ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবসাদ ঘোচাতে

বাবুল কান্তি দাশ

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবসাদ ঘোচাতে

ভ্রমণের নেশা বাঙালির জন্মগত

ভ্রমণের নেশা বাঙালির জন্মগত। কাজের ফাঁকে শুধু অবসর মেলার  অপেক্ষা। বেড়ানোতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। ছুটি পেলেই দে ছুট, কিন্তু সবসময় তো ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় না। সাধ আর সাধ্যের  মেলবন্ধন হলে তবেই না মেলে মুক্তির আস্বাদ। দৈনন্দিন জীবনে গতানুগতিক কাজকর্মে একঘেঁয়েমি চলে আসা খুবই স্বাভাবিক। তখন প্রিয় কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে জীবনে সজীবতা চলে আসে। চাঙা হয়ে উঠে দেহ মন। খুঁজে পাই নতুন কাজ করার প্রেরণা।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, মানুষের কাজের ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করতে ঘুরাঘুরি খুব ভালো কাজ করে। নিজের চেনা জানা গণ্ডির বাইরে নতুন কোথাও ঘুরতে গেলে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। যার ফলে কেটে যায় হতাশা ও ক্লান্তি। তাই বছরে অন্ততপক্ষে একবার হলেও ঘুরে আসা দরকার নিজের গণ্ডির বাইরে কোনো শহর বা গ্রাম অথবা দেশের বাইরে। শিক্ষার সত্যিকারের বিষয় জীবন ও প্রকৃতি। প্রকৃতির অফুরন্ত পাঠশালা থেকে পাঠ গ্রহণ করতে হলে আমাদের অবশ্যই ঘর থেকে বেরোতে হবেই। 
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের ব্যানারে আমরা দশ বারোজনের একটি দল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় যাই। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই জনপদে যাওয়ার উদ্দেশ্য  ছিল আগরতলার একশ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবৃত্তি প্রদান। এতে সহযোগিতা করেছিলেন আগরতলার ‘সপ্তপর্ণা’ সাহিত্য পরিষদ। বিশেষত সপ্তপর্ণার সম্পাদক মহীয়সী নারী আগরতলার বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী ও সাহিত্যিক নিয়তি রায় বর্মণ।

একশ’ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের পক্ষ থেকে  নগদ অর্থ, সনদপত্র এবং শিক্ষাপোকরণ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল আগরতলা প্রেস ক্লাবে। অনুষ্ঠানের পরদিন আমরা আগরতলায় অবস্থিত বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করি। উল্লেখযোগ্য ছিল রাজবাড়ী আর নীরমহল। রাজবাড়ী জাদুঘর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাসে সমৃদ্ধ। যা আমাদের প্রজ্ঞালোককে করেছে আলোড়িত।

পরের দিন আমরা মনস্থির করি নীরমহল যাওয়ার। এখানে সেই  নীরমহল পরিদর্শনের কিছু কথা উল্লেখ করা হলো। আগরতলা থেকে গাড়িতে করে নীরমহলের গেটে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের সময় লাগল। রাস্তা খুবই ভালো এবং পথের দু’ধারে রাবার বাগান, চা বাগান, রেললাইনসহ চমৎকার সব দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আহা এ পথ যদি শেষ না হয়...! গাড়ি থেকে আমরা নীরমহলের গেটে নামলাম, তারপর ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে চেপে বসলাম তাতে।

ঘাট থেকে মহলে যেতে হস্তচালিত নৌকায় প্রায় বিশ, পঁচিশ মিনিট এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পনেরো মিনিটের মতো সময় লাগে। আমরা হস্তচালিত নৌকায় করে যাই। নৌকা যতই মহলের দিকে এগিয়ে চলছে ততই অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল মহলটিকে। আর হ্রদের জলে ভেসে বেড়ানো বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখপাখালির ডাক শুনে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে কি! ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম ভিন্ন 
এক পরিবেশে।  

বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে

×