ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সবার জন্য বাধ্যতামূলক অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ৩ জুন ২০২৫

সবার জন্য বাধ্যতামূলক অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। আজ সোমবার বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দিতে পারেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার সব সরকারি চাকরিজীবী ও নির্দিষ্ট বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৬ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছিলেন, চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু খাতের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছর থেকে সবার জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের (করপোরেট কর) রিটার্নও অনলাইনে দেওয়া যাবে।

দেশে বর্তমানে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (টিআইএন) প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ। যাদের মধ্যে গত বছর রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় ৪৫ লাখ।

ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চাইলে প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে, ওয়েবসাইটের ই-রিটার্ন শাখায় ক্লিক করুন। সেখানে 'সাইন আপ' অপশনে গিয়ে প্রথম বক্সে আপনার টিআইএন নাম্বার লিখুন। দ্বিতীয় বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বারটি লিখুন (প্রথম শূন্য বাদ দিয়ে)। এরপর ক্যাপচা কোড দিয়ে 'ভেরিফাই' বাটনে ক্লিক করুন। ফোনে আসা ওটিপি ব্যবহার করে আপনার ফোন নাম্বারটি নিশ্চিত করুন। সবশেষে ই-রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন করতে একটি পাসওয়ার্ড ঠিক করুন।

ধাপ ১: ই-রিটার্ন সিস্টেমে প্রবেশ 

একবার নিবন্ধন করা হয়ে গেলে এরপর আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার টিআইএন, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে পারবেন। এরপর একটি ড্যাশবোর্ড পাবেন। এর বাম দিকে থাকা 'রিটার্ন সাবমিশন' অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ ২: কর যাচাইয়ের তথ্য 

ই-রিটার্ন ফরমের শুরুতেই থাকবে 'ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশন'। সেখানে আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য– রিটার্ন স্কিম, আয়ের সাল ও উৎস দিতে হবে। আপনার আয় যদি করমুক্ত হয়, তাহলে আয়ের পরিমাণের পাশাপাশি 'রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস' দিতে হবে। 

ধাপ ৩: আয়ের বিবরণ

এই পর্যায়ে, 'হেডস অফ ইনকাম'-এ গিয়ে আপনার বিভিন্ন আয়ের উৎস দিন। এখানে আপনার বেতন, নিরাপত্তা সুদ, বাড়ি-সম্পত্তি থেকে আয়, কৃষি আয়, ব্যবসা থেকে আয়, মূলধন লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।

যদি আপনার বেতন আপনার আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তাহলে 'স্যালারি' অপশনে ক্লিক করুন। এর বাইরে আয় থেকে থাকলে 'ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস' অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে অন্যান্য যেসব উৎস থেকে আয় করে থাকেন, তাতে ক্লিক করুন। 

এরপর 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

ধাপ ৪: অতিরিক্ত তথ্য

এই ধাপে একটি ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার প্রাথমিক আয়ের উৎসের স্থান ঠিক করবেন। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মতো অনেকগুলো অপশন থাকবে। 

আপনি যদি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনি অভিভাবক হয়ে থাকেন, সেটিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এছাড়া, বিনিয়োগের জন্য আপনি করমুক্তির দাবিদার কি না এবং আপনি কোনো সংস্থার শেয়ারহোল্ডার পরিচালক কি না, তা 'হ্যাঁ' বা 'না'-এর মাধ্যমে উত্তর দেবেন।

ধাপ ৫: আইটি১০বি পূরণ 

যদি আপনার সম্পূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা বা তারচেয়ে বেশি হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্টেটমেন্ট ফর্মের ব্যয় বিভাগটি পূরণ করতে হবে। এজন্য 'আইটি১০বি ফর্ম' পূরণ করতে হবে। সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখের কম হলে তা পূরণ করতে হবে না। এক্ষেত্রে, আপনার ও আপনার পরিবারের বার্ষিক খরচের হিসেব দিতে হবে। 

এরপর 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান। 

ধাপ ৬: আয়ের বিবরণ

অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়, বৈদেশিক আয় বা কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের বিবরণ দিন। বেতন বা করযোগ্য বিনিয়োগ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়ের তথ্য দিতে আপনি ড্রপডাউন মেনুতে বিভিন্ন অপশন পাবেন। 

'এনি আদার ইনকাম' অপশনে ক্লিক করলে সেখানে আপনার অন্য আয়ের উৎস, অর্থ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, প্রাপ্ত সর্বশেষ আয়ের তারিখ ও পরিমাণ, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের হিসেব দিতে হবে। এসব তথ্য দেওয়ার পর আপনার নেট আয়ের হিসেব দেখানো হবে। 

আবার 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান। 

ধাপ ৭: বিনিয়োগ বিভাগ

আপনি যদি বর্তমানে জীবন বীমা প্রিমিয়াম, ডিপোজিট প্রিমিয়াম সার্ভিস (ডিপিএস), অনুমোদিত সঞ্চয়পত্র, সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড, গ্রুপ বীমা প্রিমিয়াম, অনুমোদিত স্টক বা শেয়ার, কিংবা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগ করে থাকেন, সেগুলো এখানে উল্লেখ করবেন। 

ধরুন আপনি যদি 'ডিপিএস' অপশনে ক্লিক করেন, তাহলে সেখানে ব্যাংকের নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দিতে হবে। এভাবে অন্যান্য অপশনে গেলেও আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। 

আবার 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান। 

ধাপ ৮: ব্যয়

এই বিভাগে, মোট আয়ের বিপরীতে আপনার মোট ব্যয় পর্যালোচনা করতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের বিভাগ থাকবে। খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান (পরিবহন, গৃহস্থালি, ইউটিলিটিসহ), বাচ্চাদের শিক্ষা এবং অন্য কোনো ব্যয়ের খাত থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এই বিবরণগুলো পূরণ করলে আপনার বকেয়া করের হিসেব দেওয়া হবে। 

ধাপ ৯: কর এবং পেমেন্ট

এখানে আপনি ইতোমধ্যে কোনো উৎস কর এবং অগ্রিম কর প্রদান করে থাকলে তার হিসেব দিতে পারবেন। এই হিসেব দেওয়ার পর আপনার মোট প্রদেয় করের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। আপনার আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া না থাকলে আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ হবে শূন্য। একে 'শূন্য রিটার্ন' বলা হয়। 

ধাপ ১০: রিটার্ন ভিউ

'অনলাইন রিটার্ন' অপশনে ক্লিক করলে আপনি রিটার্ন ফর্মটি দেখতে পাবেন। তার নিচে 'ইয়েস' অপশনে ক্লিক করলেই আপনার রিটার্ন চলে যাবে। কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকলে আপনি 'নো' অপশনে ক্লিক করতে পারেন এবং আবার সব তথ্য দেখে নিতে পারেন। 

ধাপ ১১: রসিদ ডাউনলোড করুন

যদি আয়কর রিটার্ন সফলভাবে জমা হয়, তাহলে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা লেখা দেখবেন। সেখানে আপনি একটি রেফারেন্স আইডি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। সেটি ডাউনলোড করে অনলাইনেই আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। অথবা সেটি প্রিন্ট করে আয়কর অফিসে পাঠাতে পারেন। 

এই প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হলে আপনি কোনো কর আইনজীবীর দ্বারস্থ হতে পারেন। এছাড়া, বিডিটেক্স এবং শাপলা ট্যাক্সের মতো অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম ও অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলো আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করবে।

 

ফুয়াদ

×