ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ্রেন্দু ভট্টাচার্য শঙ্কর

ভালবাসার যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২২ নভেম্বর ২০১৯

ভালবাসার যন্ত্রণা

সুমির বাবার স্ট্রোক করেছে। এইমাত্র ঝিলাম ফোন করে খবরটা জানাল। সংবাদটা শুনার পর বাসার সবাই হতবাক, কেউ কোন কথা বলছে না, বিশ্বাস করতে পারছে না, একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ভাবটা এমন যে, এটা কি করে হয়। তরতাজা জোয়ান লোক, বয়স ষাট-বাষট্টি হলেও চলনে বলনে পঞ্চাশ বাহান্নর বেশি মনে হয় না। সব সময়ই ধুম ধারাক্কার মাঝে থাকে, আসর জমাতে একাই এক শ’, গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি হৈ চৈ এর মধ্যেই তার অবসর জীবন কাটে। তার অসুখ-বিসুখের কথা খুব একটা শুনা যায়নি; তবে প্রেসার ছিল, কিন্তু এগুলো ও খুব একটা পাত্তা দিত না, বৌদি কিছু বললে উল্টো রাগারাগি করত। সবাই একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর আমি ঘটনা সম্পর্কে একটা বিবৃতি দিলাম। সুমির বাবা মানে নিমুর (নির্মল)র বড়শি দিয়ে মাছ ধরার খুব নেশা। এ রকম মাছ ধরতে গিয়ে ৬/৭ কেজি ওজনের একটা মাছ ওর বড়শিতে ধরা পড়ে। এরপর শুরু হয় মাছের সাথে রশি টানাটানি। মাছ তাকে টানে জলের দিকে, সে টানে ডাঙার দিকে। এভাবে কিছুক্ষণ চলে টানাটানির খেলা। হঠাৎ তার হেলপার দেখে বাবু বড়শি হাতে জলের দিকে ঢলে পড়ছেন, সে বাবুকে ঝাপ্টিয়ে ধরে ফেলে। ততক্ষণে বাবু ঢলে পড়েছেন, চোখ স্থির হয়ে আছে, ডাকা ডাকির পরও কোন সাড়া নেই। এভাবে অজ্ঞান অবস্থায় বাবুকে নিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করাল। ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের সাধ্যের বাইরে হওয়ায় রোগীকে ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতালে রেফার করল। নিমু এখন এ্যাপোলোতে চিকিৎসাধীন। বিপদ কাটেনি, আইসিইউতে আছে। নির্মল আমার চেয়ে বয়সে ছোট; গিন্নির লাইনে আত্মীয়। খবরটা শুনেই তার বুক ধড়ফড় করা শুরু হয়েছে। জানাজানির পর সবারই মনে এক প্রশ্ন, এমন তরতাজা, প্রাণবন্ত সুঠাম দেহের অধিকারী লোকটার হঠাৎ কি হলো! সব সময়ই হাসি খুশি, যেখানেই যেত তার সরব উপস্থিতিতে আসর আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেত। গানের জন্য সব সময় রেডি। কেউ না বললে নিজেই গুন গুন করে মনে করিয়ে দিত। এরপরত শুরু হলো, হারমোনিয়াম না থাকলেও সমস্যা নেই; খালি গলায় শুরু হয়ে গেল, ‘হাসন রাজা পিয়ারীর প্রেমে মজিলরে’, অথবা ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়ারে কান্দে হাসন রাজার মন ময়নারে’, চলল একেবারে ননস্টপ। সবাই তন্ময় হয়ে শুনছে। মধ্যে মধ্যে একটু রাধারমণ, ‘আজ পাশা খেলবরে শ্যাম’, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায় রে যাদুধন।’ খাওয়া দাওয়া ভুলে সবাই মুগ্ধ। বিস্ময়ে হতবাক, আবেগের আধিক্য অনেকসময় যুক্তিকে তলিয়ে দেয়। নিমুর চেহারা সবার চোখে চোখে ভাসছে। গিন্নি নির্বাক, বিমূঢ়। কিছুটা আত্মস্থ হওয়ার পর শুভ নীরবতা ভেঙ্গে বলে উঠল, ‘মেশো খাওয়া দাওয়া চলা ফেরায় কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করতেন না। অঞ্জনের কাছে শুনেছি ইদানিং প্রায়ই তার মাথা, ঘারে ব্যথা করত, চোখ ঝাপসা লাগত, প্রেসারের ওষুধও সময়মতো খেতেন না। মাসি কিছু বললে উল্টো রাগারাগি করতেন। একটা কথা না কি প্রায়ই বলতেন, যেদিন নোটিস আসবে সেদিন ওয়াপস চলে যেতে হবে, ডাক্তার গুলিয়ে খেলেও আটকান যাবে না। ‘অনন্যাও (আমার স্ত্রী) এতে একমত। রেখা তাকে প্রায়ই দুঃখ করে বলত, ‘লোকটাকে নিয়ে আর পারলাম না, ফুলদি (অনন্যা) একটু কথা যদি শুনত, তার মাথায় প্রায়ই ঝিম ঝিম করে, মাথা ঘোরে, অনেক সময় ব্যালেন্স থাকে না। ডাক্তার দেখাতে বললে তার কিছু হয়নি বলে কথা উড়িয়ে দেয়, আর নিয়মের তো কোন বালাই নেই। কোন বিপদ যে আমার জন্য আসছে এক ঠাকুরই জানেন।’ ঘটনার এ রকম আলোচনা পর্যালোচনা পর কথার রেশ আস্তে আস্তে মনে হলো আমার দিকে ধেয়ে আসছে। এক পর্যায়ে অনন্যা (গিন্নি) বলে উঠল, ‘আমাদেরও ত সেইম অবস্থা, কত বলি, একবার চেন্নাই যাও, একটা চেকআপ করে আস, কে শুনে কার কথা। এত বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পরও মানুষটার হুস হলো না।‘ ব্যাপার হচ্ছে বছর খানেক আগে আমার সুগার নীল হয়ে সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে, কিছুটা দুর্বল বোধ করায় আমি নিজে নিজেই শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ড কিছু বলতে পারি না। আমার এ অবস্থা দেখে এরা শুরু করল হুলস্থূ’ল। একটু পরই আমি নিজের মধ্যে ফিরে আসি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ, কিন্তু কথা বলতে ভাল লাগছিল না। ‘ওগো শুনছ, তোমার কি হয়েছে? কথা বলছ না কেন? ‘আমি গিন্নির ডাক স্পষ্ট শুনছি। এই শুরু হলো চেচা মেচি, আমি না কি সেন্সলেস হয়ে গেছি। ফিস ফিস করে করে একজন অন্যজনকে বলছে, হার্ট এ্যাটাক করল না কি!‘ এদের ঠা-া করার জন্য যতই বলি, আমি ঠিক আছি, একটু দুর্বল লাগছে। কিন্তু ওদের চিৎকারে আমার মৃদু কণ্ঠের কথা আমার মধ্যেই মিলিয়ে যাচ্ছে, তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে কোন সাড়া পাচ্ছে না। আমি আর কিছু জানান দেয়ার চেষ্টা না করে ঝিম ধরে অজ্ঞানের মতোই পড়ে রইলাম। এদিকে চলছে আমার সর্বাত্মক প্রাথমিক চিকিৎসা। কেউ মাথার নিচে কলা পাতা দিয়ে জল ঢালছে, এতে না কি মাথায় রক্ত উঠলে নামে, কেউ বুকে মালিস দিচ্ছে,হার্টের ব্যথার উপশমের জন্য, আমার মেয়ে পায়ের তলায় শেক দেয়, পায়ের তলা না কি ঠা-া বরফের মতো। এদের কা- কারখানায় মনে মনে বেশ উপভোগ করছিলাম, হাসিও পাচ্ছিল। কিন্তু এখন হাসতে মানা, হাসলে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে; আমার মনে একটা কৌতূহল হলো; আমার সত্যি সত্যি হার্ট এ্যাটাক হলে দেখি আপনজনরা কি করে। অন্যদিকে আরেক চিন্তা, হাসলে আবার বলবে মাথায় রক্ত উঠায় বিকারগ্রস্ত হয়ে আমার পাগলামির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আমার জন্য এ এক বাড়তি উপদ্রব। সব যন্ত্রণা সহ্য করে আমাকে ওদের উত্তেজনার সঙ্গে মিল করে সেন্সলেস রোগীর মতোই পড়ে থাকতে হলো। মেয়ে লোপা বলছে, আমার দুটো চোখ না কি কিছুক্ষণ পাথরের মতো স্থির হয়ে ছিল, তার মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার মা কাঁদো কাঁদো গলায় বলছে তোর বাবার হার্ট এ্যাটাক হলো না কি রে, এখন আর ডাক্তার ডাকার সময় নেই, ক্লিনিকে নিয়ে চল। এদের কথা বার্তা আর সহ্য করা যায় না, এখনই এ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেবে। চিৎ কাত হয়ে এখন গলার স্বর একটু চড়া করে বললাম আমার কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি। মনে হয় ডায়বেটিস নেমে গিয়েছিল, একটু চিনি দাও। ঠিক হয়ে যাবে। সুগার কমে যাওয়ায় অস্থির লাগছিল, এখন সে ভাব কেটে