ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বার্সিলোনাকে বিদায় করে সেমিতে পিএসজি

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

বার্সিলোনাকে বিদায় করে সেমিতে পিএসজি

বার্সিলোনার বিপক্ষে পিএসজির জোড়া গোলদাতা কিলিয়ান এমবাপের উল্লাস

কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে হার মানে দল দুটি। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ গল্প লিখে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেছে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন (পিএসজি) ও জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। মঙ্গলবার রাতে দল দুটির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে যথাক্রমে স্পেনের দুই ক্লাব বার্সিলোনা ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
দুই স্প্যানিশ ক্লাবকে তল্পিতল্পা ধরিয়ে দেওয়া পিএসজি ও ডর্টমুন্ড ফাইনালের টিকেট পাওয়ার মিশনে সেমিফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হবে। গত ১০ এপ্রিল শেষ আটের প্রথম লেগের ম্যাচে প্যারিসের পার্ক দ্য প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে স্বাগতিক পিএসজিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিল বার্সিলোনা। ওই জয়ের পর সেমিতে খেলার দৌড়ে এগিয়ে ছিল কাতালানরা। পরশু রাতে তারা আবার খেলেছে নিজেদের মাঠ ন্যূক্যাম্পে।

ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান তারকা রাফিনহার ১২ মিনিটের গোলে এগিয়েও যায় বার্সা। তখন দুই লেগ মিলিয়ে কাতালানরা এগিয়ে যায় ৪-২ গোলে। ওই সময় মনে হচ্ছিল বার্সার সেমিফাইনালে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র! কিন্তু এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে একে একে বার্সার জালে চারটি গোল করে পিএসজি। ৪০ মিনিটে যার শুরুটা করেন ফরাসি উইঙ্গার উসমানে ডেম্বেলে। বিরতির পর ৫৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করেন আরেক ফরাসি মিডফিল্ডার ভিটিনহা। 
এরপর লাইমলাইটে আসেন প্রথম লেগে ফ্লপ থাকা এমবাপে। ৬১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করার পর ৮৯ মিনিটে করেন আরেক গোল। তাতেই বার্সাকে ৪-১ গোলে নাজেহাল করে পিএসজি। আর দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৪ গোলের অবিস্মরণীয় জয়ে সেমিতে খেলাও নিশ্চিত করে প্যারিসের পরাশক্তিরা। মূলত ফরাসি তিন তারকার দুর্দান্ত পারফরমেন্সেই ঘুরে দাঁড়ানোর এমন গল্প লিখতে পেরেছে পিএসজি।

২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো শেষ চার নিশ্চিত করে উল্লাসে ভাসছে প্যারিসের জায়ান্টরা। আরও একবার সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। যাদের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে পিএসজি। ম্যাচ শেষে অলরাউন্ড অবদানের জন্য এমবাপের প্রশংসা করে পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে বলেন, এমবাপেকে ধন্যবাদ। এভাবেই একটি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। এমবাপে আরো একবার নিজেকে প্রমাণ করেছে।

যখন এমবাপে দলকে কিছু দেয় সেটা আমাদের জন্য অনেক বেশি অর্থবহন করে। বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে দলকে শক্তিশালী করার পরও এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি  পিএসজি। কিন্তু বেশ কয়েকবার তারা নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে বিশে^র শীর্ষ সারির ক্লাবগুলোকে পেছনে ফেলেছে। এবার আরেকবার সুযোগ এসেছে শিরোপা ছুঁয়ে দেখার। এ প্রসঙ্গে এমবাপে বলেন, পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন আমি সবসময়ই দেখি।

বিশ্বের সেরা একটি দলের বিরুদ্ধে আরও এক ধাপ অতিক্রম করা সেই স্বপ্নেরই বহিঃপ্রকাশ। এখন আমরা ওয়েম্বলির ফাইনালে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো। ২০১৫ সালে এই কোচ এনরিকের অধীনে বার্সিলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছিল। এনরিকের বিশ^াস তার পিএসজি ঠিকই এবার ঘুড়ে দাঁড়াবে। নকআউট পর্বে প্রথম লেগে হারের পর কখনই পিএসজি ফিরে আসতে পারেনি। এবার সেটাও যখন হয়েছে তখন সবকিছুই সম্ভব বলে মনে করেন পিএসজি বস। 
পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সিলোনা ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর ছিল। কিন্তু ব্র্যাডলি বারকোলাকে আটকাতে গিয়ে আরাউজোর লালকার্ড বার্সাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। এমন হারের জন্য রেফারিংকে দুষেছেন বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজ। তিনি বলেন, ১১ জনের বিরুদ্ধে ১০ জন নিয়ে লড়াই করা অনেকটাই অসম্ভব। আমি মনে করি লাল কার্ডটা অযথাই দেয়া হয়েছে। এটা খুবই অন্যায় হয়েছে। রোমানিয়ান রেফারি ইস্তভান কোভাসের সমালোচনা করে জাভি আরও বলেন, রেফারিং খুবই বাজে হয়েছে। আমি নিজে সেটা তাকে বলেছি; সে ম্যাচের কিছুই বুঝতে পারেনি।
অন্যদিকে শেষ আটের প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। কিন্তু ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে অ্যাটলেটিকোকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ডর্টমুন্ড। ফলে দুই লেগ মিরিয়ে ৫-৪ গোলের জয়ে সেরা চারে উঠেছে জার্মান ক্লাবটি।

মূলত ম্যাচের ৭১ থেকে ৭৪ মিনিট অর্থাৎ তিন মিনিটের মধ্যে নিকলাস ফুয়েলক্রুগ ও মার্সেল সাবিটাইজারের দ্রুত দুই গোলে বুন্দেসলিগার ক্লাবটির জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে গোলদাতা ফুয়েলক্রুগ বলেন, এটা সত্যিই অভাবনীয় এক ম্যাচ। আমি মোটেই বাড়িয়ে বলছি না। কিন্তু এভাবেও ফিরে আসা যায় আমরা সে প্রমাণ দিলাম। পুরো স্টেডিয়াম আমাদের দারুণভাবে সমর্থন দিয়েছে।

×