ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খেলতে মরিয়া তাসকিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ জুলাই ২০১৬

খেলতে মরিয়া তাসকিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিরাপত্তা জোড়দারে আরেকধাপ যোগ হচ্ছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের চারদিকের দেয়াল আরও ৫ ফুট উঁচু করা হচ্ছে। যেন বাইরে থেকে কিছুই দেখা না যায়। এখন আছে ১০ ফুট। সেটি ১৫ ফুটে করা হচ্ছে। প্রতিদিনই যেন নিরাপত্তায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। যেন ইংল্যান্ড থেকে নিরাপত্তা পরিদর্শক দল এসে সন্তুষ্ট হয়। যেন অক্টোবরে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার জন্য রাজি হয়। এর সঙ্গে স্টেডিয়ামে অনুশীলনরত ক্রিকেটার, দেশী-বিদেশী কোচরাও যেন নিরাপত্তার শঙ্কায় না ভোগে। দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে একদিকে বিসিবি নিরাপত্তা নিয়ে আরও কঠোর হচ্ছে। আরেকদিকে এসব নিয়ে কী আর ক্রিকেটারদের মাথা ঘামানোর সময় আছে। তারা তো অনুশীলন নিয়েই ব্যস্ত। মাঠের বাইরের নয়, মাঠের ভেতরের বিষয় নিয়েই আসলে তাদের সব ভাবনা। সব ভাবনা আসলে এই মুহূর্তে ফিটনেস নিয়ে। জাতীয় দলের ফিটনেস ট্রেনিংই যে চলছে। ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়েই যে কাজ হচ্ছে। দুইদিন ফিটনেস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাতে সব ক্রিকেটারই ফিট বলেই ট্রেনারের কাছে ধরা দিচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গতির বোলার তাসকিন আহমেদের চিন্তা একটু বেশিই। তার সব চিন্তা এখন নিজের বোলিং শুদ্ধ করা নিয়ে। না হলে যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠেয় সিরিজটি খেলতে পারবেন না। দ্রুত বোলিং এ্যাকশন শুধরে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান তাসকিন। খেলতে চান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই। টি২০ বিশ্বকাপে বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ে তাসকিনের। এরপর আইসিসি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাসকিনকে বল করা থেকে বিরত রাখে। এখন তাসকিন যদি আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে চান, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আবার আইসিসি স্বীকৃত কোন বোলিং পরীক্ষাগারে পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ প্রমাণ করতে হবে। তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলা সম্ভব। তাসকিন যেমন বোলিং এ্যাকশন শুধরাতে তাকে নিয়ে চলমান সেশনগুলো নিয়েই আগে কথা বললেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানালেন, ‘আমাদের হেড কোচ তিনি তো এখন দেশের বাইরে আছেন। আমি তাই এখন বিশেষজ্ঞ কোচের অধীনে আছি। আমি মাহবুব আলী জাকি স্যারের অধীনে আছি। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করছেন। এখানে বোলিং সেশন চলছে, ভিডিও সেশন চলছে। সবমিলিয়ে অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কোচরা অনেক সাহায্য করছেন। আর আমিও অনেক খুশি, ভাল উন্নতি হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রই পরীক্ষার জন্য আগাতে পারব।’ ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই নিজের বোলিং এ্যাকশনকে শুদ্ধ প্রমাণ করতে চান তাসকিন, ‘আমি চাই না কোন কিছুর বিনিময়ে আমি ইংল্যান্ড সিরিজ মিস করি। অনেক কঠিন পরিশ্রম করছি যাতে ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই পরীক্ষা দিয়ে আসতে পারি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার অনুমতি পাই। আবার সব ধরনের খেলা খেলতে পারি।’ কবে পরীক্ষা দিতে যাবেন? এমন প্রশ্নে তাসকিন জানালেন, ‘এটা বলা কঠিন যে কবে যাব। এটা নির্ভর করছে আমার উন্নতির উপর। কোচরা বিসিবি যখন মনে করবে, আর আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। সবকিছু যখন ভাল থাকবে, তখনই যাব।’ টি২০ বিশ্বকাপে বোলিং এ্যাকশনে সমস্যা ধরা পড়ার পর যখন পরীক্ষা দিতে যান, বাউন্সারেই সমস্যা ধরা পড়ে। সেই বাউন্সার বাদ দিয়েই কী তাসকিন শুধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন? নিজেই বললেন, ‘যাই হোক না কেন পেসের সঙ্গে কোন কপ্রোমাইজ করব না। আমি ফাস্ট বোলার। পেসটাই আমার মূল শক্তি। মেজর কোন সমস্যা নাই। যেভাবে কোচরা বলছে সেভাবেই করছি, উন্নতি হচ্ছে। আশা করি, যে সমস্যাটা ছিল সেটা থাকবে না।’ বোলিং এ্যাকশনে সমস্যা থাকলেও ঘরোয়া লীগে খেলতে পারা যায়। তাসকিন এবার ঢাকা লীগে খেলেছেনও। লীগে খেলে তাসকিনের ভালই হয়েছে বলে দাবি। তাসকিনই যেমন জানালেন, ‘প্রিমিয়ার লীগের মাঝেও কিন্তু ভিডিও সেশন হয়েছে। লীগের মাঝেও আমি ড্রিল করেছি, সেশন করেছি। প্রিমিয়ার লীগ চলাকালীন সময়েও আমি পাঁচটা সেশন করেছি। ওইগুলো মাঠে এ্যাপলাই করেছি। মাঠে ভিডিও করেছে। ভুলত্রুটি ছিল কিনা সেটা দেখেছে। আমার মনে হয় প্রিমিয়ার লীগ খেলে ভালই হয়েছে। কারণ যত যাই হোক অনুশীলন সেশন আর ম্যাচ সেশন দুইটা আলাদা। সবমিলিয়ে উন্নতি হচ্ছে। আশা রাখি অল্প সময়ে পরীক্ষা দিয়ে ফিরব। কোচরা সন্তুষ্ট। তেমন কোন ভুল পড়েনি তাদের চোখে। উন্নতি হচ্ছে এটাই প্রমাণ।’ তাসকিন আছেন কোচ মাহবুব আলী জাকির তত্ত্বাবধানে। তিনিই তাসকিনকে ঠিক করছেন। সেই জাকির মতে তাসকিনের কতটা উন্নতি হলো? জাকি জানালেন, ‘তাসকিন হচ্ছে “অল এবাউট পেস”। বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম পেস বোলার। অন্য দশটা দেশে দেখেন। ওই হচ্ছে সবচেয়ে কমবয়সী ফাস্ট বোলার। এই বয়সে ওর কাছে আর কেউ নেই। তাসকিনের মূলশক্তি হচ্ছে পেস। তাসকিনকে ঠিক করতে গিয়ে যদি পেস কমিয়ে ফেলা হয়, তাহলে তাসকিন আর তাসকিন থাকবে না। তাহলে ওকে আর কেউ কেয়ার করবে না। আমার ফাস্ট ফোকাস হয়েছে তার পেস, তারপর অন্য কিছু। এটার উপরই আমি আমার ডিজাইন করেছি। প্রত্যেকটা ডিজাইন প্রথমে পেসের উপর নির্ভর করেই রিকনস্ট্রাক্ট করব। ওর কোন কিছুই বদলাব না। ওইভাবেই আমি ডিজাইন করেছি কাজগুলো। এটা অনেক কঠিন কাজ।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি বলব ৭০ ভাগেরও বেশি উন্নতি। পরের প্রত্যেকটা সেশন অনেক কঠিন হতে থাকবে। এখন ড্রিল সেকশনে আছি। এরপর আরও কিছু কাজ আছে। মেইন সেশনে যাব। সেখানে নিচের থেকে আবার শুরু হবে। নয়টা সেশনের মধ্যে তিনটা হিটিং সেশনে আসছি। বাকি ছয়টা সেশনই ছিল ড্রিল সেশন। ঐ সেশনগুলো অনেক কঠিন ছিল, অনেক কঠিন। তখন অনেক ওয়েটি বল, নন ওয়েটি বল ব্যবহার করতে হয়েছে। অনেক কষ্টের। কিন্তু ও এমন একটা ছেলে খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে। ওর শরীর ও এমন কিছু তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেয়। অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই তাকে পাঠাব।’ তাসকিনও তাই চান। পরীক্ষা দিয়ে শুদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে করেই হোক সিরিজ খেলতে চান।
×