ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী ব্যাটসম্যানদের নিয়েই যত ভাবনা!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

দেশী ব্যাটসম্যানদের নিয়েই যত ভাবনা!

মিথুন আশরাফ ॥ এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরে বিদেশী ক্রিকেটার খেলানোর কোঠা কমেছে। গত আসরে পাঁচজন খেলতে পেরেছে। এবার চারজন খেলতে পারছে। বিদেশী ক্রিকেটার কোঠা একজন কমায় দেশী ক্রিকেটারদের কোঠা একটি বেড়েছে। তাতে করে দেশী ক্রিকেটারদের ওপর ভরসাও বেড়েছে। কিন্তু দেশী ক্রিকেটারদের নিয়েই যত ভাবনা হচ্ছে! বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। তারা যে নিজেদের একেবারেই মেলে ধরতে পারছেন না। এক রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়াতো দেশী কোন ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে হাফসেঞ্চুরিও মিলেনি। সাত হাফসেঞ্চুরির দেখা এখন পর্যন্ত মিলেছে। ছয়টিই বিদেশী ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে মিলেছে। একটি শুধু মিরাজ (৫১ রান) করতে পেরেছেন। বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে দেশী ব্যাটসম্যানদের যেন মিরাজই ধরে রেখেছেন। হযরতুল্লাহ জাজাইতো দুটি, রাইলি রুশো, পল স্টারলিং, ডেভিড ওয়ার্নার, নিকোলাস পুরানরা একটি করে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪৪ রান) ও মুমিনুল হক (৪৪ রান) এবং শুভাগত হোমের (৩৮*) মতো ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মিরাজ ছাড়া দেশের, জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে সেই রকম কোন ইনিংস এখনও দেখার মিলেনি। হতাশা দিন দিন যেন বাড়ছে। জাতীয় দলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তামিম ইকবালই শুধু (৩৫) ৩০ রান বা তার উর্ধে ইনিংস খেলতে পেরেছেন। ব্যাটসম্যানদের এমন দুর্দশায় বল হাতে ভিন্নরূপই মিলছে। বোলিংয়ে দেশী বোলাররাই দেখাচ্ছেন ঝলক। এক ম্যাচে ৪ উইকেট নেয়া তিন বোলারের দুইজনই দেশী। এ দুইজন হচ্ছেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সিলেট সিক্সার্সের তাসকিন আহমেদ। এখন পর্যন্ত মোট ৮ ম্যাচ হয়েছে। রংপুর ও খুলনা সর্বোচ্চ ৩টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। ৭ উইকেট নেয়া দুই বোলারের মধ্যে একজন দেশী। তিনি মাশরাফি। চিটাগং ভাইকিংসের রবি ফ্রাইলিঙ্কের (৭ উইকেট) পর সবই দেশী! মাশরাফির (৭ উইকেট) পর রংপুরেরই শফিউল ইসলাম (৫ উইকেট), ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৪ উইকেট), রংপুরের নাজমুল ইসলাম অপু (৪ উইকেট), সিলেটের তাসকিন আহমেদ (৪ উইকেট) রয়েছেন। বোলাররা ঠিকই নিজেদের নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের নিয়েই ভাবনা থাকছে! কেন এমন হচ্ছে? তাতো আগেই মাশরাফি ও মুশফিকুর রহীম জানিয়েছেন। মাশরাফি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, গত বিপিএলের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৫/২০ জন ছাড়া বাকিরা সেভাবে টি২০ খেলেনি। তাই এটা তাদের জন্য কঠিন। বিদেশী ক্রিকেটার যারা ভাল করছে তারা সবাই টি২০ বিশেষজ্ঞ। ওরা সব সময় বিশ্বজুড়ে টি২০ খেলে। ওদের সঙ্গে আমাদের স্থানীয়দের তুলনা করা কঠিন। যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদের আরেকটু সময় দিতে হবে।’ চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক মুশফিক মনে করেন, ‘যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদের ভাল করাটা কঠিন। সারা বছর কিন্তু এই একটা (টি২০) টুর্নামেন্টই তারা খেলে। এমনকি অনুশীলন ম্যাচও খেলে না। এসেই ক্লিক করাটা তাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। আমরা যারা জাতীয় দলে খেলি তারা সারা বছর তিন সংস্করণে খেলি, তাই আমাদের জন্য তুলনামূলক সহজ।’ সঙ্গে মুশফিক টি২০তে ভাল করার সুযোগ আছে বলেও জানান। এজন্য কী করতে হবে, তাও বলে দেন, ‘আমার মনে হয়, বিপিএলের বাইরে যদি কোন টি২০ টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় তাহলে যারা (জাতীয় দলের) বাইরে তাদের জন্যই শুধু না আমাদের জন্যও কাজে দেবে। (জাতীয় দলের) ব্যস্ত সূচীর কারণে হয়ত কঠিন। কিন্তু যারা বাইরে আছে তাদের নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট করলে (তাদের খেলা দেখে বিপিএলের) দল গঠন করাও সহজ হয়।’ তবে শীঘ্রই দেশী ব্যাটসম্যানরা ঝলক দেখাবেন, সেই আশা করছেন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টেই এখনও স্থানীয়রা ভাল করতে পারছে না। আমার কাছে মনে হয় এর আগে যে কয়টি টুর্নামেন্ট হয়েছে সবটিতে স্থানীয়রা ভাল ভূমিকা রেখেছিল। তবে এবার ভাল খেলতে পারছে না, এটি একটি চিন্তার বিষয়। তবে আমার মনে হয় তারা খুব দ্রুতই মানিয়ে নেবে। যেহেতু মাত্র দুটি ম্যাচ গিয়েছে এবং শীতকালে একটু সমস্যা তো হয়ই। কারণ বলের মুভমেন্ট থাকে, সেই সঙ্গে উইকেটটিও ব্যাটে বলে আসে না, এই বিষয়টি মানিয়ে নেয়া খুব বেশি জরুরী। আশা করি তারা দ্রুতই মানিয়ে নেবে এটা।’ সালাউদ্দিনের আশা দ্রুতই পূরণ হলেই হয়। তাহলেই দেশী ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যে ভাবনা তা দূর হয়ে যাবে।
×