ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২৫ মে ২০২৪

খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি

.

এক সময় দেশে খাদ্য সংকট থাকলেও বর্তমানে আমরা খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার (এফএও) জরিপে বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ১০ অর্থবছরে ডিম দুধ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। মাংস উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ এখন কোনো কোনো খাদ্য রপ্তানিতেও সাফল্য দেখাচ্ছে। তারপরও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। আমাদের এখনো অনেক খাদ্যদ্রব্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে এখনো বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা আইপিসিসির জরিপে উঠে এসেছে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বেড়েছে .৪২ মিলিমিটার। যার প্রভাবে উপকূলের ৫০ থেকে ৬০% এলাকায় লবণাক্ততা বাড়তে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকার খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন ঘনঘন হচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের উৎপাদন ব্যবস্থাকেই হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আর্থিক অসামর্থতায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আমিষজাতীয় খাদ্য কেনা কমিয়েছে। এতেও পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। দেশের অধিকাংশ খাদ্যশস্য গ্রামে উৎপাদন হলেও সেখানকার মানুষের মধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। অবস্থায় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টিও নিশ্চিত করা চাই।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কৃষি, রাজনীতি অর্থনীতিবিষয়ক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এবারের বাজেটে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন। তারা কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন। কেননা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলের সমন্বিত উদ্যোগেই টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য সকল দেশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। বর্তমানে হাইব্রিড পুঁজিবাদের প্রভাবে এক ধরনের এন্টারপ্রাইজভিত্তিক কৃষির উদ্ভব হয়েছে। কৃষিজমিতেও প্রচুর নগরায়ণ হচ্ছে।

এতে প্রকৃত কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন দৃষ্টি কাম্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষক কৃষির কল্যাণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি, গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আসন্ন বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দেওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যকে নীতি সহায়তা দেওয়া উচিত। খাদ্য নিরাপত্তা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের দিনগুলো হয়ে উঠুক সুন্দর, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদÑ এটাই প্রত্যাশা। 

×