গেছে, আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও। অনন্যা আমার কথা শুনে বলে মাথায় রক্ত উঠলে রোগীরা না কি এ রকম প্রলাপ বকে, এগুলো বিকারের লক্ষণ, নরমাল মানুষের কথা না, দেখ না চোখ দুটো এখনও পাথরের মতো, এদিক ওদিক নাড়া চাড়া করছে। কি এক ফ্যাসাদে পড়লাম। লোপা যখন এ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করতে যাবে আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম, ভাবলাম এদের অবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে আর একটিং করে পড়ে থাকলে আমাকে এ্যাম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে ক্লিনিকে পাঠিয়েই ছাড়বে। গলায় একটু জোর এনে বললাম, একটু অপেক্ষা কর, আমি হাবিব ডাক্তারকে ডাকছি ও যদি আমাকে দেখে বলে ক্লিনিকে নিতে হবে তবেই আমি যাব। আমার কথায় ওরা মনে হলো খানিক ধন্দে পড়ে গেছে। কথা মতো আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমার ফোন পেয়ে ডাক্তার এল। আমার কেইস হিস্টোরি ওরা ওদের মতো, আমি আমার মতো করে বললাম। ওদের মন মতো না হলে ডাক্তারের সামনেই আমার সঙ্গে ওদের বাদানুবাদ চলছে। এরপর ডাক্তার আমার বুক, জিহ্বা, প্রেসার, সুগার সব পরীক্ষা করে রায় দিল তেমন কিছু না। সুগারটা একটু কমে গেছিল, এখন জায়গামতো আসছে, সুগারটা যেন কন্ট্রোলে থাকে এদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ডাক্তারের কথা ওদের মনপুত হলো না, সন্দেহ থেকে গেল। তবে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে ক্লিনিকে নেয়ার উদ্যোগ আপাতত থেমে গেল। ডাক্তার যাওয়ার পর গিন্নি বলছে, এ ডাক্তার ভাল নয়, রোগ ধরতে পারেনি। যা হোক এ যাত্রা ওদের মনগড়া উৎপাত থেকে রেহাই পেলাম। বেঁচেত গেলাম, কিন্তু গলায় কাঁটা বিঁধে থাকল। এ ঘটনার পর যখনই কারও মারাত্মক কোন অসুখের বা শেষ যাত্রার খবর আসে তখনই প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর আমার উপর শেষ ধাক্কাটা আসে। বর্ষণটা এ রকম, যেমন, সুস্থ, তরতাজা লোকগুলো এভাবে ধড়াম করে চলে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের উনার কিছু না ঘটা পর্যন্ত হুস হবে না। নিজেও শেষ হবে, আমাদেরও অকুল সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যাবে। দুঃসংবাদের খবর যত আসে আমাকে টাইট দেয়ার মাত্রাও তত বাড়তে থাকে; সার্বক্ষণিক একটা নজরদারির মধ্যে থেকে মনটা মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। আমাকে এখন এরা একা বাসায় রেখে যায় না, বাইরেও বডিগার্ড ছাড়া যাওয়ার অনুমতি নেই। কাউকে না পেলে অনন্যা নিজেই পিছ ধরে। মাঝে মাঝে অস্বস্তি লাগে, নিজের আত্ম বিশ্বাসের ভিতে ঘুন ধরে। রাগ হয়, ওদের বলি যম যখন আমাকে নিতে আসবে তখনও কি সঙ্গে যাবে। সব থেকে বড় কথা আমার মন ও শরীরের উপর এখনও আমার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে। শরীরকে পোষে রাখার জন্য হাঁটা চলা, খাওয়া দাওয়া, ওষুধ পথ্য সবই নিজে থেকেই নিয়মের মধ্যে চালাই। বয়সের কারণে মিষ্টি মাংস ইত্যাদি প্রিয় খাওয়ার জিনিস সব বাদ দিয়েছি। এর পরও নিত্যনতুন নিয়ম কানুনের যন্ত্রণায় আমি অতিষ্ঠ। নিজের আপনসত্তা আহত, ফুঁসে উঠে। কি আর করি, মনটা তিরিক্কি হয়ে থাকে, ভাল কথা শুনতে ভাল লাগে না। আমার আশপাশের লোকজনের ধারণা আমার না কি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ‘কি হাসি খুুশি প্রাণবন্ত মানুষটা সব সময় গুমরা মুখে থাকে, মুখের