ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় হ্যাটট্রিক শিরোপার আশায় ঢাকা আবাহনী

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

তৃতীয় হ্যাটট্রিক শিরোপার আশায় ঢাকা আবাহনী

রুমেল খান ॥ নতুন বছরের প্রথমদিনেই ফুটবল-ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়াবে ২০১৮-১৯ মৌসুমের প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের একাদশ আসর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে লীগ পিছিয়ে ফেডারেশন কাপ দিয়ে শুরু হয়েছিল ঘরোয়া মৌসুম। তারপর আবারও লীগ পিছিয়ে দিয়ে বছরে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা কাপ ফুটবল। বাফুফের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এপ্রিলে শেষ হবে লীগের প্রথম লেগ, আর মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় লেগ। তাতে লীগের শেষভাগে আবারও বর্ষার কবলে পড়বে লীগ। তবে এ নিয়ে বাফুফের কোন মাথাব্যথা নেই। কোনমতে লীগ শেষ করতে পারলেই তারা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাংলাদেশ আমলে প্রথম লীগ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে। ১৯৯৩ সালে নাম বদলে প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ এবং ২০০৭ সালে নাম বদলে ‘বি’ লীগ ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ লীগ’ এবং ২০১২ সালে নতুন নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ (বিপিএল) নামে। এসব লীগে অংশ নিয়ে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড (আগের নাম ছিল আবাহনী ক্রীড়াচক্র) শিরোপা জেতে ১৯৭৪, ৭৭, ৮১, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৯, ৯২, ৯৪, ৯৫, ২০০১, ০৭, ০৮, ০৯, ১২, ১৬ ও ১৮ সালে। এর মধ্যে তারা জেতে দুটি হ্যাটট্রিক শিরোপা। এখন তাদের লক্ষ্য তৃতীয় হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতা। সে লক্ষ্যে কঠোর অনুশীলন ও প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে তারা। প্রিমিয়ার লীগে দ্বিতীয় ও সার্বিকভাবে তৃতীয়বারের মতো হ্যাট্রিক শিরোপায় চোখ ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত ঢাকা আবাহনীর। স্বাধীনতা কাপের শিরোপা হাতাছাড়া হলেও প্রিমিয়ার লীগে তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না দলটির ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রূপু। চোট-নিষেধাজ্ঞা সামলে প্রত্যাশা করছেন পুরোশক্তির দল পাওয়ার। প্রথমবারের মতো হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলা হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে বিশ্বাস ম্যানেজমেন্টের। ঘরোয়া ফুটবলের সফলতম দল ঢাকা আবাহনী। ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর প্রিমিয়ার লীগের মোট ১০ আসরের মধ্যে ছয়বারই শিরোপা জিতেছে ধানম-ির জায়ান্টরা। প্রথম তিন আসরে দাপুটে পারফর্মেন্সে হ্যাটট্রিক শিরোপার অনন্য কীর্তিও আকাশী-নীলদের। দলটির রক্ষণে বড় ভরসা তপু বর্মণ, হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে আতিকুর রহমান ফাহাদের সমর্থন দুই অক্ষেই। প্লেসিং ফুটবলে শেষ চমকটা নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবার ফিনিশিংয়ে। আক্রমণভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজে কোরিয়ান মিডফিল্ডার কোজিমা। তবে স্বাধীনতা কাপে স্পষ্ট হয়েছে মাঝমাঠের দুর্বলতা। ঘাটতি মেটানোর কাজে পুরো সফল নন আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ্ সাইঘানি। বাজে সময় পেছনে ফেলে গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল দিয়েছেন ফর্মের আভাস। স্ট্রাইকার সানডে চিজোবার ওপর অনেক প্রত্যাশা আবাহনীর। ক্লাবের প্রত্যাশা পূরণে ফিনিশিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছেন সানডে। আশা করছেন লীগে ভাল কিছু উপহার দিতে পারবেন। চোট কাটিয়ে ফেরা সাদউদ্দিন বাড়িয়ে দিচ্ছেন অপশন, তার একাধিক পজিশনে খেলার সামর্থ্য বাড়তি পাওনা ম্যানেজমেন্টের। ত্রুটি শুধরে দীর্ঘমেয়াদে এএফসি কাপে চোখ রাখছে আকাশী-নীল শিবির। ফুটবলে যুগে যুগে সবদেশেই একেক সময় একেক ক্লাব শক্তির উত্থান ঘটে। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। স্বাধীনতার আগে চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল ক্লাব ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী, এবং জিমখানার মতো শক্তিশালী দলকে টপকে তারা সাতবার লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ষাটের দশকে এলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। একের পর এক সাফল্য কুড়িয়ে নেয় স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত। এ সময় তারা সাতবার লীগ শিরোপা জেতে। ওই সময় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভিক্টোরিয়া এবং ইস্ট পাকিস্তান আইডিসি। সত্তর থেকে নব্বই দশক পর্যন্তও সাফল্য অব্যাহত থাকে মোহামেডানের। এ সময় তারা আরও ১২ বার লীগ জেতে। কিন্তু ষাট দশকের মতো একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাতে পারেনি। তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভত হয় আবাহনী। সত্তর দশকের শুরুতে যাত্রা করা এই ক্লাবটিকে বলা হয় বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের ধারক-বাহক। সত্তর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত তারা লীগ জেতে ১০ বার। এই সময় মোহামেডান-আবাহনীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তিনটি দল। এরা হলো : ব্রাদার্স, বিজেএমসি এবং মুক্তিযোদ্ধা। একবিংশ দশক থেকে সাংগঠনিক কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে মোহামেডান। এর বিপরীতে আবাহনী আরও শক্তিশালী হয়ে আরও সফলতা অর্জন করে। লীগ জেতে সাতবার। এর মধ্যে পেশাদার লীগের শিরোপাই ৬টি। এ সময় আবাহনীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শেখ জামাল ধানম-ি এবং শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। সম্প্রতি আবাহনীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে নবাগত দল বসুন্ধরা কিংস। গত চার দশক ধরেই আবাহনী লাগাতার সাফল্য পেয়ে আসছে। ধরে রেখেছে সাফল্যের ধারাবাহিকতা। ১১ বার ঢাকা লীগ, ৬ বার প্রিমিয়ার লীগ জিতেছে তারা। এখন দেখার বিষয়, এবার তৃতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে পারে কি না তারা। লীগে আবাহনীর ১৭ শিরোপা ॥ ১৯৭৪, ৭৭, ৮১, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৯, ৯২, ৯৪, ৯৫, ২০০১, ০৭, ০৮, ০৯, ১২, ১৬ ও ১৮।
×