লিশের দায়িত্ব
জনগণের জান ও মালের হেফাজত ও সর্ব্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে ডাকাতরা লুট-তরাজ ও ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ও হীন কর্মকান্ড করতে পারে তা সরকার ও সচেতন নাগরিকদের ভাবার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কি বলা যায় হাইওয়ে পুলিশের চেয়ে ডাকাতরা অনেক বেশি সংগঠিত, পরিকল্পিত ও দক্ষ? সাম্প্রতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ডাকাতরা বিভিন্ন স্পট থেকে পরিকল্পিতভাবে পালা করে বাসে উঠে এবং বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
অতঃপর যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে এবং নারী যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এমন জঘন্য অপরাধ করার আগে তারা নিশ্চয় একটা পরিকল্পিত ছক করে এবং কোন কোন স্পটে তারা ওঠা-নামা করতে পারবে ও অপরাধ সংগঠিত করার সুযোগ পাবে তা নিয়ে পরিকল্পনা সাজায়। এখন প্রশ্ন হলো এই পরিকল্পিত অপরাধ বার বার সংঘটিত হয় কিভাবে? টহলদার পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ব্যর্থ? তথ্য প্রযুক্তির যুগে সরকার কেন সিকিউরিটি সিস্টেমকে আধুনিকায়ন করতে পারছে না? তবে কি এই চক্রের সাথে পুলিশ, ড্রাইভার ও হেল্পার সবাই জড়িত? সরকার কেন যাত্রীদের নির্ভয়ে চলার নিশ্চয়তা দিতে অক্ষম? কৌশল ও পরিকল্পনার দিক থেকে কেন হাইওয়ে পুলিশ ডাকাতদের তুলনায় পিছিয়ে? পুলিশ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং প্রচলিত আইনে বিচার হবে—এই আশার বাণীতে খুশি বা বাহাবা দেয়ার কিছু নেই। পুলিশ সম্ভ্রম হারানো মেয়েটির সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবে?
নিরাপত্তা ও স্বস্তির অভাবে যাত্রীরা ভ্রমণবিমুখ হয়ে পড়ছে। অল্পবয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য টিকিট কাটে যাতে সকালে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে পারে। তাদের অনেকের মধ্যে এখন আতঙ্ক কাজ করছে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। রাতের বাসে কুমিল্লা যাওয়ার পথে ফেনীর মহিপাল পার হতেই পাথর ছুড়ে ও গাছ ফেলে আমাদের বাসের গতি বন্ধ করে দিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ৪/৫ টা বাসের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ছুটে পালিয়েছি প্রাণের ভয়ে। অনেকদূর পর্যন্ত দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পথে এক ভদ্রলোক আমাদের রেল স্টেশনে পৌঁছোনোর পথ দেখিয়ে দিলে ওখানে গিয়ে বিশ্রাম নিয়েছিলাম। এটি ১৯৯৮ সালের কথা। এখন ২০২২, সময়ের চাকা ঘুরেছে অনেকখানি, কিন্তু চেতনা জাগেনি এখনও।
প্রথমত, টহলদার পুলিশকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সরকারকে এদের বেতন ও নানাবিধ সুবিধা বাড়িয়ে দিতে হবে। অতঃপর রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইট বসানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সিকিউরিটি গার্ড দিতে হবে কিছুদূর পর পর এবং এদেরকে সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য পুরষ্কার ও বেতন বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রচুর সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। যাত্রীদের বাসে ওঠার সময় হেল্পারকে সচেতন থাকতে হবে প্রয়োজনে চেক করে উঠানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদান কখনই সম্ভব হবে না।
নুরুল হক ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে