ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ আজ স্কটল্যান্ড

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১

আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ আজ স্কটল্যান্ড

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেটে আফগানিস্তানের উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর। ধ্বংস, বারুদ, যুদ্ধ, অভাব-অনিশ্চয়তার মাঝে যাদের বেড়ে ওঠা সেই রশিদ খান, মোহাম্মদ নবিরা এখন বিশ্ব ক্রিকেটের বড় তারকাদের কাতারে। একাধিক বৈষয়িক আসরে নজর কাড়া আফগানরা এবার টি২০ বিশ্বকাপে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলছে, অথচ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মতো টেস্ট খেলুড়ে দেশকেও বাছাইতুল্য রাউন্ড ওয়ান খেলে আসতে হয়েছে। ছোট্ট ফরমেটের ক্রিকেটে আফগানরা এখন ভয়ঙ্কর এক দল। তালেবানের ক্ষমতা দখলে দেশ যখন ভীষণ অস্থির, নবিদের চোখে তখন ব্যাটে-বলে ঝড় তোলার স্বপ্ন। শারজায় আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে আফগানদের বিশ্বকাপ যাত্রা। স্কটিশরাও দারুণ খেলছে। বাংলাদেশ, সহ-আয়োজক ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনিকে (পিএনজি) হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘আসল’ বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছে কাইল কোয়েটজারের দল। তাদেরও আছে দুর্দান্ত সব ক্রিকেটার। ২০১০ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করে আফগানিস্তান। এরপর ২০১২ ও ২০১৪ সালেও অংশ নেয়। নিজেদের প্রথম তিন আসরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়া আফগানরা ২০১৬ সালে ভারতে সর্বশেষ আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল। আর ২০১৯-২০২০ মৌসুমে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দলের মধ্যে থাকায় এবার সরাসরি খেলছে সুপার টুয়েলভে। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মুখোমুখি ৮ টি২০ ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছে আফগানরা। এছাড়া ২০১৮ সালের জুন থেকে আটটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সাতটিতেই জিতেছে আফগানরা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ছোট্ট ফরমেটে দলটা কতটা শক্তিশালী। অথচ এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। কারণ গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখল করে নেয় তালেবানরা। এরপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধের মুখে দেশটির ক্রীড়াঙ্গন। নারীদের ক্রিকেট নিষিদ্ধ করে দেয় তালেবানরা। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মঞ্চে নামছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ নিয়ে আফগানিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি বলেন, ‘যে কোন আসরে প্রথম ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জয় দিয়ে শুরু করা হলো মুখ্য বিষয়। প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেন, জয় দিয়ে আসর শুরু করতে চাই আমরা।’ একঝাঁক উদীয়মান তারকা রয়েছে আফগান ক্রিকেটে। যারা সারা বিশ্বকে চমকে দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লেগ স্পিনার রশিদ খান রয়েছেন আফগান দলে। মুজিব-উর রহমানের নামও আলাদা করে বলতে হবে। অধিনায়ক নবিকে নিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন আক্রমণ তাদের। ব্যাটিংয়ে সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান, হার্ডহিটার মোহাম্মদ শেহজাদ, ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই, টপ অর্ডারে হাসমতউল্লাহ শহীদির কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই খেলেছিল স্কটল্যান্ড। এরপর ২০০৯ সালে খেললেও, পরের তিন আসরে জায়গা পায়নি তারা। ২০১৬ সালে আবারো বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যায় তাদের। তিন বিশ্বকাপেই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় স্কটিশরা। এবারই প্রথম সুপার টুয়েলভে তারা। বিশ্বকাপের শুরুতেই চমক দেখায় স্কটল্যান্ড। ফেভারিট বাংলাদেশকে ৬ রানে হারায়। এরপর পাপুয়া নিউগিনিকে ১৭ রানে ও ওমানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেয়। সুপার টুয়েলভেও চমক দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক কাইল কোয়েটজার,‘আমাদের সামনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তবে বিশ্বসেরা দলগুলোকে আমরা চমকে দিতে চাই। এজন্য বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো করা দরকার। বাছাই পর্বের মতো শুরু করার লক্ষ্য আমাদের।’ ৪ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ১৪ ম্যাচে ৫ জয় ৯ হার রয়েছে আফগানিস্তানের। তবে ছন্দে থাকা স্কটিশরা এবার আফগানদের চমকেও দিতে পারে। রাউন্ড ওয়ানে ৩ ম্যাচে ১০৩ রান করা রিচার্ড বেরিংটন এবং ৮২ রান করা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ম্যাথু ক্রস নবিদের জন্য হয়ে উঠতে পারেন মাথা ব্যথার কারণ। কাইল কোয়েটজারের অধীনে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়ে গড় স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন রিচার্ড বেরিংটন, ক্যালাম ম্যাকলিয়ড, সাফিয়ান শরীফ, ম্যাথু ক্রস ও এ্যালি এভান্স। দলটির অন্যতম ভরসা তারা। ২০১৬ বিশ্বকাপে খেলা মাইকেল লিস্ক, জশ ডেভি, জর্জ মুন্সে ও মার্ক ওয়াট আছেন এবারের বিশ্বকাপ দলেও। স্কটল্যান্ডের অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারি। স্কটল্যান্ডের ম্যাচে অনুমিতভাবেই বিশেষ নজর থাকবে অভিজ্ঞ শরিফ ও অধিনায়ক কোয়েটজারের দিকে। তাছাড়া স্পিনারদের নিয়েও আত্মবিশ্বাসী দলটির প্রধান কোচ শেন বার্গার। এই কোচ বলেন, ‘আমাদের দলে দক্ষতাসম্পন্ন, মেধাবী, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অভিযোজন প্রবণ অনেক খেলোয়াড় আছে। আমরা গত দেড় বছর ধরে এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। রাউন্ড ওয়ানডে ভালো খেলা ছেলেরা সুপার টুয়েলভেও দারুণ কিছু করতে মুখিয়ে আছে। আমাদের সম্মিলিত স্পিন আক্রমণ নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। পেস বোলিংয়ে চির-সতেজ শরিফ তো আছেই, সাথে অন্যরাও ভালো করছে।’ বার্গার আরও যোগ করেন, ‘ব্যাটিংয়ে আমাদের জর্জ মুন্সে ও কাইল কোয়েটজারের মতো ইন-ফর্ম ব্যাটাররা আছেন। আমরা মনে হয়, একটি দল হিসেবে আমরা পরিপূর্ণ। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমরা রোমাঞ্চিত, বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সেরাদের সঙ্গে খেলতে মুখিয়ে আছি।’
×