
বাংলাদেশের তাজা আম এবার প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে প্রবেশ করেছে। বুধবার (২৮ মে) রাতে তিন টন তাজা আমের একটি চালান চীনের হুনান প্রদেশের চাংশা শহরে পৌঁছেছে। এটি বাংলাদেশের আম চীনে রপ্তানির প্রথম আনুষ্ঠানিক সূচনা।
চাংশা হুয়াংহুয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানের শিপিং লেবেল, উদ্ভিদস্বাস্থ্য সনদ যাচাই করেন এবং আমের প্যাকেজিং ও গুণগত মান সরেজমিনে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম না পাওয়ায় চালানটি দ্রুত ছাড়পত্র পায়।
এই আম বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত, যার বৈশিষ্ট্য হলো মসৃণ টেক্সচার, উচ্চ চিনি মাত্রা এবং সুগন্ধযুক্ত উষ্ণমণ্ডলীয় স্বাদ। আমগুলো চীনের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, সুপারমার্কেট এবং তাজা ফলের চেইনগুলোতে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হুনান বাবাইলি হোল্ডিং গ্রুপ।
এর আগে বাংলাদেশি আম প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানি হতো। এবার চীনে রপ্তানি শুরু হওয়ায় বছরজুড়ে অন্তত ১০০ টন আম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
চাংশা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আম রপ্তানির প্রস্তুতিপর্বে তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতি-পরামর্শ, কোম্পানি নিবন্ধন এবং কোয়ারেন্টাইন অনুমোদনের মতো পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দিয়েছে। বিমানবন্দরে ‘ফ্রেশ এক্সপ্রেস’ নামে একটি বিশেষ টিম গঠনের মাধ্যমে দ্রুত শুল্ক প্রক্রিয়া ও বাস্তব সময়ের ফ্লাইট নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের তাজা আম আমদানির অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে দেশে আনুমানিক ২৭ লাখ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার টন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, যেটি ‘আমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত, সেখানে উৎপাদিত আমের মান সর্বোচ্চ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় কৃষকেরা চীনের ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছেন, যা রাসায়নিক বালাইনাশকের তুলনায় অধিক নিরাপদ।
২০২৪ সালে চীনের ফল ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। দেশটির ফল রপ্তানি ছিল ৮.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২০.৯ শতাংশ বেশি। ফল আমদানিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
এ বছর বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, টানা ১৫ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে অবস্থান করছে।
রিফাত