ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইপিএলে ম্যানসিটির শিরোপা উৎসব

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৪ মে ২০১৯

ইপিএলে ম্যানসিটির শিরোপা উৎসব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আভাস মিলেছিল নাটকীয়তার। যখন শিরোপা নির্ধারণী রাতে ব্রাইটনের মাঠে প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু লিভারপুলের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে দেননি পেপ গার্ডিওলার শিষ্যরা। যে কারণে শেষ পর্যন্ত আর কোন নাটকীয়তা হয়নি। অনেকটা অনুমিতভাবেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের ২০১৮-১৯ মৌসুমের শিরোপা জিতে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। রবিবার রাতে একযোগে একই সময়ে শুরু হয়েছিল শেষ রাউন্ডের (৩৮তম রাউন্ড) ম্যাচ। তবে বাকি আটটি ম্যাচ নিয়ে কারও আগ্রহ ছিল না। সবার দৃষ্টি ছিল ব্রাইটন-ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল ওলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স ম্যাচে। ১৯৯০ সালের পর লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন হতে নিজেদের ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি সিটিকে পয়েন্ট খোয়াতে হতো। কিন্তু সিটিজেনরা অঘটন ঘটতে দেয়নি। পিছিয়ে পড়েও স্বাগতিক ব্রাইটনকে হারিয়েছে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে। আর লিভারপুল প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে ২-০ গোলে জিতে। এ কারণে ২৯ বছর পর প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল লিভারপুলের। অথচ এবার তারা নিজেদের ইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছে। ৩৮ ম্যাচে ৩০ জয় ও ৭ ড্রতে লিভারপুলের ঝুলিতে জমা হয়েছে ৯৭ পয়েন্ট। প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে এক মৌসুমে এর আগে এত বেশি পয়েন্ট কখনও পায়নি দ্য রেডসরা। তবু লিভারপুলকে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এখন কষ্টটা লাঘব হবে যদি আগামী ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপাটা তারা শোকেসে তুলতে পারে। আর ৩৮ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯৮ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানসিটি। মৌসুমের শেষ ১৪টি লীগ ম্যাচের সবগুলোতে জয়ই সিটিকে শিরোপা ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। ২০০৯ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার কৃতিত্ব দেখিয়েছে সিটি। অর্থাৎ ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর প্রিমিয়ার লীগে সিটিই একমাত্র ক্লাব যারা ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লীগে পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছে। এর পাশাপাশি চলতি মৌসুমে ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরোয়া ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও জিইয়ে রেখেছে সিটিজেনরা। সবমিলিয়ে গত আট মৌসুমে এটা সিটির চতুর্থ ইংলিশ শিরোপা ও ক্লাবের ইতিহাসে ষষ্ঠ। অন্যান্য শীর্ষ লীগগুলোতে যেখানে লীগ শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় সেখানে ইংল্যান্ডে শিরোপা নির্ধারণের জন্য শেষ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এতেই বোঝা যায় ইংলিশ ফুটবলের সাম্প্রতিক সময়টা অনেক বেশি জমজমাট। যার প্রমাণ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগের অল-ইংলিশ ফাইনাল। শেষদিনে লীগের অন্যান্য ম্যাচে এভারটনের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে ওঠা টটেনহ্যাম হটস্পার। চেলসি সাবেক চ্যাম্পিয়ন লিচেস্টার সিটির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেও তৃতীয় স্থান পেয়েছে। ইউরোপা লীগের ফাইনালে চেলসির প্রতিপক্ষ আর্সেনাল শেষ ম্যাচে বার্নালিকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে স্পার্সদের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে পঞ্চম হয়েছে। রেলিগেটেড হয়ে যাওয়া কার্ডিফের কাছে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে ষষ্ঠ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। ফলে লজ্জার হারে মৌসুম শেষ করতে হয়েছে রেড ডেভিলসদের। এছাড়াও জয় দিয়েই মৌসুম শেষ করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস, নিউক্যাসল ইউনাইটেড ও ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড। রেলিগেটেড হয়ে যাওয়া হাডার্সফিল্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে সাউদাম্পটন। ১৯৯০ সালের পর ইংল্যান্ডের শীর্ষ লীগে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল লিভারপুল। ঘরের মাঠ এ্যানফিল্ডে ১৭ মিনিটে সাডিও মানের গোলে এগিয়ে যাওয়া দলটির সেই স্বপ্ন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কারণ অন্যদিকে ব্রাইটনের মাঠে গ্লেন মারির হাত ধরে ২৭ মিনিটে সিটিজেনরা পিছিয়ে পড়ে। তখন থেকেই এ্যানফিল্ডে ছিল উৎসবের আবহ। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র ৮৩ সেকেন্ডের মধ্যে ডেভিড সিলভার অসাধারণ পাস থেকে সার্জিও এ্যাগুয়েরো সিটিকে সমতায় ফেরান। দশ মিনিট পর রিয়াদ মাহরেজের কর্নার থেকে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো অমারিক লাপোর্টে হেডে সিটিকে এগিয়ে দেন। আর দ্বিতীয়ার্ধে মাহরেজ ও ইকে গুন্ডেগানের গোলে সিটির শিরোপা নিশ্চিত হয়। ফলে জিতেও আপসোস করতে হয়েছে লিভারপুলকে। ট্রফি জয়ের পর বার্সিলোনা ও বেয়ার্ন মিউনিখের সাবেক কোচ পেপ গার্ডিওলা বলেন, আমরা লিভারপুলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের কারণেই আমরা নিজেদের মান বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। পরপর দুই মৌসুমে শিরোপা জয় সত্যিই বিশেষ কিছু। তার ওপর ৯৮ পয়েন্ট। গতবারের তুলনায় এবার আমরা নিজেদের মান আরও উঁচুতে নিয়ে গেছি, আর এতে লিভারপুল আমাদের সহযোগিতা করেছে। এই শিরোপা জিততে আমাদের টানা ১৪টি ম্যাচ জিততে হয়েছে। একটি পয়েন্টও আমরা হারাইনি। আমার ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত পাওয়া শিরোপাগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে কঠিন। অন্যদিকে কষ্ট হলেও আক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপ।
×