দিকে চাইলে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না, একটা বিরক্তির ভাব চোখে মুখে। কিছু বললেও সোজা কথায় উত্তর দেয় না। আমার এ ঘটনার পর এরা বিশেষ করে গিন্নি গল্পের এক নতুন টপিক পেল। আত্মীয়-স্বজন যাদের সঙ্গেই দেখা সাক্ষাত বা ফোনে কথা হয় তখনই ভালমন্দ প্রসঙ্গ আসলে শুরু হয়ে গেল, ‘আর বলবে না বউদি, আমাদের ওপর যে কি বিপদ গেল, ঠাকুর সহায় ছিলেন বলে এই যাত্রা উদ্ধার পেয়েছি। বলা নেই কওয়া নেই, ভাল মানুষ, কথা বলছে, হঠাৎ চোখ মুখ উল্টিয়ে আমাদের সামনেই দেখি পড়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস, লোপা সময়মতো ধরে ফেলছিল, না হলে কি যে হতো ভাবলেই আমি আঁতকে উঠি। এরপর তো ধরা ধরি করে কোন রকম আমরা বিছানায় শুইয়ে দিলাম। ‘বউদি সেন্স ছিল কি না জিজ্ঞাসা করায় গল্পের রেশ ও মেজাজ কয়েক ডিগ্রী বেড়ে গেল, ‘না না জ্ঞান তো পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাই, অনেকক্ষণ মাথায় জল ধারা, বুকে পায়ে মালিশ করার পর জ্ঞান আসে।’ ‘কোন ক্লিনিকে নিয়ে গেলে? ‘বউদি জানতে চাইলে এক রকম মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে অনন্যা এক শ্বাসে বলে, ‘আরে নিতে দিলে তো নেব। তার না কি কিছুই হয়নি, এক হাতুড়ে ডাক্তারকে বাসায় নিজেই ফোন করে ডেকে এনে তার যুক্তিতেই সায় দিয়ে গেল, প্রেসার, ডায়বেটিস সব না কি নর্মাল, একটু চিনি খাইয়ে রেস্ট নিতে বলে চলে গেল। ‘এই একই রেকর্ডই যার সঙ্গে কথা হয় তাকেই শুনায়। এর সঙ্গে আরেকটা কথা যোগ করে বলে, ‘কতবার বলি একটা চেকআপ করি, চেন্নাই যাই, কে শুনে কার কথা, এক দিশা মানুষ, বললেই বলে, ‘আমি ঠিক আছি’। আমারও আর কিছু বলতে ইচ্ছে হয় না, সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছি। বয়স যত বাড়ে আপনজনদের উদ্বেগের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। এই উদ্বেগ মাঝে মাঝে সুস্থ মানুষকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলে। এখন দেখি সংসারে সবার ভাবনা আমাকে নিয়ে। বাড়াবাড়ি মনে হলেও এর মধ্যে ভালবাসার একটা নিখাদ ছায়া ও ছোঁয়া আছে। যতদিন যায় ততই মনে হয় আমার সংসার জীবন বিফলে যায়নি, মায়ার বাঁধনটা এখানে দিন দিন গভীর হচ্ছে। আমার উপর নতুন বিধি নিষেধ চালু করার একটা অন্যতম উৎস হচ্ছে ফেসবুক। নতুন কোন টিপস পেলেই তার প্রথম প্রয়োগের ক্ষেত্র আমি। আমি যেন এক গিনিপিগ। আমি বলি, আমার মতো সুবোধ ছাত্র পেয়েছ বলে এই মাস্টারি জাহির করতে পারছ। ‘সুবোধ না কুবোধ সেটা তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।‘ গলাটা একটু শক্ত করে বলে,’ দেখ, শরীরটা তো আমার নয়, ভাল থাকলে তোমার আরাম, খারাপ হলেও তোমাকেই এর ফল ভোগ করতে হবে, দেখ না কত মানুষ আধা মরা হয়ে দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে থাকে।’ যদিও এসব বচনে আমার পৌরুষে আঘাত লাগে, তবুও কথাগুলো যে কত বাস্তব মনের একটু স্থিরতা আসলেই তা বুঝতে পারি। ভালবাসার উষ্ণতা ছাড়া আবেগ উদ্বেগের এ রকম বহিঃপ্রকাশ ঘটে না যদিও কথাগুলোর মাঝে একটা ঝাঁজ থাকে। ধীরে ধীরে আমিও সপে দিলাম নিজেকে ওদের নিয়ম কানুনের বেড়া জালে। এই আত্মসমর্পণের মাঝে একটা স্বস্তি আছে, নির্ভরতায় শান্তি আছে। এরপরও আমার স্বাধীন স্বত্বা আহত হয়, মাঝে মধ্যে ফুঁসে উঠে এই আবেগের বেষ্টনীর মধ্যে দিন যাপন করে; কারণ আমি এখনও খাঁচার পাখির জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি।
×