ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ

সম্পাদকীয়

দরিদ্রতা অন্যতম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। যুগে যুগে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা দরিদ্রতা দূরীকরণে অনেকেই বিভিন্ন মডেল বা কৌশল নিয়ে কাজ করেছেন। সেগুলোরই একটি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকাসহ গ্রামাঞ্চলে বিপুল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। দেশের দারিদ্র্য সূচক নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাখছে উল্লেখযোগ্য অবদান। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। ঋণ নিয়ে নারী ও পুরুষ আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

নারীরা গৃহস্থালির কাজকর্মের পাশাপাশি মাঝারি ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু পালনসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আর্থিকভাবে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। অন্যদিকে, পুরুষরা ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে পুকুরে মাছ চাষসহ বনায়ন, স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছেন। তবে ক্ষুদ্রঋণের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা অনেক সময় ঋণের কিস্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তৎপরতা কখনো কখনো মানবিকতা ছাড়িয়ে যায়।

তখন তাদের গরু, ছাগল, জমি, অলঙ্কার ইত্যাদি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় হয়রানির শিকার হতে হয় অনেককে। তাছাড়াও ক্ষুদ্রঋণ কার্যসূচির বিষয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো সুদের হার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে এবং কিস্তির সময়কাল বাড়িয়ে দিলে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির আরও বেশি পরিবর্তন সম্ভব। 
জাতীয় পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশে গত বছরের জুন শেষে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার। তাদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে দুই লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যা সরকারের উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) চেয়ে বেশি। ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকের সঞ্চয় ছাড়িয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ৭৩১টি প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজারের বেশি শাখার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চাই যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ। সেক্ষেত্রে কৃষি অর্থনীতি এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখা জরুরি। ক্ষুদ্র ঋণপ্রাপ্ত পরিবারগুলো উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেমন- হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর খামার, দুগ্ধ খামার, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সবজি বাগান, মাছ চাষ, দোকান ইত্যাদি ব্যবসায়িক কাজ করে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারছেন।

আবার এগুলো দেশজ উৎপাদনেও সহায়ক শক্তি হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরÑ এমএফআই ও এনজিও সেক্টর। কাজেই এসব সেক্টরের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং নানাবিধ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা তুলনামূলক সহজ হয়ে উঠতে পারে।

×