ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক কসমোপলিটন নগরীর অনুষঙ্গ মেট্রোরেল

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৭ জানুয়ারি ২০২৩

আধুনিক কসমোপলিটন নগরীর অনুষঙ্গ মেট্রোরেল

.

পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে উনিশ বছর পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এবার রাজধানীতে সদ্য চালু হওয়া মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন সংবাদকর্মীর জীবনে এসব ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী থাকার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। লেখার উপাদান হিসেবে ঘুরে ফিরে আসে সব সময়। উদ্বোধনের দিন নানা আনুষ্ঠানিকতায় সৃষ্ট সীমাবদ্ধতায় নতুন স্থাপনার নান্দনিকতা উপভোগ করা যায়নি। একদিন পর ছুটির দিন শুক্রবার আবারও ছুটে গিয়েছিলাম ওখানে। সব দেখে শুনে মনটা ভরে গেল। পেশার কারণে অনেক উন্নত দেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, লন্ডন, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক এমনকি প্রতিবেশী ভারতের দিল্লি ও কলকাতার মেট্রোরেল চড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। অনুভূতি ছিল, ‘আহা, আমাদের দেশে কবে হবে’। শেষ পর্যন্ত হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষও এখন মেট্রোরেলে চড়বে। দুঃসহ যানজটে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
আনুষ্ঠানিকতার দিনে মেট্রোরেলের ¯্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন আবেগাপ্লুত। পদ্মা সেতুর মতই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পটি তিনি বাস্তবায়ন করেছেন তিল তিল করে। উদ্বোধনী বক্তৃতা এবং পরবর্তী কার্যক্রমে তাঁর এই আবেগ ফুটে উঠেছিল স্পষ্ট। মেট্রেরেলে চড়ার আগে তিনি গাড়িতে করে গোটা এলাকায় পরিদর্শন করেন। নিজের চোখে অবলোকন করেন একটি বদলে যাওয়া দৃশ্যপট। পরে তিনি নিজে প্রথম টিকিট কেটে চড়েন মেট্রোরেলে। পদ্মা সেতুর মতোই দুই বোন মিলে নিজের সৃষ্টির আবেগে অবগাহন করেন। সৃষ্টিকর্তা সুযোগ দিলে তিনি হয়ত এমন সৃষ্টির পরিক্রমায় বিলিয়ে দিবেন জীবনের বাকি সময়। অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় এমন ইচ্ছের কথাই প্রকাশ করেছেন তিনি।
উদ্বোধনের একদিন পর শুক্রবার ছুটির দিন প্রকল্পটি ঘুরে দেখতে ছুটে যাই উত্তরায়। বনানী রেল ক্রসিংয়ের ওপর নির্মিত ফ্লাইওভারে উঠে বামে চলে  যাই কালশী-মিরপুর ডিওএইচএসমুখী পথ ধরে। কি দৃষ্টিনন্দন রাস্তা, চলতে চলতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। অনুভব করা যায় বাংলাদেশ কিভাবে একপা দু’পা করে উঠে যাচ্ছে উন্নত বিশে^র দিকে। সার্ভিস রোডসহ ছয় লেনের রাস্তায় যানজটের সুযোগ কম। কালশী মোড়ে ফ্লাওভারে দুটি লুপ চলে গেছে দুই দিকে। একটি কালশী হয়ে মিরপুর এবং অপরটি মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে। ডিওএইচএসমুখী রাস্তাটির এতটাই প্রশস্ত যে, সার্ভিস রোডসহ আট লেন করা যায় খুব সহজে। ফ্লাইওভারের নিচে কয়েকটি ইউলুপ করা হয়েছে। রাস্তার প্রশস্ততা দেখে মনে একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে, এখানে ফ্লাইওভার কি খুব দরকার ছিল? শুধু মোড়ে ফ্লাইওভার শেষ করে দিলেই কি হতো না? এছাড়াও কলশীমুখী রোডে একমুখী ফ্লাইওভারের পরিবর্তে দ্বিমুখী করতে পারলে মিরপুরবাসীদের জন্য আরও সুবিধা হতো না?
আমাদের দেশে পরিকল্পনায় দূরদর্শিতার অভাব সব সময় থাকে। দুর্বল পরিকল্পনার কারণে একটি স্থাপনার নির্মাণ শেষ হতে না হতেই তৈরি হয় নতুন সংকট। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটন উপশহরের মতো প্রায় দেড়শ’ বছর আগের আধুনিক পরিকল্পনা আমরা রাখতে পারি না। দশ বছর সামনে রেখেই পরিকল্পনা তৈরি করতে পারি না আমরা। এই যেমন- পদ্মা সেতুতে সিঙ্গেল লাইনের রেল। ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গগামী এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী রেললাইনও ডবল করে ভাবতে পারিনি। দেশ যেভাবে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, তাতে রেললাইন দুটি দশ বছরের আগেই ডবল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। তখন আবার নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। একবারে করতে পারলে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচানো যেত। যা হোক, আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে মিরপুর ডিওএইচএসমুখী দৃষ্টিনন্দন পথ ধরে। সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের জন্য গড়ে ওঠা সুন্দর সাজানো গোছানো শহরের বুক চিরে তৈরি রাস্তায় পৌঁছলাম মেট্রোরেল লাইনের গোড়ায়। এতদিন যে সরু পথটি উত্তরা নতুন শহরের দিকে চলে গেছে, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাসে মিরপুরের দিকে কিছুটা এগিয়ে ইউটার্ন নিয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে উত্তরার দিকে।

