ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কর্মবিরতি প্রত্যাহার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

কর্মবিরতি প্রত্যাহার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের আন্দোলনের মুখে বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে দীর্ঘ চার বছরের আন্দোলনের অবসান হলো রেলওয়ের রানিং স্টাফ শ্রমিকদের। এর আগে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এ সুবিধা সীমিত করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। বুধবার এই সুবিধা পুনর্বহাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগেই গত মঙ্গলবার মধ্যরাতেই চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন রানিং স্টাফরা। এর ফলে গত মঙ্গলবার রাত  ৩টা থেকে সারাদেশে শুরু হয় রেল চলাচল। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকায় সিডিউল বিপর্যয় সৃষ্টি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা থেকে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে। সিডিউল এলোমেলো হওয়ার কারণে প্রতিটি ট্রেন এক-দুই ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় প্রবেশ ও ছেড়ে যায়।

ট্রেনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এদিকে কর্মবিরতির কারণে ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। সারাদেশের ট্রেনের সিডিউল ঠিক হতে এক থেকে দুইদিন সময় লাগবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির ৩০ ঘণ্টায় রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে। মঙ্গলবার ট্রেন বন্ধ থাকায় এই ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কোচ ব্যালান্সের কারণে জয়ন্তিকা ও বুড়িমারী এক্সপ্রেসের বুধবার যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। যে দুটি ট্রেনযাত্রা বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হবে।

এদিন পারাবত এক্সপ্রেস চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। অন্যান্য ট্রেনের এক থেকে দেড় ঘণ্টা সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। যেহেতু গভীর রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে (ধর্মঘট প্রত্যাহার) তাই যাত্রীদের এসএমএস দেওয়া হয়নি। যারা যেতে পারেননি, তাদের বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে ঢাকা থেকে ২০টি ট্রেন ছেড়ে গেছে, ঢাকায় এসেছে ২৭টি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বুধবার ভোর রাত থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে  স্বস্তি ফিরেছে। বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের তথ্যানুয়ায়ী, সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে মোট ২০ ট্রেন ছেড়ে গেছে। ঢাকায় পৌঁছেছে ২৭টি। এছাড়া জয়ন্তিকা ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়াও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তারা জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেকেই বিপদে পড়েছেন। আজ (বুধবার) ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় অনেকটা ভালো লাগছে। যাত্রা বিলম্ব হওয়ায় কিছু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপন জারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ॥ রানিং স্টাফদের আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বহাল রেখে সংশোধনী দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে কিছুটা দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি সংশোধনী চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বহাল রাখার কথা জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালের ২১ আগস্ট ৯১ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রের (ক) অনুচ্ছেদটি এবং অর্থ বিভাগের গত ২৩ জানুয়ারিতে ২৭ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রটির রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্যতার বিষয়টি সংশোধন করা হলো। সংশোধনটি হচ্ছে, রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ের এস্টাবলিশমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা প্রাপ্য হবেন না।
এ রানিং স্টাফরা হলেন-গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তারা সাধারণত দীর্ঘসময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তারা। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এ সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর আগে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক-সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এই পরিক্ষিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করে রানিং স্টাফরা। তাই গত মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের জন্য দিনভর দফায় দফায় বৈঠকে বসেও কোনো সমাধান, সমঝোতায় আসতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে মঙ্গলবার দিনগত রাত ২টার পর সমস্যার আপাত সমাধান হয়।
মঙ্গলবার দিনগত রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধানে বৈঠক হয় রেল উপদেষ্টার সঙ্গে। বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ছিলেন। রেলওয়ে ও সড়ক উপদেষ্টার বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে বের হয়ে রাত ২টা ১৫ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ কর্মবিরতি প্রত্যাহার হয়েছে বলে জানান।

×