ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরীর বাইসাইকেল

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরীর বাইসাইকেল

কিশোরীর বাইসাইকেল 

বাংলাদেশ উন্নয়ন অভিগামিতায় নজরকাড়াভাবে এগিয়ে চলাও এক অনন্য যাত্রাপথ। সমসংখ্যক নারী যদি এমন ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তা হলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া পিছিয়ে যেতে পারে। বর্তমান সরকার তেমন অগ্রগামী দেশের সম্ভাবনায় শুধু যে নারী শিক্ষা অবারিত করছে তা কিন্তু নয়। বরং বিদ্যালয়গামী ছাত্রীদের নানামাত্রিক সুযোগ-সুবিধার বাতাবরণে নিয়ে আসতে নতুন প্রকল্প হাজির করা হচ্ছে। উন্নত বাংলাদেশ এখনো বাল্যবিয়ের সেই পুরনো বিধিতে বারবার হোঁচট খাবার অপদৃশ্য সামনে চলে আসছে।

তাই যুগোপযোগী প্রকল্প গ্রহণ বালিকা কিশোরী শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিপন্নতা থেকে বের করে আনার নিত্যনতুন আধুনিক কর্মযোগ। সম্প্রতি তথ্য উপাত্তে দৃশ্যমান হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ১৬ হাজার কিশোরীদের মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ। সত্যিই এক অনন্য ছাত্রীবান্ধব মহাপ্রকল্প তো বটেই। হরেক বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে দেশের বালিকা ও কিশোরীরা যেভাবে তাদের শিক্ষা জীবন চালিয়ে যায় তাও এক কঠিন পিচ্ছিল যাত্রাপথ।

সেই কন্যাশিশুর জন্ম নেওয়া থেকে শুরু করে পরবর্তী জীবন গড়ার নানামাত্রিক আঙিনায় উঠে আসে বারবার পেছনের দিকে ফিরে যাওয়া। মান্ধাতা আমলের বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে অগণিত কিশোরী ছাত্রী। তা ছাড়া শিক্ষার্থী জীবন থেকে ঝরে পড়ার হারও বালিকা-কিশোরীদের দিকেই পাল্লা ভারি হচ্ছে। সরকারও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকছে না। আধুনিক বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে প্রকল্পের অধীনে নারী শিক্ষাকে আরও অবারিত আর সার্বজনীন করার মহতি পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চোখে পড়ার মতো।

দেশের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া নি¤œবিত্তের ১৬ হাজার কিশোরীদের বাইসাইকেল বিতরণের নতুন উদ্যোগ বেশ সাড়া জাগানোর মতো। নতুন এই মহাপ্রকল্প প্রথমেই দৃষ্টি দিচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের প্রতি। গুরুত্বপূর্ণ এক দুঃসময় অসহায় কন্যাদের জন্য। দেশের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী বিয়ের পিঁড়িতে বসাতেও সময় লাগে না সচেতন-অসচেতন সব অভিভাবকের। সন্তানদের প্রাথমিকভাবে পরিবারের ওপরই দায় বর্তায় তার কন্যাশিশুকে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলার।

কিন্তু সেখানেই যে ব্যবচ্ছেদ তৈরি হয় তার থেকে কমসংখ্যক বালিকাই বের হতে পারে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। সিংহভাগ অবোধ বালিকা শুধু বাল্যবিয়ে নয় অকাল মাতৃত্বেও জীবনকে হরেক বিপন্নতায় নয়ছয় করে দেয়। সেখান থেকে নতুন পথ উত্তরণ কন্যা শিক্ষার্থীদের জন্য অভাবনীয় এক যুগোপযোগীর আধুনিকতার নির্মাল্য। ইতোমধ্যে কিশোরীদের জন্য নেওয়া এমন ছাত্রীবান্ধব কর্মপরিকল্পনা দৃশ্যমান হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সবুজ সাথী কর্মযোগের মাধ্যমে।

তারই অনুকরণ আর অনুসরণে বাংলাদেশের মহিলা বিষয় অধিদপ্তর কন্যা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন এই কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন করার এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাকে নির্দ্বিধায় সাধুবাদ জানানো ছাড়া আর কোনো উক্তি খুঁজে পাওয়াই যাবে না। দেরিতে হলেও অবোধ বালিকা শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবনকে বিরতিহীনভাবে এগিয়ে নিতে নতুন নিশানা খুঁজে পাওয়াও নবযুগের আধুনিক বরমাল্য।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতি বছর কিশোরী ছাত্রীদের বাইসাইকেল উপহার দিয়ে সরকারিভাবে অসংখ্য ছাত্রীকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। শ্রেণি পাঠে যাতে বিয়ে কিংবা ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে শিক্ষা জীবনকে চালিত করতে পেছনে ফিরতে না হয়। 
সারা বাংলাদেশে এক সঙ্গে এত বড় মহতি প্রকল্প একযোগে সম্প্রসারিত করা অসম্ভবের পর্যায়। সঙ্গতকারণে প্রথমেই দেশের আট জেলায় এমন প্রকল্প সন্নিবেশিত করা হবে। ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ শীর্ষক কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোট অর্থ ব্যয় ধরা হবে ২৫ কোটি টাকা। সময় নির্ধারণে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সাল মেয়াদে পুরো কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্য সামনে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসূচির অগ্রযাত্রা নির্ধারণ করা হয়। 
লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয়ে মূল উদ্দেশ্যই থাকবে, যাতে পুরনো সংস্কার অনুযায়ী ছাত্রীরা বাল্যবিয়ে কিংবা পরবর্তীতে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্যুতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে ক্রমান্বয়ে নিম্ন দিকে ধাবিত হতে পারবে। এতে আট বিভাগের আট জেলায় ৪৮টি উপজেলার কিশোরী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে সাবলীলভাবে নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবে।

যাতে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা মাধ্যম কিশোরী শিক্ষার্থীদের জীবনে আর কোনো ব্যবচ্ছেদ তৈরিতে বারবার পিছু হটে। আধুনিক, উন্নত আর সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার মহান উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নির্দ্বিধায় এগিয়ে যাবে।

×