
জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ
গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের কথা। স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে তিনি আজও উজ্জ্বল হয়ে আছেন সবার মনে। সৃষ্টিতে তিনি হয়ে আছেন অমর। আজ ২৯ আগস্ট। তাঁর ৭২তম জন্মবার্ষিকী
চলনে, বলনে ছিলেন অভিজাত। পোশাক-আশাকে পরিচ্ছন্ন। কথা বলতেন গুছিয়ে। বাইরে থেকে মনে হতো গম্ভীর, মেজাজি। ভেতরে খুবই সাধারণ, সরল সুদ্ধ প্রাণ। কারও কাছে মাথা নত করতেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন দৃঢ়তার সঙ্গে। সোজা কথা সরাসরি বলতে পছন্দ করতেন। কঠোর পরিশ্রম করে সততার সঙ্গে পথ চলা ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন খুব সহজে। বলছিলাম- গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের কথা। স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে তিনি আজও উজ্জ্বল হয়ে আছেন সবার মনে। সৃষ্টিতে তিনি হয়ে আছেন অমর। আজ ২৯ আগস্ট। তাঁর ৭২তম জন্মবার্ষিকী।
আমার পক্ষে তাঁকে মূল্যায়ন করা সহজ। কারণ, তাঁর সঙ্গে কেটেছে জীবনের অর্ধেক সময়। ২৯ বছর। খুব কম নয়। এই দীর্ঘ সময় তাঁকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। জেনেছি গভীরভাবে। প্রতিদিন কয়েকবার কথা হতো, দেখা হতো। পেশাগত নির্দেশনার বাইরেও আলোচনা হতো নানা বিষয়ে। পত্রিকার রিপোর্ট, সাংবাদিক বা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জটিলতা, শারীরিক অসুস্থতা, চলমান ঘটনার বিশ্লেষণ, তথ্য পর্যালোচনা, সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজখবর, খেলাধুলার সর্বশেষ ইত্যাদি। পুরনো দিনের একটি ইন্টারকম। রিং টোনটিও অদ্ভুত। তিনি এই ইন্টারকমেই কথা বলতে পছন্দ করতেন। দিনে অনেকবারই বেজে উঠত এই ইন্টারকম। কখনো চড়া কণ্ঠ, আবার কখনো খোশ মেজাজ। হাসি-ঠাট্টায় নানা ইস্যুর অবতারণা। সন্ধ্যায় স্বশরীরে উপস্থিতি সংবাদকক্ষে। দীর্ঘ আড্ডা-গল্প-খুনসুটি। একটা সময় ঘড়ি দেখতে দেখতে নিচের ফ্লোরে ছুটে যাওয়া। এভাবেই কেটেছে অনেক বছর।
পড়াশোনার পাঠ শেষ করে জনকণ্ঠে চাকরি নিয়েছি। তাঁর সামনে বেড়ে উঠেছি মানুষ এবং সাংবাদিক আমি। পেয়েছি হৃদয়ের উষ্ণতা। কখনো কঠোর প্রশাসক। কখনো পিতৃতুল্য অভিভাবক। পেশাদারিত্বের দিক থেকে সাংবাদিকতা জগতের কিংবদন্তি তোয়াব খানের কাছে দীক্ষা নিয়েছি প্রতিনিয়ত। মানুষ এবং মানবিকতার শিক্ষা নিয়েছি মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের কাছে। ১৯৯২ সালে শিক্ষানবিস রিপোর্টার হিসেবে শুরু। তারপর জুনিয়র রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, প্রধান প্রতিবেদক, উপসম্পাদক হয়েছি এই প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে নির্বাহী সম্পাদক। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দুই খানকেই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন দাবি করতেই পারি, পরিবারের সদস্যরা ছাড়া এত কাছ থেকে এতটা দীর্ঘ সময় আর কেউ তাদেরকে দেখার সুযোগ পাননি। আজ দুজনের একজনও বেঁচে নেই। উত্তরাধিকার হিসেবে তাদের পতাকা তুলে রাখতে আমরা আছি, চেষ্টা করছি।
