নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ চার সাংবাদিক পিটানো মামলায় ভূমিমন্ত্রীপুত্র শিরহান শরীফ তমালের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে পাবনা আমলী আদালত-১ বিজ্ঞ বিচারক রেজাউল করিম এ আদেশ দেন।
এর আগে সকাল থেকেই আদলত চত্ত্বরে ভীড় জমায় তমালের সমর্থকরা। তারা আদালত চত্ত্বরে দফায় দফায় মিছিল শুরু করলে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ভূমিমন্ত্রীপুত্র তমালকে বহনকারী গাড়ি আদালতে ঢোকার মুখে দুই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে উদ্যোগ নিলে দুই পুলিশ সদস্যকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে আদালতে প্রবেশ করে। এসময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তমালকে বহনকারী গাড়িটি দ্রুত গতিতে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে। এসময় ওই গাড়ির আঘাতে দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরে এ মামলার প্রধান আসামী শিরহান শরীফ তমাল পাবনার আমলী আদালত-১ এ হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পাবনা আমলী আদালত-১ শিরহান শরিফ তমাল হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক রেজাউল করিম নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি আরো জানান, পাবনার সরকারী কৌশলী (পিপি) আক্তারুজ্জামানের গাড়িতে করে সাংবাদিক পিটানো মামলার প্রধান আসামী ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল আদালত চত্বরে আসেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিয়ে গ্রেফতারের চেষ্টা করলে গাড়িটি পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই আবু সাঈদ ও কনষ্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন মারাত্মক আহত হয়। এই ঘটনায় পুলিশ সুপার জেলার বাহিরে অবস্থান করার কারণে এ বিষয়ে কোন মামলা করা হয়নি। তবে মামলা করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, দুপুরে পাবনার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের আয়োজনে ভূমিমন্ত্রীপুত্র তমালের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। শহরের ঐতিহাসিক বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মিলনায়তন চত্বরে জেলা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, দেশ বরেণ্য সাংবাদিক ও কলামিষ্ট রনেশ মৈত্র, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, সংবাদপত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ, দৈনিক জনকন্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা কৃষ্ণ ভৌমিক।
পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্পাদক কাজী বাবলা প্রমুখ। সমাবেশে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ, পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটি, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতি ও জেলার সকল উপজেলার প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে অংশ গ্রহণ করে। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নবেম্বর রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় প্রতিপক্ষের উপর হামলা করে ভূমিমন্ত্রীপুত্র শিরহান শরীফ তমাল ও তার ক্যাডারবাহিনী। এ ঘটনার ছবি ধারণ করতে গেলে তাদের হামলায় গুরুতর আহত হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি এস এ আসাদ, ডিবিসির জেলা প্রতিনিধি পার্থ হাসান, এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি রিজভী জয়, ক্যামেরা পার্সন মিলন হোসেন। সাংবাদিক হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তমাল ও রাজীব সরকারের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনকে আসামী করে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করা হয়।
