ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রসেনজিৎ হালদার

অভিমত ॥ চর্চার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২ জানুয়ারি ২০১৮

অভিমত ॥ চর্চার বিকল্প নেই

দিন দিন দেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ কমেই চলেছে। বিভিন্ন রকম সামাজিক কর্মকা-সহ খেলাধুলার দিকেও তরুণ-যুব সমাজের ঝোঁক বাড়ছে না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও যেমন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে আঞ্চলিক পর্যায়ে, প্রকৃত সংস্কৃতিমনাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হচ্ছে। একটি জাতির সঠিক উন্নয়নের জন্য সে দেশের সংস্কৃতিচর্চার বিকল্প নেই। অথচ দেখা যায়, এ সময়ের ছেলে-মেয়েরা ঝুঁকছে বিভিন্ন অসামাজিক কাজসহ নানামুখী নেতিবাচক কার্যকলাপে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সমাজ ব্যবস্থাপনায়। এ প্রজন্মের সন্তানের সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য সকলকে সজাগ হতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে সমাজের উন্নয়নে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই একুশ শতকে একটি ছেলে কিংবা মেয়ে প্রাইমারি স্কুল থেকে হাই স্কুলে উঠলেই হাতে পাচ্ছে মুঠোফোন। মুঠোফোন তো নয়, স্মার্টফোন। পৃথিবীর এক কোণ থেকে আরেক কোণের সমস্ত তথ্যই পেয়ে যাচ্ছে সেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে। মাঠে গিয়ে আসল খেলাধুলা না করে এ সমাজের ছেলেমেয়ে মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিনির্ভর গেমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় মোবাইলের গেম খেলে তারা অনেকেই হয়ে পড়ছে ঘরকুনো । নিতান্তই প্রয়োজন না হলে ছেলেমেয়েগুলো মাঠে গিয়ে খেলায় আর মনোযোগী হতে পারছে না। মাঠের মতো মাঠ পড়ে থাকছে তার জায়গায়, সঙ্কট প্রকৃত খেলোয়াড়ের। আর অল্পবয়সের ছেলেমেয়েগুলো থাকছে তাদের মোবাইল নিয়ে। মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার সুযোগ না পাওয়া কিংবা এর প্রতি অনীহার ফলে অনেক ছেলেমেয়েই ঝুঁকে যাচ্ছে মাদকের রাজত্বে। এতে তারা সামাজিক-অর্থনৈতিক, শারীরিক-মানসিক সমস্যাসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে করতে বিষাদগ্রস্ত হয়ে অনেকে হাতে তুলে নিচ্ছে নেশাজাতীয় দ্রব্য। অবশ্য আধুনিক ফোনগুলোই অনেক সময় নেশার মতো কাজ করে। তবুও মোবাইল ছাড়াও অবসর সময়ে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে। মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার প্রলোভন দেখানো ছেলেমেয়ের সংখ্যা এসময় খুব সামান্য। ব্যাপারটা এমন যে, হাতের মুঠোয় আছে দুনিয়া, মাঠে গিয়ে হবে কি! অনেক ক্ষেত্রেই এদের খেলাধুলার থেকেও বেশি ঝোঁক থাকে মাদকের ওপর। ইন্টারনেট এ সময়ে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ এবং ব্যবহার্য পণ্য, এ কথা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি, ইন্টারনেট ছাড়া এখন কোন কাজ হয় না বললেই চলে। বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রযুক্তির প্রায় সব পণ্যেই রয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। একটি স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ খুলে দেয় অনেক রকমের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দরজা। যে সব দরজা দিয়ে প্রবেশ করে এ সময়ের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েগুলো। দিনে দিনে আসক্তিতে পরিণত হয় ইন্টারনেটে ব্যবহৃত সামাজিক এ মাধ্যমগুলো। যার মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় মাধ্যম। অথচ কত শত ভালো কাজই না হচ্ছে এ সকল সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলোই হার মানিয়ে দেয় মাদকের আসক্তিকে। সকাল-বিকেল সমাজে ভালো কিছু করা তো দূরে থাক, ঘর থেকেই বের হতে চায় না অনেক ছেলেমেয়ে। কেনই বা বের হবে! প্রযুক্তির কল্যাণে তো তারা হাতের মধ্যে পাচ্ছে দুনিয়া। খেলাধুলার যেসব গুণাবলী রয়েছে সে সম্বন্ধে অল্প কিছু বলা যেতেই পারে। যদিও খেলাধুলা উপকারিতা রয়েছে বিভিন্ন রকম। শরীর ও মন উভয়কে চাঙ্গা রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই এ কথা বহু পুরনো। নিয়মিত মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করলে বন্ধু-বান্ধবসহ শ্রদ্ধেয় গুণীজনরাও খুশি হয়। কেননা এখানে তৈরি হয় একটি সামাজিক দল। এ দলে থাকে শুধু হার-জিত, আর খেলার নেশা। খবর জানা, বই পড়া, গান শোনা, গাছ লাগানো, মাছ ধরা ইত্যাদিও হতে পারে অনেকের নেশা। একজন মানুষের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-সহ খেলাধুলার বিরাট প্রভাব রয়েছে। আচার-ব্যবহার, নম্রতা-ভদ্রতা, বিনয়ী হওয়াসহ অনেক ভাল গুণাবলী আয়ত্ত করতে পারে একজন প্রত্যক্ষ সংস্কৃতিকর্মী। প্রত্যেক অঞ্চলে এমন অনেক ছেলেমেয়েই পাওয়া যাবে যাদের সুনাম রয়েছে এলাকার উন্নয়নের জন্য সাংগঠনিক কাজসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করায়। মাদকাসক্তি, স্মার্টফোনের গেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পারিবারিক দূরত্ব, শিক্ষা-বিরতি ইত্যাদি বর্তমানে সমাজের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলাসহ সংস্কৃতিচর্চার প্রতি অনাসক্তির অন্যতম কারণ। যেহেতু এগুলো সমস্যার মূল, তাই সকলেরই উচিত উঠতি বয়সী তরুণ ও যুব সমাজকে ভালো ও ইতিবাচক চর্চা করায় উদ্বুদ্ধ করা। মা-বাবা, শিক্ষকসহ শ্রদ্ধেয়জনদের এগিয়ে আসতে হবে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ছেলেমেয়েদের আলোর পথ দেখাতে, অনুপ্রাণিত করতে। সব খারাপ আসক্তিগুলো অতিক্রম করে, শুভ ও সুন্দর চর্চার মাধ্যমে তারুণ্য হয়ে উঠুক অপরাজেয়। এটাই কাম্য। লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×