আগের বেশ কয়েকটি স্মৃতিচারণে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের বেশ কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাঁর শৈশব, মুক্তিযুদ্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রিড়াঙ্গনে বিচরণ, পত্রিকা জগতে প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা, সামাজিক কর্মকা-, দর্শন, মানুষের জন্য ভালোবাসা, পারিবারিক জীবন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি। তাঁকে দেখা, তাঁর সম্পর্কে জানা, তাঁর আদর্শের অনুসারী ও গুণগ্রাহীদের বেশ কিছু স্মৃতিচারণ এবং মূল্যায়ন নিয়ে এবার জন্মদিনে একটি স্মারকগ্রন্থও বের করা হয়েছে। এসবের বাইরে এবার চেষ্টা করেছি তাঁর ভেতরের মানুষটি খুঁজে বের করার। চেষ্টা করেছি এর মাধ্যমে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের অন্য একটি অধ্যায় তুলে আনতে।
দৃশ্যত, তিনি নিরেট-কাঠখোট্টা একজন মানুষ। জীবনের প্রথম যেদিন তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলাম, মনে হয়েছিল, গম্ভীর ও কঠিন এক নিয়োগকর্তা। তখনো পত্রিকা বাজারে যায়নি। ৫৫ মতিঝিল আমাদের অফিস। একটি ফ্লোরে গাদাগাদি করে আমরা বসতাম। আমরা একদল তরুণের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক। তোয়াব ভাই তখনো জনকণ্ঠে যোগ দেননি। আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত বোরহান আহমেদ। নিয়োগ পেয়ে আমরা পত্রিকার ডামি কপির জন্য কাজ করছি। একদিন সন্ধ্যায় আমাদের জানানো হলো, পত্রিকার মালিক-সম্পাদক আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। ১১ এল্লাল চেম্বারের অফিস শেষ করে সন্ধ্যায় তিনি এলেন। সঙ্গে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের পরিচালক (অর্থ) কুতুবউদ্দিন খান ঝিলু এবং নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হাসান।
আমরা সবাই দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানালাম। গম্ভীর কণ্ঠে সম্পাদক বললেন, ‘তোমাদের নিয়ে আমি এক কঠিন চ্যালেঞ্জে নেমেছি। আমি কখনো কোনো কাজে ব্যর্থ হয়নি। সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এবারো আমি ব্যর্থ হবো না। মনে রেখ, এটি শুধু তোমাদের রুটিরুজির বিষয় নয়, একটি মহান পেশায় তোমরা প্রবেশ করেছ। এই পেশায় তোমরা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের জন্য অনেক কিছু দিতে পারবে। একাগ্র পরিশ্রম করলে নিজেরাও হতে পারবে বিখ্যাত। তোমাদের সহযোগিতা করার জন্য আমর পক্ষ থেকে যা কিছু করার সবই করব। আমাদের লক্ষ্য এক নম্বর পত্রিকা হওয়া। সম্মিলিত চেষ্টায় নিশ্চয়ই তা সম্ভব হবে।’ সেদিন তিনি দেশের পাঁচ জায়গা থেকে একযোগে পত্রিকা বের করা, প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি এবং পত্রিকার নীতি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্টই বলেছিলেন, ‘আমাদের ভূমিকা হবে নিরপেক্ষ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। স্বাধীনতা বিরোধীরা আমাদের সমর্থন পাবে না।’
গম্ভীর মুখে বললেও তাঁর কথায় ছিল দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস। তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন। সাংবাদিক, কর্মচারীদের জন্য তিনি যতটুকু করা সম্ভব সবটুকুই করেছেন। সাংবাদিক, কর্মচারীরাও লক্ষ্যে পৌঁছার ঐকান্তিক চেষ্টা করেছেন। পরে পত্রিকায় যোগদান করেন তোয়াব খান। দুই খানের নেতৃত্বে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যায় এক নম্বর পত্রিকার লক্ষ্যে। জনকণ্ঠ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতিভূ।
