ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনার কারণ জ্বালানি তেল ফুরিয়ে যাওয়া, চাপেকোয়েন্সকে খেলোয়াড় দেয়ার প্রস্তাব ব্রাজিলের শীর্ষ ক্লাবগুলোর

বিধ্বস্তের আগে কান্নার রোল পড়েছিল বিমানের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

বিধ্বস্তের আগে কান্নার রোল পড়েছিল বিমানের মধ্যে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ব্রাজিলের চাপেকোয়েন্স ফুটবল ক্লাবের স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে। ফুটবল খেলোয়াড়সহ ৭৫ জনের মৃত্যুতে গোটাবিশ্ব জুড়ে শোকের মাতম চলছে। বিশেষ করে ব্রাজিল যেন এখন শোকপুরী। আগামীর সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের হারিয়ে দেশটির সর্বসাধারণ থেকে শুরু করে সবাই কাঁদছেন। তাদের সঙ্গে কাঁদছে গোটা বিশ্ব। নিদারুণ দুঃসময়ে চাপেকোয়েন্স ফুটবল ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছে সবাই। ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো দলটিকে খেলোয়াড় দেয়ার প্রস্তাব করেছে, যেন তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, জ্বালানি তেল ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। আর বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে কান্নার রোল পড়েছিল বিমানে। বিমান দুর্ঘটনায় দলের অধিকাংশ সদস্যকে হারানো চাপেকোয়েন্সকে নিজেদের খেলোয়াড় দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ব্রাজিলের শীর্ষ তিনটি ক্লাব। ক্লাবগুলো হলো- ফ্লামেঙ্গো, পালমেইরাস ও সাওপাওলো। দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা কোপা সুদ-আমেরিকানার ফাইনালের প্রথম লেগে কলম্বিয়ার ন্যাশিওনাল ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে মেডেলিন যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয় চাপেকোয়েন্সের খেলোয়াড়-কর্মকর্তা বহনকারী বিমানটি। ওই ফ্লাইটে মোট ৮১ জন আরোহীর অন্তত ৭৫ জন প্রাণ হারায়। বেঁচে যাওয়া ছয় জনের তিনজন ফুটবলার বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও অপরজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন। আগামী তিন মৌসুম ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের দ্বিতীয় সারির প্রতিযোগিতায় চাপেকোয়েন্সের যেন অবনমমিত না হয় সেই ব্যবস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি জাতীয় শিরোপা জেতা সাওপাওলো। কারণ ক্লাবটিকে নিজেদের পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের জ্বালনি তেল ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফাঁস হওয়া এক অডিও রেকর্ডিংয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ফাঁস হওয়া অডিওতে যান্ত্রিক ত্রুটি ও জ্বালানির অভাবের কারণে বিমানটি অবতরণের জন্য এক পাইলটকে অনুরোধ করতে শোনা যায়। পাইলটের শেষ মুহূর্তের আলাপ অনুযায়ী, বিমানটি জরুরী অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এক ক্রু ও কলম্বিয়ায় এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকের মধ্যকার ওই আলাপে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা মেলে। পাইলটকে সাহায্য চাইতে শোনা যায়। জরুরী অবতরণের জন্য অনুমতি চাইতে শোনা যায়। বিমানটি বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় জরুরী অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ভাড়া করা বিমানটির আরোহীদের মধ্যে যে ছয়জন রক্ষা পেয়েছেন তাদের মধ্যে চাপেকোয়েন্স ফুটবল দলের তিন সদস্যও আছেন। কলম্বিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি অডিওতে বিমানটির বলিভিয়ান পাইলট মিগুয়েল কুইরোগাকে মেডেলিন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের অপারেটরকে বলতে শোনা গেছে, ‘মিস, লামিয়া ৯৩৩ পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে, পুরো বিদ্যুত ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছে, কোন জ্বালানি নেই।’ জরুরী অবতরণের অনুমতির অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ফুয়েল ইমার্জেন্সি, মিস।’ ওই সময় কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া অপর একটি বিমানের কো-পাইলটের বক্তব্যও অডিও’র এই কথাবার্তার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি জানিয়েছেন, তার ওপরে থাকা লামিয়ার উড়োজাহাজটি জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে জরুরী অবতরণে যেতে চাইছিল। জুয়ান সেবেস্টিয়ান উপেগুই নামের এই কো-পাইলট জানান, লামিয়ার পাইলট রানওয়েতে পৌঁছার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছিলেন। কিন্তু এরপরই সব স্তব্ধ হয়ে যায় এবং তারা কান্না করতে শুরু করেন বলে জানান উপেগুই। হৃদয় বিদারক এ ঘটনায় তিন খেলোয়াড় ছাড়াও এক সাংবাদিক এবং দুই ক্রু সদস্য বেঁচে যান। বেঁচে যাওয়া বলিভিয়ান ফ্লাইট টেকনিসিয়ান এরইউন টুমিরি জানিয়েছেন, কঠোরভাবে নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণর করেই তিনি নিজেকে বাঁচাতে পেরেছেন, ওই সময় অন্যরা ভীত হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, অনেক যাত্রী তাদের আসন ছেড়ে উঠে কাঁদতে শুরু করেন। আমি আমার দুই পায়ের মাঝে ব্যাগটি দিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রƒণের মতো হয়ে থাকি। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার এক মিনিটের কম সময় আগে বিদ্যুত চলে যায় বলে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া অপর যাত্রী বলিভিয়ান ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্ট জিমেনা সুয়ারেজ।
×