ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদা সুবর্ণা

আইসিসির তামাশার শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

আইসিসির তামাশার শেষ কোথায়?

কৈশর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েই নিজেকে আলাদা করে মেলে ধরেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে হয়ে উঠেন উজ্জ্বল তারা। সম্প্রতি শেষ হওয়া এশিয়া কাপে বল হাতে অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দেন তরুণ প্রতিভাবান এই পেসার। এরপর টি-২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বেও নিজের জাত চেনান তাসকিন। তার সঙ্গে দারুণ সময় কাটছিল আরেক তরুণ প্রতিভাবান টাইগার স্পিনার আরাফাত সানির। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব ওলট-পালট হয়ে যায় তাদের। এই দুই ক্রিকেটারের বোলিং এ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি! আর টি-২০ বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট চলাকালীন এমন ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই ‘বড়’ এক ধাক্কা। তবে ক্রিকেটবোদ্ধারা মনে করছেন আইসিসির এমন ‘অবিবেচক’ কা-ের মূলে রয়েছে তিন মোড়ল তথা ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। বিশেষ করে বর্তমান ক্রিকেটে এককভাবে আধিপত্য করা ভারতই যেন পেছনে থেকে এসবের কলকাঠি নাড়ছে! এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাসকিন-সানির বোলিং-এ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ করায় বিস্মিত হয়েছেন বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেও। গত বুধবার হল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ৮ রানে জয় পায় টাইগাররা। ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচের শেষেই ম্যাচ রেফারি এ্যান্ডি পাইক্রফট তার রিপোর্টে তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেখানে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তাসকিন ও সানিকে তাদের এ্যাকশনের পরীক্ষা দিতেও বলা হয়। এরপরই সংবাদ সম্মেলন করে হাতুরাসিংহে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আইসিসির সঙ্গে কথা বলিনি আমি। কিন্তু এটা বড়ই উদ্বেগের ব্যাপার। আমার বোলার নিয়ে তাদের উদ্বেগ থাকলে তাদের কাজ নিয়ে আমারও উদ্বেগ আছে। আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।’ বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দারুণভাবেই সফল হাতুরাসিংহে। তার সময়েই পাদপ্রদীপের আরোয় উঠে আসেন তাসকিন-সানি। যে কারণে তাদের সম্পর্কে বেশ ভালোই জানা তার। যে কারণে তিনি সুস্পষ্ট করেই বলেন, ‘গত ১২ মাসে যেভাবে বল করছে সেইভাবেই তো বল করল তারা। এদের খেলার ম্যাচ তারা আগে পরিচালনা করে থাকলে এদিন নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছু দেখেছেন। এই টুকুই বলতে পারি। তবে মানসিকভাবে শক্ত বোলার তারা। জানে যা করছে ঠিক করছে। আমরা মনে করি এতে উদ্বেগের কিছু নেই। সাম্প্রতিক সময়েও অনেক খেলেছে তারা। এটা আমাদের কাছে বিস্ময় হয়ে এসেছে। তারা কেবল একটু উদ্বিগ্ন। তবে আমাদের খেলায় এর প্রভাব পড়বে না।’ হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার ছিলেন এস রবি ও রড টাকার। তৃতীয় আম্পায়ার ছিলেন ক্রিস গ্যাফানি। পাইক্রফট ম্যাচ রেফারি। ২০১৫ সালে ভারত বাংলাদেশে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেললো। তখন এই খেলোয়াড়দের ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন এই কর্মকর্তারা। সেই সিরিজে ছিলেন টাকার ও পাইক্রফট। কিন্তু তখনও তাসকিন-সানির বোলিং এ্যাকশনে কোন ধরনের সমস্যা দেখেননি তারা। অথচ বিশ্বকাপের গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্তে প্রশ্ন তুলল তাসকিন-সানির বোলিং এ্যাকশন নিয়ে। এই সময়ে আইসিসির এমন আচরণে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে। ফেসবুক, টুইটার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি।’ এই দুই আম্পায়ার ভারতীয় ও অস্ট্রেলীয় হওয়ায় ভক্তদের মনে আইসিসিসির কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরেই। সব মিলিয়ে ক্ষুব্ধ-উত্তাল বাংলাদেশ। তাসকিনের এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভারতের জাসপ্রিত বুমরা ও রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে নিয়েও কেন কথা উঠবে নাÑ তা নিয়ে টাইগার ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দু-জনের বোলিং এ্যাকশনের ছবি পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, বল ডেলিভারির সময় বুমরার হাতের কনুই তাসকিনের চেয়ে অনেক বেশি বেঁকে যায়। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকানো যায় না। আইসিসির এমন আচরণ এর আগেও দেখেছে বাংলাদেশ। সোহাগ গাজী ও আল আমীনের বোলিং এ্যাকশনেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তারা। তবে সে পরীক্ষায় সহজেই জয় পেয়েছে সোহাগ-আল আমীন। ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশের ভক্ত-অনুরাগীদের বিশ্বাস এবার তাসকিন সানিও আইসিসির বাধা পেরিয়ে আবারও নিজেদের মেলে ধরবেন। আরাফাত সানি ইতোমধ্যেই পরীক্ষায় দিয়ে এসেছেন। তার অপেক্ষা এখন ফলাফলের। আর সোমবার পরীক্ষা দিয়ে তাসকিন আহমেদও দারুণ আশাবাদী। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিস্ময় জাগানিয়া পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেরই নজর কুড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু ইনজুরির কারণে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে খেলেননি তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বকাপের মূল পর্বে না খেলানোর কারণেই হয়তো বেঁচে গেছেন মুস্তাফিজও। অন্যথায় আইসিসির সন্দেহর তীর উঠতে পারত মুস্তাফিজুর রহমানের দিকেও। কেননা বিস্ময় বোলার হিসেবেই আগমন ঘটেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ প্রতিভাবান স্পিনার সুনীল নারাইনের। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে গেলেই তার বোলিং এ্যাকশন সন্দেহজনক মনে হয় আম্পায়ারদের। এরপর পরীক্ষাতেও অবৈধ প্রমাণিত হয় তার বোলিং এ্যাকশন। সব ধরনের ডেলিভারিই ১৫ ডিগ্রীর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। যে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, বাইরের কোন ঘরোয়া লীগেও বোলিং করতে পারবেন না তিনি। শুধু সুনীল নারাইন একাই নন, আইসিসির সন্দেহজনক বোলিং এ্যাকশনের শিকার হন পাকিস্তানের অভিজ্ঞ স্পিনার সাঈদ আজমল, শ্রীলঙ্কার স্পিনার সচিত্র সেনানায়কের মতো ক্রিকেটারও। যদিও বা তারা বোলিং শোধরে আবারও ক্রিকেট ফিরে এসেছেন কিন্তু বোলিংয়ে সেই ধার আর খুঁজে পাননি। তাই আইসিসির এমন ‘সন্দেহজনক’ আচরণে অনেক দেশের ক্রিকেটাররাই রোষানলে পড়ছেন। যার শেষ শিকার বাংলাদেশ। তাই ক্রিকেটবোদ্ধাদেরই প্রশ্ন এখন আইসিসির এই তামাশার শেষ কোথায়!
×