পত্রিকার কর্মজীবনের পাশাপাশি আমরা খুব অল্প সময়েই আবিষ্কার করেছিলাম আতিকউল্লাহ খান মাসুদের কঠিন অবয়বে বিরাজমান সহজ-সরল-সাদা মনের মানুষকে। মতিঝিল ছেড়ে আমরা এসেছি নিউ ইস্কাটন রোডের নিজস্ব ভবনে। একই ভবনের নবম তলায় তাঁর অফিস। সপ্তম তলায় তোয়াব ভাই (উপদেষ্টা সম্পাদক), বোরহান ভাই (নির্বাহী সম্পাদক), এডিটরিয়াল বিভাগ। ষষ্ঠ তলায় রিপোর্টিং, বার্তা এবং ফটো বিভাগ। পঞ্চম তলায় কম্পিউটার, সম্পাদনা ও অন্যান্য বিভাগ। এখনো সবকিছু আগের মতোই রয়েছে। সারাদিন হেড অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও কয়েক দফা কথা হতো সাংবাদিকদের সঙ্গে। সন্ধ্যার পর পুরোটাই ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক। নেমে আসতেন নিচে। সাত তলা, ছয় তলা, পাঁচ তলা হয়ে বাড়ি ফেরা। এই রুটিন কাজে ধীরে ধীরে তার সঙ্গে তৈরি হয়েছিল মালিক-কর্মচারীর বাইরে একটি চমৎকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। শুধু আমি নয়, এমন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল অনেকের সঙ্গে।
প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ পদে আসীন প্রত্যেক ব্যক্তি ছিলেন তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তিনি অভিজাত হলেও মনের দিক থেকে খুবই সাধারণ এবং সাদা মনের মানুষ। তিনি মনে করতেন, সবাই মিলেই তাঁর প্রতিষ্ঠান, তাঁর পরিবার। যোগ্যতা অনুযায়ী পদ-পদবির ভিন্নতা থাকলেও মানুষ হিসেবে সবাই সমান। কারও মধ্যে বিভেদ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক প্রটোকলে পদ অনুযায়ী আসন বিন্যাস হলেও সকলের বক্তব্যই ছিল তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়ার নীতিতে ছিলেন বিশ্বাসী। কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতেন না। তিনি তাঁর মত প্রকাশ করতেন। সুযোগ থাকলে এই মত গ্রহণ করার পরামর্শ দিতেন। বিশেষ করে পত্রিকার নীতি-আদর্শ ঠিক করে দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন। খুব কাছ থেকে তিনি পর্যবেক্ষণ করতেন সবকিছু। প্রথম বুঝেছেন-জেনেছেন, পরে শিখেছেন এবং এভাবেই আপাদমস্তক একজন ব্যবসায়ী থেকে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ সম্পাদক।
অধীনস্তরা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কথা জানালে তাঁকে কখনো বিরক্তি বোধ করতে দেখিনি। উপরন্তু তিনি আগ্রহ প্রকাশ করতেন, মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং সমস্যা সমাধানে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতেন। এমনকি অন্যের কাছে কারও সমস্যার কথা জেনেও তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন উদার মনে। এই আন্তরিকতায় তিনি ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন সকল সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছের মানুষ, মালিক থেকে অভিভাবক। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবাই তাঁকে মনে করতেন বৃক্ষের ছায়ায় নিরাপদ আশ্রয়।
একটি খুব সাধারণ ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। সালটা এখন আর মনে নেই। জনকণ্ঠের একজন সাংবাদিক ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন। বেশ কিছুদিন তার জ্ঞানই ফিরেনি। হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা করানো তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বিষয়টি পত্রিকার সম্পাদকের কানে যায়। তিনি জানতে পারলেন, এই রোগীর চিকিৎসা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। কালবিলম্ব না করে তিনি এই সাংবাদিকের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কয়েক মাস ধরে চলে চিকিৎসা। সেই সময় হাসপাতালে বিল হয় কয়েক লাখ টাকা। সকল খরচ বহন করেন তিনি নিজে। অবশেষে সুস্থ হয়ে এই সাংবাদিক পত্রিকায় ফিরেছিলেন।
