ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিবরা

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১ জুন ২০১৯

রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিবরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ মানেই রোমাঞ্চ। বিশ্বকাপ মানেই আবেগ। বিশ্বকাপ মানেই বাস্তবতায় থেকে স্বপ্ন সফল করার চেষ্টা করা। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যেও সেই রোমাঞ্চ, আবেগ, বাস্তবতা এবং স্বপ্ন আছে। তবে এমনি ম্যাচ খেলে, নৈপুণ্য দেখিয়ে রেকর্ড হলে যত না আনন্দ, তারচেয়ে বেশি আনন্দের যেন বিশ্বকাপের মাধ্যমে কোন অর্জন হলে। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা রেকর্ডের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। এ মিশনে বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত লীগপর্বের গন্ডি অতিক্রম না করে তাহলেও ৯টি ম্যাচ খেলবে। দিন যত গড়াতে থাকবে, বাংলাদেশের একেক ক্রিকেটারের রেকর্ড হতে থাকবে। সব রেকর্ডের মধ্যে যেন আর এক উইকেট নিলেই যে ২৫০ উইকেট ও ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবে সাকিব, সেই রেকর্ডের বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আছেন এক অনন্য রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। ক্রিকেটের সব থেকে বড় মঞ্চে আর মাত্র ২টি ম্যাচ খেলতে পারলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০তম ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করবেন তিনি। এছাড়াও এক উইকেট পেলে সাকিব তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৫০ উইকেট পূর্ণ করবেন। ব্যাটসম্যান সাকিবের আর মাত্র পাঁচ রান যোগ করতে পারলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রান পূর্ণ করবেন। সাকিব নামটির পাশে যেন রেকর্ডের অভাব নেই। অনেকে তো ভালবেসে রেকর্ড আল হাসানও ডাকেন। সেই সাকিবই আছেন আরও এক রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে। আর মাত্র একটি উইকেট পেলেই হয়ে যাবেন নতুন এক রেকর্ডের মালিক। ওয়ানডেতে দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে ৫০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নেয়ার মাইলফলক থেকে আর মাত্র ১ উইকেট দূরে আছেন সাকিব। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে সাকিব ছুঁতে যাচ্ছেন এই মাইলফলক। সাকিবের আগে এই মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন মাত্র চারজন। আর সেই চারজনই সাবেক ক্রিকেটার। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও পাকিস্তানের আব্দুর রাজ্জাক। এদের মধ্যে ম্যাচের সংখ্যায় দ্রুততম রেকর্ডটি এখন পর্যন্ত আছে রাজ্জাকের নামের পাশে। তবে সাকিব আর একটি উইকেট পেয়ে গেলে সেই দ্রুততম রেকর্ডের মালিক হয়ে যাবেন তিনি। ক্যারিয়ারের ২৫৯তম ম্যাচে এই মাইলফলকের দেখা পান পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার রাজ্জাক। যদিও এই ম্যাচে শুধু ৫০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ছিলেন রাজ্জাক। ২৫০ উইকেট পেতে তার আরও এক ম্যাচ খেলতে হয়। আগের চারজনের হিসেবে অনেক কম ম্যাচ খেলেই সাকিব ছুঁতে যাচ্ছেন এই মাইলফলক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ১৯৮ ম্যাচ খেলেই ৫৭১৭ রানের পাশাপাশি ২৪৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। রবিবার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হয়তো সাকিবের এই মাইলফলক হয়ে যেতে পারে। টাইগারদের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার, দু’জনই আছেন দারুণ ফর্মে। আর বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই দু’জনই দাঁড়িয়ে আছেন নতুন রেকর্ড গড়ার। বিশ্বকাপে আর সাতটি ম্যাচ খেলতে পারলে তামিমের ক্যারিয়ারে পূর্ণ হবে ২০০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অর্জন। আর মাত্র ৪২৪ রান করতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৩ হাজার রান পূর্ণ হবে তামিম ইকবালের। বিশ্বকাপে আর মাত্র ১৭ রান করতে পারলে তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তামিম ইকবাল। তামিমের আগে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন কেবল দুইজন। আর তার এই দুই সতীর্থ হলেন সাকিব আল হাসান (৫৪০ রান) এবং মুশফিকুর রহীম (৫১০ রান)। জাতীয় দলে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী সৌম্য সরকার বিশ্বকাপে একটি ম্যাচ খেললেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পূর্ণ হবে মোট ১০০টি ম্যাচ। সৌম্য এখন পর্যন্ত টাইগারদের জার্সিতে ১৪টি টেস্ট, ৪৪টি একদিনের ম্যাচ আর ৪১টি টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। আর এর আগে এক বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলা সৌম্যের বিশ্বকাপে মোট সংগ্রহ ১৭৫ রান। মাত্র ২৫ রান তুলতে পারলেই বিশ্বকাপে ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। এছাড়াও আর মাত্র ২৯ রান করতে পারলে নিজের ক্যারিয়ারের ৩ হাজার রান পূর্ণ হবে সৌম্য সরকারের। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহীম। তার সামনে দাঁড়িয়ে কেবল সাকিব আল হাসান। সাকিবের সংগ্রহ ৫৪০ রান আর মুশফিকের মাত্র ৫১০ রান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১১ হাজার রান পূর্ণ করতে মুশফিকের প্রয়োজন আর মাত্র ২৯৮ রান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বিশ্বকাপের মঞ্চে আর মাত্র চারটি ম্যাচ খেলতে পারলে ক্যারিয়ারের ৩০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করবেন। টাইগারদের হয়ে ৪৫ টেস্ট, ১৭৫ ওয়ানডে এবং ৭৬ টি২০ ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। রেকর্ডের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। আর মাত্র একটি ম্যাচ খেললেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির মোট ম্যাচ দাঁড়াবে ৩০০ ম্যাচ। ব্যাট হাতে মাত্র ৭৪ রান সংগ্রহ করতে পারলেই ক্যারিয়ারে ৩ হাজার রান পূর্ণ করবেন মাশরাফি। আর বল হাতে এবারের বিশ্বকাপে মাত্র তিনটি উইকেট নিতে পারলেই বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে আব্দুর রাজ্জাক ১৫ ম্যাচে ঝুলিতে ২০টি উইকেট ভরেছেন। আর তালিকায় ২১ ম্যাচ খেলে ২৩ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে সাকিব আল হাসান। আর অধিনায়ক মাশরাফি ১৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে আছেন তৃতীয় স্থানে। এবারের বিশ্বকাপে অধিনায়ক রাজ্জাককে ছাড়িয়ে সাকিবের সঙ্গে টক্কর দেয়ার লড়াই করবেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার লড়াইয়ে মাশরাফি। বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে টাইগাররা খেলার সুযোগ পাচ্ছে কমপক্ষে ৯টি ম্যাচ। আর গ্রুপপর্ব উতরাতে পারলে সেমিফাইনাল আর ফাইনাল খেলার সুযোগ তো থাকছেই। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। সেই রেকর্ডগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা।
×