ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তবে কি ইংরেজির দরকার শেষ? AI যুগে নতুন প্রশ্ন শিক্ষাব্যবস্থায়!

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৩১ মে ২০২৫

তবে কি ইংরেজির দরকার শেষ? AI যুগে নতুন প্রশ্ন শিক্ষাব্যবস্থায়!

একসময় ইংরেজি শেখাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের প্রধান সেতুবন্ধ হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল এই যুগে বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে সেই ধারণা এখন বড় প্রশ্নের মুখে।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন মধ্যবয়সী গৃহিণী যিনি একটিও ইংরেজি শব্দ জানেন না, তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে অনায়াসে কথোপকথন করছেন কেবল ChatGPT-এর সহায়তায়। চিকিৎসক ছিলেন একজন আমেরিকান।
এই ঘটনা এখন আর চমকপ্রদ নয়, AI-এর সাহায্যে যেকোনো ভাষা অনুবাদ, ব্যাখ্যা এবং বোঝার কাজ খুব সহজেই সম্ভব হচ্ছে। এমনকি জটিল, টেকনিক্যাল তথ্যপূর্ণ ডকুমেন্টও AI মুহূর্তেই পড়ে, বুঝে, এবং সারসংক্ষেপ তৈরি করে দিতে পারছে।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে আর কতদিন আমরা বিদেশি ভাষা শিক্ষাকে শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ধরে রাখবো?

গত বছর বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ভর্তির ক্ষেত্রে তৃতীয় বিষয় নির্ধারণের সুযোগ দেয়। প্রায় সব প্রদেশ সেখানে ইংরেজিকে বেছে নেয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নতুন করে ভাবার সময় এখনই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইংরেজির জায়গায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস কিংবা ভূগোলের মতো বিষয়গুলো শেখানো হলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের AI নির্ভর সমাজে আরও কার্যকরভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে।

তারা বলছেন, ভাষা এখন আর বোঝার প্রতিবন্ধক নয়, বরং যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেই বিষয়বস্তুর গভীর জ্ঞানই মূল শক্তি। তাই শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে কীভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়, যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আর বাস্তবতা বুঝে চিন্তা করতে হয়।

অবশ্য একেবারে বিদেশি ভাষার প্রয়োজন শেষ হয়ে যাচ্ছে এমনটা বলা ভুল হবে। গবেষক বা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করেন এমনদের জন্য ভাষা গুরুত্বপূর্ণ থাকবেই। তবে একটি গড়পড়তা স্কুল শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সময় ও পরিশ্রম সাশ্রয়ের জন্য ইংরেজি ব্যাকরণ আর জটিল বাক্যগঠন শেখানোর বদলে বিশ্লেষণী চিন্তা ও যৌক্তিক জ্ঞান তৈরি করাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।

ভাবুন এক ভবিষ্যতের সভার কথা, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি নিজ নিজ ভাষায় কথা বলছে, আর AI তা বাস্তব সময়ে অনুবাদ করে দিচ্ছে—তখন পার্থক্য গড়ে দেবে কে কত ভালোভাবে চিন্তা করতে পারে, সঠিক প্রশ্ন করতে পারে, আর সমস্যা সমাধানে নতুন ধারণা দিতে পারে।

এই কারণে বলা যায়, ইংরেজি এখন কেবল একটি স্কিল, কিন্তু প্রাধান্য পেতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক গভীর জ্ঞানকেই। সময় দ্রুত বদলাচ্ছে, আর যদি এখনই সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে পেছনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

মিমিয়া

×