আরও একটি ঘটনা প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করতে হয়। একজন রিপোর্টার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তখন বিদেশ ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তার স্ত্রী। সংবাদ পেয়ে লোক পাঠিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সকাল-বিকাল দুবেলা ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নেন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে জনকণ্ঠের গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদেশে টেলিফোন করে সম্পাদক নিজে কথা বলেন রিপোর্টারের সঙ্গে। তাকে স্ত্রীর জন্য কোনো চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়ে জানান, তিনি নিজে তার স্ত্রীর চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন।
এর বাইরেও কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা দুর্ঘটনায় আহত হলে তিনি নিজে ছুটে যেতেন তার কাছে। দাঁড়িয়ে থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, চিকিৎসার সকল দায়িত্ব পালন করতেন। শুধু অসুস্থতা বা চিকিৎসা নয়, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যায়ও তাঁর সহায়তা পেয়েছেন অনেকে। তিনি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনতেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন এবং বাড়িয়ে দিতেন সহযোগিতার হাত। কারও বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থাকতেন। বাচ্চা হলে অভিনন্দন জানাতেন। প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতেন সহযোগিতার হাত। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সকল সাংবাদিক, কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে তাঁর সহযোগিতা পেয়েছেন। রাজনৈতিক যাঁতাকলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খারাপ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই ভূমিকা অব্যাহত ছিল। আর্থিক টানাপোড়েনে অনেককিছু সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেও সবার সমস্যা তিনি মন থেকে অনুভব করতেন। অনিচ্ছাকৃত ব্যর্থতার জন্য তিনি আক্ষেপ করতেন এবং অপেক্ষা করতেন ভালো একটা সময়ের জন্য।
শুধু নিজের প্রতিষ্ঠান নয়, এর বাইরেও অনেক দুস্থ মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন উদার মনে। দেশের শিল্প-সাহিত্য জগতের অনেক গুণীজনের আর্থিক কষ্টের কথা প্রায়ই প্রচার মাধ্যমে সংবাদ হতো। তাদের অর্থ সংস্থানের কোনো উপায় ছিল না। কারও কাছে তারা সাহায্যও চাইতে পারতেন না। আতিকউল্লাহ খান মাসুদ নিজ উদ্যোগে এমন অনেক গুণীজন খুঁজে বের করেন। তাদেরকে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নিজ তহবিল থেকে তাদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেন। যতদিন তাঁর সামর্থ্য ছিল ততদিন অব্যাহত ছিল এই মাসিক ভাতা।
কঠিন অবয়বের আড়ালে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মতো খুব সাধারণ, পরোপকারী ও স্বচ্ছ একটি মানুষকে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর কাছে থাকা প্রায় সবাই। এ কারণে তিনি ছিলেন সবার এত প্রিয়। আকম্মিক মৃত্যুর পর তাই গোটা জনকণ্ঠ ভবনে ছিল আহাজারি। তিনি আজ নেই আমাদের মধ্যে। সকলের ভালোবাসায় তিনি অমর হয়ে আছেন, থাকবেন সব সময়। জন্মদিনে তাঁর রেখে যাওয়া সকল উত্তরাধিকারের প্রত্যাশা এবং দোয়াÑ মহান রাব্বুল আলামিন এই মহান হৃদয়ের মানুষটিকে জান্নাতবাসী করুন।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