ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রা যবে সুন্দরবন

গোপা রাণী দে

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রা যবে সুন্দরবন

সুন্দরবন

কর্মময় জীবনের স্বস্তি মিলে ভ্রমণে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বন্ধে দল বেঁধে ঘুরতে যাব দূরে কোথাও। গন্তব্যস্থল ধার্য হয়েছিল সুন্দরবন। ২০ মার্চ ২০২১, রাতে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে ভোরে উঠছিলাম খুলনার এক হোটেলে। ২২ তারিখ সকালে মাইক্রোতে চেপে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছেছিলাম মংলা সমুদ্রবন্দরে। লঞ্চে বসতেই প্রথম চোখে পড়েছিল পানিতে ভাসমান কচুরিপানার ওপর দাঁড়ানো এক বুনো হাঁস।

অথৈ জলরাশি, বাতাসের  মিষ্টি সুভাষ, নোনা জলের গন্ধ, আকাশের কড়া রোদ্দুর- সবই ছিল মনোমুগ্ধকর। পশুর নদীর পাড় ঘেঁষে ঘন সবুজ বন।  মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম- পানির স্রোত, কাদা, গাছের শিকড়, পাখির কলকাকলি, ম্যানগ্রোভ বনভূমিসহ আরও কত কি! নারিকেল গাছের মতো দেখতে কিছু গাছ চোখে পড়তেই উদ্ভিদ বিজ্ঞানী, অধ্যক্ষ পার্থ বাবু বলছিলেন- গোলপাতা গাছ, এগুলো দিয়ে ঘর ছাউনি দেওয়া হয়।

ঝিরিঝিরি লম্বা পাতাওয়ালা একটা গাছের নাম গোলপাতা কি করে হয়! প্রকৃতিজুড়ে অদ্ভুত আর অপার ঐশ্বর্য ছড়িয়ে আছে। ভাগ্যিস আমি কিঞ্চিত দেখেছিলাম। এর ফাঁকে  আমার ছেলে এবং ড. অতনু  চিৎকার করছিল-ডলফিন-ডলফিন বলে। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বাংলাদেশের অংশ ৬,০১৭ বর্গ কি:মি:। আমরা করমজল  গিয়েছিলাম। লঞ্চ থেকে  নেমেই দেখছিলাম বন বিভিন্ন স্তরের সবুজে সেজেছে- হাল্কা সবুজ, গাঢ় সবুজ, কচি সবুজ, হলদে-সবুজ ইত্যাদি। গাছের স্পর্শে, গন্ধে, অনুভবে ও দর্শনে নিজেকে তৃপ্ত করে নিয়েছিলাম।  

হাঁটতেই দেখে নিয়েছিলাম  সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়া, পশুর, শন ও বেতগাছ। দূরে ঘন বনরাজীতে লুকিয়ে আছে কত অজানা গাছ! ৩৫০ প্রজাতির গাছ আছে সুন্দরবনে। এগিয়ে যেতেই দেখা মিলেছিল বানর বাবাজীর। আকারে ছোট বানরগুলো লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল ডালে-ডালে।  হাঁটতেই দেখা খাঁচায় বন্দি চিত্রা হরিণের, সঙ্গে শাবকও  রয়েছে। কি যে মায়া মাখা চোখ! শাক কিনে খাইয়েছিলাম। পথের ধারে গাছ দুটির ওপর  লিখা বাইন ও গেওয়া। রাস্তার বাঁকে চোখ পড়েছিল গোলপাতার ছাওনি দেওয়া ছোট্ট কুটিরের দিকে। মোড় ঘুরতেই দেখা কুমিরের, তাও খাঁচায়। 
হঠাৎ আমি আর প্রাবন্ধিক অধ্যাপিকা পিংকু দাশ যেন আশ্চর্য এক জগতে এসে থমকে গিয়েছিলাম। কী অপরূপ দৃশ্য! কাঠের তৈরি সাঁকোর মতো একটা ব্রিজ গভীর বনের ভিতর এঁকেবেঁকে চলে গেছে ওয়াচ টাওয়ার পর্যন্ত। ওপাশে মাটিতে পশুদের পায়ের ছাপ দেখে রাতে এদের আনাগোনা সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছিলাম। দীর্ঘ এই সেতু দ্রুত পারি দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। এ যেন এক নির্ভেজাল প্রাপ্তি।

শুধু অনুভূতি দিয়ে দৃশ্যপট সাজিয়ে রাখা, মনের মণিকোঠায়। ওয়াচ-টাওয়ারে ওঠার পর তৃষ্ণাতুর মনের সঙ্গে হয়ে গেল সবুজের মিতালী। এই বন্ধুত্বকে অবজ্ঞা করে পিছু আসতে নারাজ মন। মনে হলো -‘আরো প্রেমে আরও প্রেমে মোর আমি ডুবে যাক নেমে।’ কিন্তু না, সন্ধ্যা নেমে এলে প্রকৃতির এই রূপ প্রলয়ংকরী হতে পারে, তাই ফিরে আসা। হে বনরাজি! বিদায়।

নুরুল হক ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে

×