ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

৪২০ টাকা মূল্যের ওমানি মুদ্রা লাখে বিক্রি, ৪ প্রতারক গ্রেপ্তার 

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১০ মে ২০২৪

৪২০ টাকা মূল্যের ওমানি মুদ্রা লাখে বিক্রি, ৪ প্রতারক গ্রেপ্তার 

৪ প্রতারক গ্রেপ্তার 

  • ছাত্র ও চালক সেজে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন 

গত ৫ তারিখ দুপুর বেলা। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। ওয়ারীর আরকে মিশন রোডের আনসার ক্যাম্পের সামনে পৌঁছাতেই পাশে সিএনজি নিয়ে দাঁড়ায় এক চালক এবং দেলোয়ার হোসেনকে ওমানের একটি মুদ্রা দেখিয়ে বলে, তাকে এক বিদেশি যাত্রী টাকাগুলো দিয়েছেন। দেলোয়ার সরল বিশ্বাসে ওমানের মুদ্রা হাতে নিয়ে দেখছিলেন। এসময় চক্রের আরেকজন পাশ থেকে সিএনজি চালকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ২টি নোট কিনে ব্যাংক যায়। ব্যাংক থেকে এসে চালক ও দেলোয়ারকে জানায়, তিনি একেকটি নোট ২৬ হাজার টাকা করে ভাঙ্গিয়েছেন। এসময় দেলোয়ারকে প্রস্তাব দিলে তিনিও লোভে পড়ে সঙ্গে থাকা ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকটি ওমানের নোট কিনে নেন। এরপর তিনি ব্যাংকে নিয়ে ভাঙ্গাতে গেলে  জানতে পারেন, ওই মুদ্রার বাংলাদেশি মূল্য মাত্র ৩০ টাকা। 


এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ওয়ারী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন। মামলাটি তদন্তে নেমে এসআই প্রদ্যুত কুমার ছাত্র সেজে, এএসআই মো. নজরুল ইসলাম সিএনজি চালকের ছদ্মবেশে এবং কনস্টেবল মো. জাহাঙ্গীর আলম মাথায় টুপি ও হাতে বাজারের ব্যাগ দিয়ে মাঝ বয়সী লোকের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. সুবজ, আল আমিন, মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ও মাসুম হোসেন। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২১ হাজার টাকা এবং প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তারের পরপরই রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত ২ দিনের  রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 


বিষয়টি নিশ্চিত করে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনকে ওমানের ১০০ বাইসা দেখিয়ে এর মূল্য বাংলাদেশি টাকায় অনেক বেশি বলে জানায় চক্রটি। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা চক্রের দুজন পাশ থেকে এসে চালকের কাছ থেকে ওমানের মুদ্রার কয়েকটি নোট কিনে নেয়। যাতে করে দেলোয়ারও দেখাদেখি লোভে পড়ে বাকি নোটগুলো কিনে। দেলোয়ার ঠিকই নোটগুলো কিনে প্রতারণার শিকার হয়। ডিসি জানান, ভুক্তভোগীর মামলা দায়েরের পর ওয়ারী থানার এসআই প্রদ্যুত কুমার, এএসআই নজরুল ইসলাম এবং কনস্টেবল জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলের সিসিটভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে সিএনজির নাম্বার শনাক্ত এবং মাথায় টাক ওয়ালা একজন ও হাতে পানির বোতলওয়ালা একজনকে শনাক্ত করে। এরপর বিশেষ কৌশলে ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার চারজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে চক্রটির আরও সদস্য রয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  


অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ওয়ারী থানার এসআই প্রদ্যুত কুমার জানান, চক্রটি একই ধরনের অপরাধ কর্ম করার উদ্দেশে শুক্রবার এই এলাকায় আসে। এর আগেই তিনি টিম নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ওঁৎ পেতে বসে থাকেন এবং  চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শুক্রবারই আসামিদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে তাদের এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 
 

টুম্পা

×