
ছবিঃ সংগৃহীত
ভিসা পেয়ে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া এবং অতিরিক্ত আয়ের মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন যেন দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্যতম বড় আশা। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্নে নেমে এসেছে অন্ধকার। এ ধাক্কা এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে—যেখানে কাজ করছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি।
সৌদি সরকার বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এ ভিসা একটি কোটাভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সৌদি নিয়োগকর্তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই স্থগিতাদেশ ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কোটার আওতায় নতুন কোনো কর্মী নিয়োগ করা যাবে না।
নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলো:
বাংলাদেশ ছাড়াও ব্লক ভিসা স্থগিতাদেশের আওতায় পড়েছে—ভারত, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, টিউনিসিয়া, ইয়েমেন এবং মরক্কো।
এসব দেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ সৌদিতে পাড়ি জমান কর্মসংস্থানের আশায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এই দেশগুলোর অর্থনীতিতে রাখে বিশাল ভূমিকা। তাই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা শুধু কর্মীদের জন্য নয়, বরং নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও তৈরি করেছে চরম অনিশ্চয়তা।
হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন?
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি হজ মৌসুম শেষে নেওয়া একটি সাময়িক প্রশাসনিক পদক্ষেপ। এর লক্ষ্য হচ্ছে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক চাপ হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এ সিদ্ধান্ত সাময়িক, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদেও পড়তে পারে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ব্লক ভিসার অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল, তাদের পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
বাংলাদেশে কী অবস্থা?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা অনেকটাই হতাশাজনক। অনেকে ইতোমধ্যে ট্রেনিং সম্পন্ন করে হাতে কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছেন, কেউবা টিকিট কনফার্মের অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ এ ঘোষণায় যেন সব কিছু থমকে গেছে।
জানা গেছে, ব্লক ভিসা এক ধরনের সরকার অনুমোদিত কোটাভিত্তিক পদ্ধতি। অনুমোদন পাওয়ার পর নিয়োগকর্তারা নিজ দেশের প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদন করতে পারেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজের সুযোগ পান।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত?
প্রশ্ন উঠছে—এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কি দীর্ঘায়িত হবে, নাকি দ্রুতই আবার খুলে যাবে সৌদির শ্রমবাজার? আপাতত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতই এই সংকট উত্তরণের আশা করা হচ্ছে।
ইমরান