ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ফসল ফলাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ফসল ফলাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

ক্লাসে বসে শুধু কৃষিশিক্ষার পাঠ নিচ্ছে এমনটি নয়। বিদ্যাপীঠের আঙিনায় ফসলও ফলাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আবাদ করছে নানা রকমের সবজি ও মসলার। ব্যবহারিকের অংশ হিসেবে পুরোদস্তুর কৃষকদের মতো করে চাষকাজ করছে তারা। জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজবপন। চারাগাছের পরিচর্যা। আগাছা ও পোকামাকড় দমন। এমন সবকিছুই নিজ হাতে করছে যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে কয়েক টুকরো জমিতে তৈরি করা হয়েছে কৃষিশিক্ষার এ এক্সপেরিমেন্টাল প্লট। সেখানে হাতেকলমে কৃষিকাজ শিখছে বিদ্যার্থীরা। কৃষি শিক্ষার তত্ত্বীয় ক্লাসের পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীদের সপ্তাহের দুদিন এক্সপেরিয়েমেন্টাল প্লটে হাতে কলমে চাষকাজ শেখানো হয়। উদ্দেশ্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যেন কৃষিকাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানলাভ করতে পারে। আর মাঠ পর্যায়ের ব্যবহারিক এ কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা তাদের কিছু মাত্রায় হলেও কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করে। এমনটি হলে শিক্ষার্থীরা গার্হস্থ্য অর্থনীতিতেও কিছুটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এরকমটাই বলছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, কৃষিনির্ভর দেশের সন্তান হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে মাটির ঘ্রাণের খুব কাছাকাছি যায় এবং তারা যেন মাঠে ফসল ফলানো মানুষগুলোর কঠিন শ্রমসাধনার জীবনটাকে অল্প করে হলেও অনুধাবন করতে পারে এজন্য এ ব্যবস্থা। সরেজমিন শিক্ষা বোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়, একাডেমিক ভবনের সামনে নানা রকম ফুল ও সবজির বাগান। বাগানে রংবেরঙের ফুলের শোভার পাশাপাশি নানা রকম সবজির বাহার। ফুলকপি, পাতাকপি, ব্রোকলি, পালংশাক, ধনে পাতা, সরিষা, বেগুন, টমেটোসহ রকমারি সবজির চাষ হয়েছে। ফুলবাগান ও সবজির ক্ষেতে কাস্তে, নিড়ানি, ছোট ছোট কোদাল নিয়ে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ আগাছা পরিষ্কার করছে। কেউ ঝাঝরিতে করে পানি দিচ্ছে। কেউবা নিড়ানি দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির কৃষিশিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক কৃষিবিদ মুজিবর রহমান জানান, ১১টি প্লটে শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে নানা রকমের সবজির পাশাপাশি মসলার আবাদ করেছে। এখন শীতকাল; তাই এ মৌসুমের উপযোগী সবজি চাষ করা হয়েছে। যখন যেই ফসল ও সবজির মৌসুম আসে তখন সেগুলোর চাষাবাদ শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। শীত মৌসুম শেষ হলে এসব প্লটে তাদের ধানের আবাদ শেখানো হবে। গত এক বছর ধরে এমনটি চলে আসছে। বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কৃষিশিক্ষার তত্ত্বীয় ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে চাষকাজ শেখানোর উদ্যোগটি নিয়েছেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ এবার আমাদের ছাদকৃষির কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। যার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে এবার আমরা মাল্টা, কমলা, সফেদা, লেবুসহ নানা ফলফলাদি চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। নবম শ্রেণীর ছাত্রী শ্রাবণী আক্তার কেয়া জানায়, ক্লাসে যা পড়ানো হয়েছে, সেগুলোই আবার প্লটে এসে হাতেকলমে শিখেছি। জমি চাষ থেকে শুরু করে চারা রোপণ পরিচর্যা সবকিছুই। এমনকি আমাদের বিষ ছাড়াই ফসল উৎপাদনের কৌশল শেখানো হয়েছে। এক্সপেরিমেন্টাল প্লটে আমরা নিজ হাতে পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, গাজরের চাষ করেছি। নবম শ্রেণীর ছাত্র অর্ণব দাস জানাল, চাষ পদ্ধতি শেখার সঙ্গে সঙ্গে নিমপাতা ভেজানো পানি ছিটিয়ে কিভাবে পোকামাকড় দমন করতে হয় সেটিও শিখেছি। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই জৈবিক উপায়ে ভাল ফলনের পদ্ধতিও জেনেছি। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×