ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মজীবী নারীর শ্রম

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৬ জুন ২০১৮

কর্মজীবী নারীর শ্রম

নারী-পুরুষ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নারীরা অগ্রগণ্য। কিন্তু তারপরও কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার। যেমন কর্মজীবী নারীদের পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজÑ এমন আপ্তবাক্য বহুকাল ধরে নিনাদিত হয়ে আসছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সে প্রশ্ন থেকে যায়। দীর্ঘকাল ধরেই নারীর ঠাঁই ঘরকন্নার কাজ ও সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালন। এর বাইরের জগত ছিল নারীর জন্য নিষিদ্ধ। নারীকে সমঅধিকারসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা এখনও অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। অথচ এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সভ্যতা ও সংস্কৃতির দায়, একই সঙ্গে রাজনীতি ও সমাজেরও। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের আচরণে অমানবিকতা, হীনম্মন্যতার নিদর্শন ভূরি ভূরি। শিক্ষা-দীক্ষাহীন সমাজে নারীর অবস্থান গৃহপালিতের চেয়েও করুণ। যদিও আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকার কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। সমাজ ব্যবস্থার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় যেমন অনেক এগিয়েছে, তেমনি চাকরি-বাকরিতেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে একজন পুরুষ যে কাজ করেন নারী তার চেয়ে কম নন। কিন্তু এই কর্মজীবী নারীর জীবনে ফুরসত কম। শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, সংসারের বোঝাও তাকে টানতে হয়। এ তুলনায় সংসারের কাজকর্মে পুরুষদের অবদান নামমাত্র। কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কর্মকা-ের কোন আর্থিক মূল্যায়ন নেই বলে তার এই শ্রম দৃশ্যমান নয়। তাই তার বাড়তি শ্রমের দিকটি উপেক্ষিতই থেকে যায়। কর্মজীবী নারীর অফিসের কাজের চাপ শেষে গৃহের কাজের চাপের আধিক্য মেনে নিতে হয়। ফলে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজ দ্বিগুণ বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর থেকে পরিত্রাণ বা উদ্ধারের পথ বুঝি অজানা! পুরুষ ও নারী উভয়ই কর্মজীবীÑ এমন পরিবারিক পরিবেশে শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজ নারীকেই করতে হয়। এ তুলনায় কর্মজীবী পুরুষ রান্না করেন মাত্র আড়াই শতাংশ। কর্মজীবী এক শ’জন নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেরা করে থাকেন, আর পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১২ শতাংশ। অন্য পুরুষদের কাপড় ধোয়ার এই কাজ করেন সাধারণত নারী গৃহকর্মী, পরিবারের অন্য নারী সদস্যরা বা লন্ড্রি। কর্মজীবী নারীদের ৮৮ শতাংশ ঘরবাড়ি পরিষ্কারসহ বাসার বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখার কাজটিও করেন। এ তুলনায় পুরুষরা এক্ষেত্রে নিষ্কর্মা প্রায়। তবে সাত শতাংশ পুরুষ এই দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিডিএস) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে বিষয়গুলো বিশ্লেষিত হয়েছে। জরিপে দেখা যায় ঘরের কেনাকাটার ক্ষেত্রে কর্মজীবী পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার দায়িত্বে থাকেন। পুরুষ যেখানে ৭৭ শতাংশ সেখানে নারী ২৬ শতাংশ। ৫৩ শতাংশ কর্মজীবী নারীকে নিয়মিত পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভাল করতে হয়। বিপরীতে ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এই নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও সংসারের অন্য কাজগুলোতে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ কর্মজীবী পুরুষের চেয়ে বেশি। দেখা যায় কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পান না। আবার শ্রমবাজারে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে; কিন্তু গৃহস্থালি কাজ বাদ দিয়ে নয়। নারীরা ঘরে-বাইরে কাজ করছেন আবার সন্তান জন্ম দিচ্ছেন শুধু নয়, লালন-পালনও করছেন। গৃহস্থালির কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়লে সেক্ষেত্রে নারীর জন্য তা কিছুটা লাঘব হবে। এজন্য জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরী।
×