ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাদ পড়ে আলোচনায় মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২০ আগস্ট ২০১৭

বাদ পড়ে আলোচনায় মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন মুমিনুল হক। আবার তিনি টেস্ট স্কোয়াডে ফিরতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েই ছিল আলোচনা। সেই আলোচনা শনিবার আরও গতি পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করার পর। কারণ ১৪ জনের দলে নেই এ মেধাবী টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। গত মার্চে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা সফরে। সেখানে দেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন মুমিনুল। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের দলেই ঠাঁই পাননি তিনি। এ কারণে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এ ব্যাটসম্যানই ছিলেন আলোচনার মূলে। তবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানিয়েছেন সর্বশেষ কয়েকটি টেস্টে পারফর্মেন্সের বিবেচনায় মুমিনুলের চেয়ে অন্যদেরই বেশি উপযুক্ত মনে করেছেন তারা। আর প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে দাবি করেছেন দলে জায়গা করে নেয়ার জন্য বড় রকমের প্রতিযোগিতা আছে এবং সেই প্রতিযোগিতায় ছিটকে গেছেন মুমিনুল। ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্ট দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২৫ বছর বয়সী মুমিনুল। অভিষেকেই ঝকঝকে অর্ধশতক হাঁকিয়ে সবার নজর কাড়েন ছোটখাটো গড়নের এ ক্রিকেটার। এরপর থেকেই টানা আলো ছড়াতে থাকেন ব্যাট হাতে। সে বছর অক্টোবরে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচে- চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৮১ রানের দুর্ধর্ষ একটি ইনিংস খেলে সবাইকে বিস্মিত করেন। বিশেষ করে তার মেজাজী চেহারা, স্ট্রোক খেলার ধরনটা দেখে অনেকেই নাম দিয়ে দেন ‘পকেট রকেট’। তারপর থেকে আর দমিয়ে রাখা যায়নি মুমিনুলকে। টানা ১১ টেস্টে অন্তত অর্ধশতক হাঁকিয়ে টেস্ট ইতিহাসের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকরকে পেছনে ফেলে আরেক কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসের কাতারে জায়গা করে নেন। তবে টানা ১২ টেস্টে অর্ধশতক হাঁকানো এবি ডি ভিলিয়ার্সকে অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি ফতুল্লায় ২০১৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে ম্যাচ বিঘিœত হওয়ায়। তবে মুমিনুল ততোদিনে হয়ে গেছেন টেস্ট দলের অন্যতম ভরসা এবং এই ফরমেটের অন্যতম স্পেশালিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতও করেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে ১৭ ইনিংসে ৬২.৬৪ গড়ে করেছেন ৮৭৭ রান। চার নম্বরে নেমে ৮ বার পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মুমিনুল। এর তিনটিকে তিনি সেঞ্চুরিতে পূর্ণতা দান করেছেন। এর মধ্যে দুটি ছিল অপরাজিত শতক। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দলের ওয়ানডাউনে বিশাল শূন্যতা। মুমিনুলের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে তাকেই এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি দিয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকে তিন নম্বরেই নিয়মিত হয়ে যান তিনি, ২৩ ইনিংসে রান করেন ৩৬.৮৬ গড়ে ৮১১। এই সময় তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র একটি সেঞ্চুরি ও ৬ হাফসেঞ্চুরি। তবে মুমিনুল নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য ঠিকই প্রমাণ করেছেন। তবে এ বছরটা ভাল যায়নি মুমিনুলের। চলতি বছর ৩ টেস্টের ৬ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র একবারই অর্ধশতক করতে পেরেছেন। সেটিও ছিল জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে। এরপর বাকি ৫ ইনিংসে তার ইনিংসগুলো ছিল ২৩, ১২, ২৭, ৭ ও ৫। সবমিলিয়ে ৬ ইনিংসে মাত্র ২৩.০০ গড়ে রান ১৩৮। এ কারণেই এবার মার্চে গল টেস্টে ক্যারিয়ারের ঠিক ৪ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বাদ পড়লেন একাদশ থেকে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলেননি। সেটি ছিল বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্ট। গলে ক্যারিয়ার শুরু করা মুমিনুলের ৪ বছর পর গলে টেস্ট খেলেই এখন দলের বাইরে। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আপনারা কেন শুধু একজনকে নিয়েই চিন্তিত। দলে অনেক পরিশ্রমী ক্রিকেটার আছে যাদের সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোন নিয়ম নেই, স্বচ্ছতা আছে। আমি মনে করি কোন ক্রিকেটারের প্রতি আমার আলাদা কোন আগ্রহ নেই। যে ভাল করছে তাকে সুযোগ দিতেই হবে। আর এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের প্রতিটি পজিশনে অনেক প্রতিযোগিতা আছে। সেই প্রতিযোগিতায় মুমিনুল বাদ পড়েছে।’ কিন্তু বাজে সময় যেতেই পারে একজন ব্যাটসম্যানের। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন চলার সময় প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলে নিজেকে আবার ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুমিনুল। দলে ফিরতে আত্মবিশ্বাসীও ছিলেন। কিন্তু তাকে হতাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। বাদ পড়েছেন তিনি দল থেকে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক নান্নু বলেন, ‘আপনি এভাবে বললেই তো হবে না, আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে দল সাজাই। মুমিনুল শেষ জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত ৬ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন, তাকে বাদ দেয়া হয়েছে মূলত সামগ্রিক পারফর্মেন্সের কারণে।’ মুমিনুলের অবর্তমানে কলম্বো টেস্টে তিন নম্বরে খেলেছিলেন ইমরুল কায়েস। এবারও দলে আছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ইমরুল অথবা তরুণ সৌম্য সরকার খেলবেন তিন নম্বরে। এ বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘তিন নম্বরে আমরা সৌম্য অথবা ইমরুলকে তারচেয়ে এগিয়ে রাখছি।’ ইমরুলকে হয়তো অভিজ্ঞতা এবং অতীত পারফর্মেন্সে মুমিনুলের বিকল্প ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু ক্যারিয়ারে মাত্র ৬ ইনিংসে তিন নম্বরে ব্যাট করেছেন ইমরুল। এর মধ্যে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথমবার তিনে নেমেই বাজিমাত করে তিন অঙ্কের ইনিংস খেলেন। ১১৫ রান করেছিলেন। এরপর বাকি ৫ ইনিংসে তিন নম্বরে নেমে তার রান ২৫, ৯, ২৫, ৩৪ ও ০। অর্থাৎ মাত্র ১৮.৬ গড়ে ৯৩ রান। নেই একটিও অর্ধশতক। আর তরুণ সৌম্য একেবারেই অনভিজ্ঞ এখন পর্যন্ত। মাত্র ৭ টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৩৭ গড়ে ৪ অর্ধশতকসহ তার রান ৪৮১। এর মধ্যে একবারও তিন নম্বরে খেলেননি তিনি। ৪ ইনিংসে ৭ নম্বরে, এক ইনিংসে ৬ নম্বরে এবং ৮ ইনিংসে ২ নম্বরে (অর্থাৎ ওপেনার হিসেবে) খেলেছেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত এসব প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে নান্নু বলেন, ‘তাকে হয়তো প্রথম টেস্টে রাখা হয়নি। দ্বিতীয় টেস্ট কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ডাকা হতেই পারে।’
×