটি দিয়ে ঝঁন-clinical (চিকিৎসা শাস্ত্রে আমরা যাকে বলি লক্ষণবিহীন সংক্রমণ) কেসসমূহের ক্ষেত্রে কি ঘটবে তা বিবেচনায় আনা হয়নি এবং সেক্ষেত্রে এই কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ঝঅজঝ-ঈড়ঠ১ -এর ক্ষেত্রে লক্ষণবিহীন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি; কিন্তু ঈঙঠওউ-১৯-এ লক্ষণবিহীন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি একটি বড় সমস্যা। এমনকি এই লক্ষণহীন অবস্থায় একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সবার অগোচরে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। এই কিটটি কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটকে অর্থাৎ লক্ষণবিহীন বাহককে কিভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে তা নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। এই কিট নিয়ে আরও বলা হয়েছে যে, এটি সস্তা (৩০০-৩৫০ টাকা) এবং ১৫ মিনিটে ফলাফল দেবে। কথাটি নিশ্চয়ই ঠিক। কিন্তু এই কিটের ফলাফল প্রাপ্তির সময়কাল এবং জঞ-চঈজ (ডঐঙ দ্বারা স্বীকৃত) যা ভাইরাস নিশ্চিতভাবে শনাক্তকরণের একমাত্র পদ্ধতি; এই দুইয়ের মাঝে তুলনা করতে গিয়ে জঞ-চঈজ-এর ফলাফল পাওয়ার সময়কালকে যতটা দীর্ঘমেয়াদী (পাঁচদিন) বলে প্রচার করা হচ্ছে আসলেই কি ততটাই সময় নেবে? বর্তমানে উন্নত RT-PCR পদ্ধতি যেমন- Realtime LAMP) মাত্র ৩০ মিনিটেই একটি টেস্টের ফলাফল দিতে সক্ষম। কিন্তু এই মেশিনের শনাক্তকরণের জন্য সময় যাই লাগুক না কেন, এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ার কারণে কোনভাবেই যে কোন খোলা জায়গায় একে নিয়ে কোন প্রকার পরীক্ষা করা যাবে না বা উচিত নয়। জীবিত ঝঅজঝ-ঈড়ঠ২ ভাইরাস নিয়ে কাজ করার জন্য গবেষণাগারের জৈব নিরাপত্তা অবশ্যই ৩+ (৪ হলে ভাল হয়) হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জঞ-চঈজ মেশিন আছে, কিন্তু শুধুমাত্র জৈব নিরাপত্তার বিবেচনায় এ সময় মেশিনগুলোকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কেননা, জঞ-চঈজ পদ্ধতি ব্যবহারের সময়ও এই ভাইরাসটিকে শনাক্তকরণ চলাকালীন সময়ের এক পর্যায়ে এ নির্দিষ্ট জৈব নিরাপত্তার মাঝে নিষ্ক্রিয় (মৃত নয়) করে নিতে হয়। তা না হলে গবেষণাগার ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। কিন্তু এই ঝঅজঝ-ঈড়ঠ২ ভাইরাস শনাক্তকরণ কিটটি কিভাবে সাধারণ কোন গবেষণাগারে ব্যবহার করা যাবে, তার ব্যাখ্যা কোথাও সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। এত সংক্রামক একটি ভাইরাসকে (SARS-CoV2) কোন ধরনের জৈব নিরাপত্তা (Bio-Safety Level-4) ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে টেস্ট করা যে নতুন কোন ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবে না, সেই সম্পর্কে সতর্কীকরণ বা ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়নি। পরিশেষে বলতে চাই যে, বর্তমানে বিশ্বের অনেক গবেষণাগার থেকেই SARS-CoV2 শনাক্তকরণের জন্য নানা ধরনের কিট (Immuno-chromatographic kit) তৈরির ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু WHO কর্তৃক একমাত্র স্বীকৃত পদ্ধতি এখনও RT-PCR (Real time)/Conventional RT-PCR পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসটি সঠিকভাবে একবারেই শনাক্তকরণ করা যাবে। যে কোন ভাইরাসের এ্যান্টিজেন/এ্যাান্টিবডিকে নির্ণয়ের জন্য কোন কিটকে স্বীকৃতি দেয়ার আগে ফলস পজিটিভ এবং ফলস নেগেটিভ ফলাফলকে অবশ্যই বিবেচনায় আনা উচিত। তা না হলে ওই কিট বিতর্কিত হতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, আরও গভীর গবেষণা এবং পর্যালোচনা করা দরকার একটি কিটকে সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার পূর্বে। তা না হলে যে কোন দেশকেই স্পেন এবং চেক রিপাবলিকের মতো অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে ভুল কিট ব্যবহারের মাসুল হিসেবে। লেখক : ড. পূর্বা ইসলাম, এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ফার্মাকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ([email protected]); ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম, প্রফেসর, মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড হাইজিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ([email protected]); ডাঃ অরূপ ইসলাম, এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ ([email protected]); ডাঃ আমেনা খাতুন, রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেইজড মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ; ডাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস, এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ফার্মাকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসংহি ([email protected]) ও ডাঃ মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক, প্রফেসর, মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড হাইজিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ([email protected])
×