ডিওএইচএসগুলো চলে নিজস্ব আইনে। তাদের মতো করেই ওখানে তৈরি হয় যানবাহন চলাচলের পরিকল্পনা। এসব এলাকার স্টিকার লাগানো গাড়ির জন্য এক আইন, অন্যদের জন্য ভিন্ন আইন। বিমানবন্দর সড়ক এড়িয়ে চলতে মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের পরামর্শে এতদিন উত্তরাগামী গাড়িগুলো এই রাস্তাটিই ব্যবহার করেছে। মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে রাস্তাটির এক কিলোমিটার ছিল ভাঙাচোরা। তবু অনেক গাড়ি রাস্তাটি ব্যবহার করেছে যানজট এড়ানোর জন্য। এবার যাওয়া-আসা দুবারই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়ত স্টিকারবিহীন গাড়িগুলো এই পথে আর চলাচলের সুযোগ পাবে না।
মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। দুটো গাড়ি কোনো রকমে অতিক্রম করতে পারেÑ এমন সরু রাস্তাটির দখল নিয়ে নিয়েছে ব্যাটারিচালিত অটো। রাস্তাটি আর দুই ফুট প্রশস্ত করলে যান চলাচল আরও সহজ হতো। তবু ভাল, আগের ভাঙাচোরা পথের পরিবর্তে অনেকটা নির্ঝঞ্জাটে পৌঁছানো গেল। মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে তৈরি গোটা রাস্তাটিই খুলে দেওয়া হয়েছে উদ্বোধন উপলক্ষে। দৃষ্টিনন্দন আধুনিক রাস্তা। মাঝখানে ফুলের বাগান। চলতে চলতে চোখ জুড়িয়ে যায়। উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্ট্রাল হয়ে মাত্র কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেলাম উত্তরা উত্তর স্টেশনে। আগারগাঁও এবং উত্তরা উত্তর ছাড়া মেট্রোরেলের কোনো স্টেশনই চালু হয়নি। তখন সকাল ১০টা। উত্তরা উত্তর স্টেশনে অভাবনীয় দৃশ্য। স্টেশনে ওঠার দুটি সিঁড়ির গোড়ায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন। কেউ এসেছেন সপরিবারে, আবার কেউ বন্ধু-বান্ধবের দল নিয়ে। ছোট্ট শিশুর হাত ধরে শীতের কনকনে বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন মেট্রোরেলে চড়ার টিকিটের প্রত্যাশায়। ওখানে অন্তত বিশজনের সঙ্গে  কথা বলেছি। কেউ ট্রেনের যাত্রী নয়। তারা প্রথমবারের মতো স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে এসেছেন। কোলাহলপূর্ণ আধুনিক স্থাপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম প্রায় দু’ঘণ্টা। টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ার একটি সুপ্ত বাসনা ত্যাগ করলাম কী কারণে। তবু দাঁড়িয়ে রইলাম। এক অভাবনীয় ভালোলাগা কাজ করছিল। মনের মণিকোঠায় ভেসে উঠছিল নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন, সিঙ্গাপুরের দৃশ্য। সঠিক নেতৃত্ব অব্যাহত থাকলে শুধু মেট্রোরেল কেন, সকল ক্ষেত্রেই আমরা হয়ে উঠতে পারব সেসব দেশের মতো।                     
মেট্রোরেল বিশ্বের সকল বড় শহরে গণপরিবহনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’ বা টিউবের একটি অংশ। ১৮৬৮ সালে নিউইয়র্কে প্রথম চালু হয় মেট্রো সার্ভিস এবং ১৯০৪ সালে চালু হয় সাবওয়ে। জাপান মেট্রোরেল করে ১৯২৭ সালে।  ভারতের কলকাতায় ১৯৭২ সালে মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু হয়। পরে তৈরি হয় অন্যান্য শহরেও। বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেলব্যবস্থা চালু রয়েছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি)। বর্তমানে সংস্থাটির নাম ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ’০৯ সালের মার্চ থেকে ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত একবছরের ওই সমীক্ষায় সবার আগে ‘এমআরটি লাইন-৬’ নির্মাণের সুপারিশ আসে। পরের বছরই ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে জাইকা। সমীক্ষায় প্রথমে উত্তরা থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব আসে। পরে তা পরিবর্তন করে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত (২০.১০ কিমি) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আরও পরে এটি বাড়ানো হয় কমলাপুর পর্যন্ত। জাইকার কারিগরি পরামর্শ ও অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতে ২০১১ সালে ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ’১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। জাইকার সহায়তা হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হয় ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
