ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শতফুল ফুটতে দাও

নূরজাহান নীরা

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

শতফুল ফুটতে দাও

মেয়েদের জন্য অবহেলার একটা ছক এঁকে দেওয়া হতো

একটা সময় ছিল যখন জীবনের শুরুতে এবং নিজ পরিবার থেকেই মেয়েদের জন্য অবহেলার একটা ছক এঁকে দেওয়া হতো। ছেলে এবং  মেয়ের আবদারে তাদের চাহিদায় তাদের প্রয়োজনের মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকত। খাবারে, পোশাকে,  খেলনায়, শিক্ষায়, কাজে ছেলেদের ইচ্ছে পূরণ হলেও মেয়েদের ইচ্ছেটা ইচ্ছেই থেকে যেত। সুযোগটা সব যেন ছেলেদের জন্য ছিল। খুব মনে পড়ে মিনা কার্টুনের কথা।

কার্টুনের মাধ্যমে ছেলেমেয়ের এ ব্যবধানের বিষয়ে সচেতন করা হতো। সে জায়গা থেকে আজ অনেকটা বেরিয়ে আসতে  পেরেছে মানুষ। মেয়েরাও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে। তবে, সে জায়গা থেকে আজ মানুষ বেরিয়ে আসতে পারলেও মেয়েদের বিপদ পিছু ছাড়েনি। প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে  মেয়েদের। বিভিন্নভাবে যৌন হেনস্তা ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন। তবে শুধু মেয়েরা নয়, মেয়েশিশুরাও বাদ পড়ছে না এ তালিকা থেকে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রামের মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াত। নিখোঁজের পনেরো দিন পর তার খ-িত দেহ উদ্ধার করেন পিবিআই। পাঁচ বছরের ফুটফুটে একটা মেয়ে। দেখতে ফুলের মতো। নিষ্পাপ চেহারা। মায়াবী চাহনি। কতটা পশুতুল্য হলে তাকে খুন করা যায়! তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও আমরা অনেক এমন ঘটনা দেখেছি যার অধিকাংশ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

ধর্ষণের হাত  থেকে রেহাই পাচ্ছে না এই শিশুরাও। ধর্ষণের পর তাদের খুনও করা হচ্ছে। এর দায় আমাদের সমাজ এড়াতে পারে না, পারে না আইনের শাসনও। যদি সমাজ ব্যবস্থা ভালো হয় যদি আইনের ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ হয় তাহলে এই নৃশংসতা কমবে। শিশুরা আত্মীয় যেমন চাচা মামা এদের দ্বারাও ধর্ষণ ও খুন হচ্ছে। এই জঘন্যতম পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের প্রতিটি মানুষকে স্ব স্ব স্থানে থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

শিশুদেরকেও পরিবার থেকে সচেতন করতে হবে। যতটুকু সম্ভব শিশুদের নজরে নজরে রাখতে হবে। একা ছাড়া যাবে না। একা রেখে যাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাকে সঠিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে রেখে যেতে হবে। বাচ্চাদের বোঝাতে হবে, খাবারের লোভে কারও সঙ্গে যাওয়া যাবে না। এই শিক্ষাগুলো পরিবার থেকে বিশেষ করে মা বাবাকে শেখাতে হবে। দেশের আইনের শাসন ব্যবস্থার প্রয়োগ হতে হবে সঠিকভাবে।

অপরাধীর শাস্তি হলে অপরাধ কম সংঘটিত হবে। এভাবে সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিই পারে শিশুকে নিরাপদ জীবন দিতে। তা না হলে এই অবক্ষয়  থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব। সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে আজ। সবার সঠিক সচেতনতায় এ আঁধার কেটে যাক, নিরাপদ হোক প্রতিটি কন্যাশিশু। শতফুল ফুটতে দিতে হবে।

ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে

×