ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৩ জুলাই ২০১৬

গণপরিবহনে নৈরাজ্য

রাজধানীতে গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য নতুন নয়। তবে দেশের সর্বত্রই তা চলছে প্রায় অবাধে। ঈদের আগে-পরে যাত্রীসাধারণকে প্রায় জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় এক রকম ওপেন সিক্রেট। প্রতি বছরই এ নিয়ে লেখালেখি হয় গণমাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও এ নিয়ে হাঁকঢাক ও হম্বিতম্বি করেন। তবে একই ট্রাডিশন চলছে সমানে। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা রাজধানীতে নিত্যদিনের ঘটনা। মূলত সিটিং সার্ভিসের পরিবর্তে চলছে চিটিং সার্ভিসÑ যাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত প্রতারণা। শতকরা ৮৭ ভাগ গণপরিবহনে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার কথা না থাকলেও কে শোনে কার কথা। বাসের চালক ও সহকারী থোড়াই তার পরোয়া করে থাকে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের মর্জিমাফিক তোলা হচ্ছে, নামানো হচ্ছে। অফিস শুরু ও ছুটির সময় এহেন খেয়ালখুশির প্রবণতা বেশি। ফলে যাত্রীরা স্বভাবতই হয়ে পড়েন জিম্মি। অথচ বিআরটিএ বলছে, রাজধানীতে গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাহলে প্রশ্ন, অর্ধশতাধিক যানবাহন এই সাইনবোর্ড ও ব্যানার বডিতে ধারণ করে এতদিন ধরে চলছে কেমন করে? গত এক বছরেই চুক্তি ভঙ্গ করে ঢাকায় নেমেছে ৩০টির মতো নতুন পরিবহন কোম্পানি। এদের শক্তি ও সাহসের উৎস কোথায়? যোগাযোগমন্ত্রী নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। বিআরটিএ বলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে দোষীদের বিরুদ্ধে। যাত্রীরা জানতে চায়, কবে নেয়া হবে ব্যবস্থা? বার বার বলে এবং দৈনিক বাস ভাড়া নিয়ে বচসা তথা ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে তারা ক্লান্ত, শ্রান্ত। সরেজমিন দেখেশুনে অভিজ্ঞতা থেকে অবশেষে মন্ত্রী স্বয়ং বলতে বাধ্য হয়েছেন, যে কোন মূল্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে গণপরিবহন ব্যবস্থায়। সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে তিন হাজার নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনাটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সাড়া মিলেছে। প্রস্তাবও মোটামুটি চূড়ান্ত। বর্তমানে পরিবহন খাতে বাস মালিকদের ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ। এতে তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারের তরফ থেকে এবার এই কর মওকুফ করে দেয়ার আশ্বাস মিলেছে। তিন হাজার নতুন বাসের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা সরকারী ভর্তুকির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। ঋণের চার ভাগের দায়িত্ব মালিকদের। প্রস্তাব অনুযায়ী বর্তমানে সচল ১৯০টি পরিবহন কোম্পানিকে একীভূত করে পাঁচটি কোম্পানি করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে তিন হাজার নতুন পাবলিক বাস চালু হবে বলে আশা করা যায়। নতুন বাস নামানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরনো জরাজীর্ণ লক্কড়ঝক্কড়মার্কা বাসগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে বলেও বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরিকল্পনা ভালই বলতে হবে। তবে কথায় বলে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। নগরবাসীরও হয়েছে অনুরূপ অবস্থা। নতুন তিন হাজার বাসের মধ্যে এসি-ননএসি দুটোই থাকবে। ভাল কথা, তবে বাসগুলো যেন সচল থাকে এবং টেকসই হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বিআরটিসিসহ বর্তমানে সচল বাসগুলোর জরাজীর্ণ চেহারা দেখলে রীতিমতো করুণা হয়। নতুন বাসের ক্ষেত্রে যেন অনুরূপ অভিজ্ঞতা না হয় নগরবাসীর তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে।
×