২০১৬ সালে ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোলাইনে বসে প্রথম স্প্যান। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের আগেই শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক রেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কাটেন এবং যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করেন। ২১.২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এমআরটি-৬ এর মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে চলতি বছর ডিসেম্বর মাসে। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে অপেক্ষা করতে হবে ’২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কমলাপুর থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত স্টেশন থাকবে ১৭টি। প্রতি চার মিনিট পর পর চলবে ২৪টি ট্রেন সেট। এই লাইনে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ৯ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
পদ্মা সেতুর মতো রাজধানীর মেট্রোরেলের অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। যানজটের কারণে দেশ ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখী হয়। ২০১৮ সালে বুয়েটের একটি সমীক্ষায় বলা হয়, ঢাকা শহরে যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশের বেশি। ২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। প্রতি লাখ কর্মঘণ্টার মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিদিন ৪০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে শুধু যানজটের কারণে। মেট্রোরেলের লাইন-৬ নির্মাণ ব্যয় একদিনের ক্ষতির সমান নয়। নষ্ট কর্মঘণ্টার বাৎসরিক মূল্য বিবেচনায় ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। মেট্রোরেল প্রকল্পটি প্রতি বছর ২.৪ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে, যা জাতীয় জিডিপির ১.৫ শতাংশের সমান। রাজধানীর মেট্রোরেলে দেড় কোটি মানুষের জন্য যাতায়াত সহজ করবে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে গতিশীল করবে। এর মাধ্যমেও দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে। কর্তৃপক্ষ স্টেশনগুলোর কাছাকাছি কয়েকটি টিওডি হাব নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। স্থাপন করবে একটি বিশ্বমানের বিনোদন পার্ক। হোটেল, দৈনন্দিন পণ্যের বাজার এবং শপিংমল অন্তর্ভুক্ত থাকবে টিওডিগুলোতে। উত্তরায় প্রথম টিওডি হাব নির্মাণ করা হবে। টিওডি হাব ও স্টেশন প্লাজা তৈরির জন্য রাজউক থেকে ২৮.৬১৭ একর জমি কেনা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হবে। মেট্রোরেল পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর লোকবলের প্রয়োজন হবে। স্টেশনগুলোর আশপাশের বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে ব্যবসা পরিচালনার জন্যও লাগবে অনেক কর্মী। এতে কাজের সুযোগ তৈরি হবে অনেক লোকের। কর্মসংস্থানে আর্থিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে অবদান।
ঢাকার রাস্তায় চলমান সব যানবাহন চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে। যাতে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে পরিবেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার নাম আসছে নিয়মিত। মেট্রোরেল বিদ্যুৎচালিত এবং প্রতি ঘণ্টায়  বেশি যাত্রী বহন করবে। ঢাকায় বাস ও অন্যান্য পরিবহনে কমবে যাত্রীদের চাপ। কমবে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা। একই সঙ্গে কমবে পরিবেশ দূষণ। এছাড়াও শব্দ, শক এবং কম্পন কমাতে মেট্রোরেলে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দদূষণ রোধে লাইনের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে কংক্রিটের দেওয়াল। এই প্রযুক্তি পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মেট্রোরেল সেই স্বপ্নের প্রকল্প, যাতে রাজধানীকে আধুনিক কসমোপলিটনে রূপান্তর করবে।
ইতোমধ্যে মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর এবং পূর্বাচল থেকে কুড়িল হয়ে প্রকল্পটি গাজীপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে বলে জানা গেছে। এটি হবে প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল। পূর্বাচল থেকে কুড়িল পর্যন্ত লাইনটি হবে এলিভেটর। লাইনটি নির্মাণ শেষ হলে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি লাইনের মাধ্যমে গোটা রাজধানীকে মেট্রোরেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নেওয়া হবে। সত্যিকার অর্থে রাজধানী ঢাকা হয়ে উঠবে কসমোপলিটন মহানগরী।

লেখক :  নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

 

×