
ছবিঃ এমডি সাব্বির
দেশের কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। জুনের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও, এই মাসে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি, ৬ থেকে ৮ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড়ও হতে পারে। এই পূর্বাভাস গ্রীষ্মের শেষ এবং বর্ষার শুরুর সময়ে দেশের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুন মাসে দেশের কিছু স্থানে ১-২টি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
নদ-নদীর অবস্থা ও বন্যার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এটি কৃষি খাত এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ চিন্তার কারণ। কৃষি আবহাওয়ার ক্ষেত্রে, এই মাসে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩-৫ মিলিমিটার এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণ ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা থাকতে পারে, যা ফসলের বৃদ্ধি ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মে মাসের আবহাওয়ার পর্যালোচনা: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি
মে ২০২৫ মাসের আবহাওয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ বছর মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬২.৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু গত ২৪ মে কক্সবাজার উপকূল এবং ৩১ মে সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। মে মাসে রেকর্ডকৃত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৮৬ মি.মি., যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৯৮ মি.মি.। এটি স্বাভাবিকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিভাগওয়ারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল, যা জুনের বন্যার আশঙ্কার একটি বড় কারণ।
মে মাসে ১ থেকে ৬, ৮, এবং ১১ থেকে ২৭ তারিখে পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযোগের কারণে এবং ২৯ থেকে ৩১ তারিখে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত ৩১ মে সিলেটে সর্বোচ্চ ৪০৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা এক দিনে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের একটি দৃষ্টান্ত।
সার্বিক চিত্র
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাস দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুনে সম্ভাব্য নিম্নচাপ এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস কৃষি উৎপাদন, জনজীবন এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সাব্বির