.
বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে ছাত্রলীগের বৃক্ষ রোপণ ও চারাগাছ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঢাকায় ২৫ শতাংশ বনায়ন সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। ছাত্র সংগঠনটির নেতারা ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দেন। ক্রমশ উজাড় বৃক্ষের এই মহানগরীতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গাছ লাগানোর কথা বলা হলে সেটি আশা জাগায় এবং প্রশংসিত হয়। পক্ষান্তরে সৌন্দর্য বর্ধন বা অন্য কোনো অজুহাতে প্রকাশ্যে বা গোপনে গাছ কাটার ঘটনা ঘটলে সেটি হয় নিন্দিত। মানুষ তার নিজের ভালোটা বোঝে বলেই এমন সঙ্গত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। বেশ কিছুকাল আগে ঢাকা মহানগরীর অপর অংশ উত্তর সিটি করপোরেশন রাস্তার ধারে দুই লাখ চারা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রশ্ন জাগে, দুই লাখ চারা গাছ কতদিনে লাগানো সম্পন্ন হবে এবং সেগুলো পরিণত হয়ে ছায়া প্রদানসহ মানবসমাজ ও পরিবেশের উপকারে আসবে!
ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি সবুজ এলাকা, ফাঁকা জায়গা কমেছে গত আট বছরে। বলা যায় রীতিমতো বৃক্ষনিধন উৎসবই সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে সবচেয়ে বেশি জলাভূমি ভরাট হয়েছে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) গত বছরে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বৈশ্বিক মানদ- অনুযায়ী, একটি শহরের বসবাসের যোগ্য হতে বৃক্ষ আচ্ছাদিত বা সবুজ এলাকা কম করে হলেও ১৫ শতাংশ প্রয়োজন। কিন্তু এখন ৮ শতাংশের বেশি নেই সবুজ এলাকা। ঢাকার সবুজ এলাকা কমার পেছনে পার্কগুলোতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। খেলার মাঠ দখল করে হাটবাজার ও ক্লাব স্থাপন এবং গাছ কাটাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষতি নিরসনে পরিকল্পনা করে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বাড়ানো এখনো সম্ভব। উল্লেখ্য, পরিবেশ উপযোগী নয়, এমন গাছের আধিক্য রয়েছে রাজধানীতে। গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ কেটে ফেলার তথ্য জানিয়ে চিফ হিট অফিসার বলেছিলেন, ‘নগরে বনায়ন করা খুব জরুরি। এখানে যে ফাঁকা এবং পরিত্যক্ত জায়গাগুলো রয়েছে সেখানে সবুজায়ন করার দিকেও কর্তৃপক্ষ নজর দিচ্ছে। তবে আরও অনেক পার্ক এবং সবুজে ঘেরা জায়গা দরকার।
তাতে তাপমাত্রা যেমন কমবে, তেমনই পাখিসহ নানা প্রাণীও ফিরে আসবে।’ এ বছর লাগাতার তাপপ্রবাহের যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, তাতে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আগামী দিনগুলোয় ভয়াবহ উত্তাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মহানগরবাসী তরুণ প্রজন্মের ভেতরে সবুজ স্বপ্ন বুনে দেওয়া চাই। প্রদর্শনমূলক কর্মসূচি নয়, বৃক্ষরোপণে থাকতে হবে অঙ্গীকার আর দায়িত্বশীলতা। নার্সারি থেকে চারা এনে গর্ত করে রোপণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ভালো, কিন্তু তার পাশাপাশি জরুরি হলো ‘গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ কিংবা ‘বৃক্ষ রোপণ ও সুরক্ষা’ কর্মসূচি পালন। সংশ্লষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশেরই মঙ্গল।