ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উইকেটকিপিং হারিয়েছেন, হারাতে পারেন নেতৃত্বও

মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারে অশনি সংকেত!

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৯ অক্টোবর ২০১৭

মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারে অশনি সংকেত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কি সুন্দর সময় কাটছিল। কি সুন্দর দিন মিলছিল। সাফল্য পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছিল। কিন্তু যেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে গেল বাংলাদেশ, বিপত্তি শুরু হয়ে গেল। দলের বিপত্তির সঙ্গে মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারেও যেন বিপদের রেখা মিলতে শুরু হয়ে গেল। প্রথম বিপদ, প্রথম টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং নিলেন মুশফিক। তাতে করে দল বিপত্তিতে পড়ল। মুশফিকও বোলারদের ধুয়ে দিলেন। টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত যারই হোক, দায় নিতে হবে অধিনায়ককেই। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক এখন মুশফিক। আর তাই মুশফিককেই দায় নিতে হবে। জাতির কাছে ক্ষমাও চেলেন মুশফিক। কিন্তু বোলারদের ধুয়েও দিয়েছেন। যা তিনি একজন নেতার আসনে বসে করতে পারেন না। তাই করেছেন। বিপদ যেন সেখানেই শুরু হয়ে যায়। বোলারদের ‘যা-তা’ বলায় স্বাভাবিকভাবেই বোলাররা ক্ষেপেছেন। সেই সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টেরও তা ভাল লাগেনি। তারপরও প্রথম টেস্ট বলে বিষয়গুলো এতো আমলে নেয়া হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টেও সেই একই ভুল হলো। তাতে মুশফিকের ঘাড়ে বিপদ আরও চেপে বসল। দ্বিতীয় বিপদ, প্রথম টেস্টে টস জিতে যে কাজ করেছেন মুশফিক। দ্বিতীয় টেস্টেও তাই করলেন। তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা আবারও ঘাড়ে চেপে বসল। এবার মুশফিক বোলারদের তেমন কিছু বলেননি। কিন্তু নিজের অপারগতা জানিয়ে দেন। তিনি যে ঠিকমতো বার্তা দিতে পারছেন না তা জানিয়ে দেন। এতটুকুতে ঠিক ছিল। কিন্তু আবেগী মুশফিক বলে বসেন, ফিল্ডিংয়ে তিনি কোন্ স্থানে থাকবেন, সেটি নাকি ম্যানেজমেন্ট থেকেই ঠিক করে দেয়া হয়েছে। দলের ভেতর কি ঘটে তা বাইরে বলাটা কারোরই ঠিক নয়। মুশফিক তো অধিনায়ক। তিনি কোনভাবেই তা বলতে পারেন না। মুশফিক তা করলেন। সঙ্গে এও বলে দিলেন, টস জেতাটাই ভুল হয়েছে। মুশফিক পদে পদে নিজের অপারগতার বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি বোধহয় এখন নেতৃত্বেও আর আনন্দ পাচ্ছেন না। তৃতীয় বিপদ, এ বিপদটি আগেই মিলেছে। মুশফিককে বোধহয় এবার স্থায়ীভাবেই উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হলো। লিটন কুমার দাশ ভাল খেলায় সেটি আরও নিশ্চিত হয়ে গেছে। তার মানে একটি আসন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই হারিয়ে বসেছেন মুশফিক। এখন নেতৃত্ব নিয়ে তার যে অপারগতা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট ও দল নিয়ে আবেগী বক্তব্য তাতে নেতৃত্বের আসন থেকেও হয়তো তাকে ছিটকে পড়তে হবে। বিপদের পর বিপদ আসছে। এমনও হতে পারে ডিসেম্বরে যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ সেই সিরিজেই মুশফিক নেতৃত্ব হারাবেন। চতুর্থ বিপদ, এই বিপদটি মুশফিকের জন্য খুবই কষ্টকর বিপদ। উইকেটকিপিং হারানোর পর স্বাভাবিকভাবেই চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি যে নিজেই বলেছিলেন, উইকেটকিপিংটা তার পছন্দের। মুশফিক দলের অধিনায়ক থাকার সঙ্গে উইকেটকিপিংটাই তার শক্তি ছিল। এরপর ব্যাটিং। নেতৃত্ব দেয়ার সঙ্গে মুশফিক যদি উইকেটকিপিং করেন তাহলে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে ভাবতে হয় না টিম ম্যানেজমেন্টকে। কিন্তু মুশফিক যদি উইকেটকিপিংয়ে না থাকেন তাহলে একজন ব্যাটসম্যান যোগ করতে হয়। সেই শক্তিই যদি মুশফিকের না থাকে তাহলে সামনে তো নেতৃত্ব কিংবা ব্যাটিং নিয়েও বিপদে পড়তে পারেন মুশফিক। যে ব্যাটিংটা মুশফিকের শক্তি। দলে টিকে থাকার সম্বল। মুশফিক যে সামনে সেই বিপদের মধ্যেও পড়বেন না কে বলতে পারে। উইকেটকিপিং গেছে। সামনে নেতৃত্বও যেতে পারে। তাহলে বাকি থাকে ব্যাটিং। নেতৃত্ব গেলে তখন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন। উইকেটকিপিং যাওয়াতেই চাপে পড়েছেন মুশফিক। আবার মনমতো অধিনায়কত্ব না করতে পারায় আরও চাপ তৈরি হয়েছে। তাতে ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়েছে। যদি নেতৃত্বও হারান মুশফিক, তাহলে অসীম চাপ মুশফিকের ব্যাটিং শক্তিটাকেই না গ্রাস করে দেয়। তখন বিশ্রামের ছলে মুশফিককে দল থেকেও দূরে রাখা হবে। একটা সময় যদি ব্যাটিং খারাপ করতে থাকেন তাহলে দল থেকেও বাদ পড়বেন। মুশফিক উইকেটকিপিং হারিয়েছেন। নেতৃত্বও সামনে যেতে পারে। বাকি থাকে ব্যাটিং। সেটিও যদি ঠিকঠাক মতো না করতে পারেন তাহলে দল থেকেই তো বাদ পড়বেন। তখন আর থাকে কী? মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারে বিপদের রেখার দেখাই যেন মিলছে।
×