ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পাটপণ্যের উন্নয়ন

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাটপণ্যের উন্নয়ন

সম্পাদকীয়

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার আয়োজিত বহুমুখী পাটপণ্যের একক মেলা শুরু হয়েছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, পাটপণ্য রপ্তানিকারক এবং সংশ্লিষ্টরা পাটের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিবিধ পাটপণ্য নিয়ে গবেষণা, নকশার উন্নয়ন, বিপণনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি সমন্বিত পথনকশা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রায়ই বলে থাকেন।

সরকার শীঘ্রই এ সংক্রান্ত পথনকশা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মন্ত্রীর বক্তব্য যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। উদাহরণত বলা যায়, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাট গাছের জন্মরহস্য বা জেনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করে বিশ্বে সুনাম অর্জন করলেও অদ্যাবধি প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাটবীজ আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয়  চাহিদা।

তদুপরি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হঠকারী নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে শেষ পর্যন্ত এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজীসহ একে একে বন্ধ করে দিতে হয়েছে সরকারি পাটকলগুলো। আশার কথা এই যে, ক্রমাগত প্লাস্টিক ব্যবহার ও দূষণে জর্জরিত বিশ্বে প্রকৃতিজাত পরিবেশবান্ধব পাটতন্তু ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। 
বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলো লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নতুন করে পিপিপির আওতায় তথা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করতে চাইছে সরকার, যাতে সেগুলো লাভজনক হয়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পাটের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। এমনকি দেশেও বেসরকারি পাটকলগুলো ভালো করছে। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ খাদ্য ও আনুষঙ্গিক দ্রব্য পরিবহনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে এই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। 
বর্তমানে পাট থেকে তৈরি হচ্ছে ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য। পাট থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিথিন। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিসের। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখনো বাংলাদেশের দখলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে যে, সদস্যভুক্ত দেশসমূহ পণ্যের মোড়কসহ বহনের জন্য সব ব্যাগে প্লাস্টিক ও কৃত্রিম আঁশজাত উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করবে।

বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাটের জন্মরহস্যের (জেনোম) তথ্য দিয়ে উদ্ভাবন করেছেন নতুন জাতের পাটবীজ, যা থেকে প্রায় তুলার সুতার মতো স্বচ্ছ আঁশ উৎপাদন করা যায়। এই সুতা দিয়ে উন্নতমানের জামদানিসদৃশ কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব। পাটের এই অমিত সম্ভাবনাকে বহুমুখী ও সর্বতোভাবে কাজে লাগাতে হবে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দলসহ মাঠপর্যায়ের কৃষকদের। তা হলেই কেবল ফিরে আসতে পারে প্রায় হারিয়ে যাওয়া পাটের স্বর্ণালি গৌরব।

×