ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় ॥ এ চেতনায় গড়া স্কুল

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৭ জুন ২০১৭

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় ॥ এ চেতনায় গড়া স্কুল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৬ জুন ॥ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার প্রসারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নাটোরের গুরুদাসপুর শহীদ সাত্তার- রেকায়েত প্রতিবন্ধী একিভূত বিদ্যালয়। ‘আমরা মানুষের সেবা করি’ সেøাগানে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হয় বিদ্যালয়টি। আর এখানকার ২৫০ শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে শিশু শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করান এলাকারই শিক্ষিত ২২ তরুণ-তরুণী। পাঠদানের পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা করানো হয়। শিক্ষা দেয়া হয় দেশাত্মবোধের। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি এলাকার মানুষের মনে আশার আলো জ্বেলেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ছায়াশোভিত টিনের চালাঘরে নিবিড় শিক্ষা গ্রহণ করছে প্রতিবন্ধী শিশুরা। পরম মমতায় তাদের পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, সমাজসেবক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৪ সালে তার উদ্যোগে মাত্র চার শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ সাত্তার-রেকায়েত প্রতিবন্ধী একিভূত বিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ দুই ভাইয়ের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা, তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে কি হবে’ শুরুতে অভিভাবকরা এমন মনোভাব পোষণ করলেও সবার নিরলস চেষ্টায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালে ১০০, ২০০৬ সালে দেড়শ’ হলেও চলতি বছরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আড়াই শ’ জনে। সমাজ সেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি নিজের জমির উপর বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছেন। দল, মত নির্বিশেষে সকলেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। আর তার সবচেয়ে বড় সহযোগী এলাকার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা। যারা সেবার মনোভাব নিয়ে বিনাবেতন পাঠদানে এগিয়ে এসেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোজি খাতুন, মাহফুজা খাতুন, মিজানুর রহমান ও মেহের আফরোজ চুমকী জানান বাক, শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দেড়শ’ মেয়ে ও একশ’ ছেলে শিক্ষার্থীদের পরম মমতায় পাঠদান করেন তারা। বাড়ি থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিদ্যালয়ে আনার জন্য তিনটি ভ্যান রয়েছে। তাদের সঙ্গে মোট ২২ তরুণ-তরুণী প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের মতো মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। এজন্য কোন পারিশ্রমিক নেন না তারা। রোমা বেগম ও সাইদুল ইসলাম দুই অভিভাবক জানান, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় এমন চেতনা জাগ্রত করেছে স্কুলের শিক্ষকরা। এমন স্কুল হওয়াতে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তার আঁধার কেটে আশার আলো দেখছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে বিদ্যালয় গড়ে তোলা ও বিনা বেতনে প্রতিবন্ধীদের পাঠদানসহ অন্যান্য বিষয়গুলো বাংলাদেশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তুলতে এমন ধরনের ব্যক্তি উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তিনি। সর্বোচ্চ ১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায় বিদ্যালয়টিতে। বর্তমানে স্কুলের নামে দানকৃত ১৫ শতাংশ জমির ওপর শিশু শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পাঠদান করানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে নিজস্ব সাত বিঘা জমিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা।
×