ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের দাম চড়া

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

বইয়ের দাম চড়া

রাজধানীর নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান

রাজধানীর নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান। নাম সারা প্রকাশনী। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরই এক ব্যক্তি মেয়ের জন্য একাদশ শ্রেণির বই কিনতে এলেন দোকনটিতে। নাম তোজাম্মেল মিয়া। পেশায় তিনি রিকশাচালক। কিন্তু বইয়ের দাম শুনে তার চোখে জল। এক সেট বইয়ের দাম ৫ হাজার টাকা হলেও তার কাছে আছে ৩,৬০০ টাকা। পরে তার আকুতিতে দোকানী মায়া করেই লস জেনেও এক সেট বই তাকে দিয়ে দিলেন।
তোজাম্মেল মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ক্লাস নাইন টেন পর্যন্ত সরকার ফ্রি বই দিয়েছে। এমনিই সংসার চালাইতে পারি না। বই কিনতে ম্যাইয়ার জন্য এত খরচ করতাম না। কিন্তু ম্যাইয়েটা এ প্লাস পাইছে। স্যাররাও কইছে ম্যাইয়াটা পড়াশুনায় ভালো। যে কারণেই এত টাকা দিয়ে বই কিনা।’
সারা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো. পলাশ বলেন, তোজাম্মেল মিয়া একা নয়। প্রতিদিনই এমন অনেক ক্রেতা আসেন। সেদিন একজন মহিলা এসেছিলেন। মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। তিনিও বইয়ের দাম শুনে কান্না শুরু করে দেন। পরে বইয়ের পুরো সেট না নিয়ে অর্ধেক বই নিয়ে বাসায় ফেরেন। সবাইকে মায়া করলে তো আর ব্যবসা চলবে না! শুধু নি¤œ মধ্যবিত্ত নয়। ক্লাসের বই ছাড়া গাইডের দামও চড়া হওয়ায় মধ্যবিত্তেরও হাঁসফাঁস অবস্থা।

উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, মেডিক্যাল, প্রকৌশল, বিবিএ, এমবিএসহ প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মূল্য বেড়েছে ৪০-৫০ শতাংশ। আসছে নতুন বছর মানেই সন্তানের স্কুলে ভর্তি, স্কুল ইউনিফর্মসহ খরচের চাপে পিষ্ট অভিভাবকরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা কাগজের দাম বেড়ে যাওয়াকে শিক্ষা খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। এর সঙ্গে দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছেন অনেকে। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় সহসাই দাম কমার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে ॥ খুচরা বই বিক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একটা সময় ফটোকপি করে বই বিক্রি হলেও দ্বিগুণের বেশি খরচ বাড়ায় সেটিও করা হয় না। ফলে সব ধরনের বইয়ের বিক্রিও কমেছে।
নীলক্ষেত ও বাংলাবাজার এলাকার একাধিক বই বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক, চাকরির প্রস্তুতির বই, ইংলিশ মিডিয়াম, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, এমবিএ, মেডিক্যাল এই সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে ৪০-৫০ শতাংশ। এর সঙ্গে ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতারা বিবাদেও জড়াচ্ছেন নিয়মিত। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এবার নতুন বই কিনতে পারবে না ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী। আগে ২৫০০-৩০০০ টাকায় বই পাওয়া যেত ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ে। এখন তা ছয় হাজার টাকায় কিনতে হবে।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী এক সেট বই কিনতে এসে অর্ধেক কিনে ফিরছেন। গত ৩ মাসের ব্যবধানে মেডিক্যালের বইয়ের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। মেডিক্যালের এক সেট বইয়ের দাম ছিল- ৮০০০- ৮৫০০ টাকা। এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় মিলছে পুরো সেট বই। দেশে কোনো প্রকাশনী না থাকায় এসব বই সবই পাইরেসি করা। মেডিক্যালের এনাটমি,  লেখক দত্ত- এর দাম ছিল ৪৫০ টাকা, এখন তা ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এনাটামি লেখক- বিডি চোরাশিয়া- এই বইয়ের দাম ছিল ৯০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৫০০ টাকা। বাংলাদেশী লেখক আরিফের লেখা গাইডের দাম ছিল ১০০০ টাকা। এখন ১৫০০ টাকা। এই গাইডের  কোনো রং নেই। নি¤œমানের সাদা কাল কাগজে এসব বইয়ের মানও যাচ্ছেতাই। এনাটমির নিটার এর দাম ছিল ৭০০, এখন তা বেড়ে ১৪০০ টাকা।
বিবিএ মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট, বইয়ের দাম ১২০ টাকা ছিল, এখন ৩০০ টাকা। অ্যাকাউন্টিংয়ের বই ১২০ টাকা এখন ২৫০ এ বিক্রি হচ্ছে। এই ধরনের এক সেট বই কিনতে হাজার ১২০০ লাগত। কিন্তু দাম বাড়ার কারণে তা এখন ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের দামও বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। শাহজাহান তপনের লেখা পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের দাম ছিল ৪০০ টাকা। এখন তা ৫৫০ টাকা। রসায়ন বই বিক্রি হচ্ছে ৪৮৫ টাকা যার দাম ছিল ৪০০। ইঞ্জিনিয়ারিং বইগুলোও সব পাইরেসি করা। পদার্থ বিজ্ঞান ওয়াকার আগে ২৫০ ছিল এখন ৩৮০ টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এন্টন ক্যালকুলাস ১৮০ টাকা থেকে এখন বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশনের জয়কলি এর দাম ছিল ৩০০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকায়, প্রশ্ন ব্যাংক ১২০ টাকা ছিল, এখন ২৮০। নোট গাইডের সেট ছিল, ১৮০০ টাকা। এখন সাড়ে চার হাজার টাকায় ঠেকেছে।
নিউ বুকস গ্যালারির বই বিক্রেতা মো, শামসুল বলেন, ৪০ ভাগ দাম বেড়েছে বাংলাদেশী বইয়ের আর পাইরেসি করা বইগুলোর দাম ৫০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দোকানী জানান, তার দোকানে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার বই বিক্রি হত। এখন তা নেমে ১২ হাজার টাকায় ঠেকেছে। কিন্তু এটিই বই বিক্রির মৌসুম।
কাগজের ১৬০ টাকা রিম ছিল। এখন তা ৪০০ টাকা। যে কারণে ফটোকপির মূল্য বেড়েছে। জিসান বুক শপ, নীলক্ষেতের কর্মচারীরা জানান, আগে ফটোকপি ও বাঁধাই করে বই বিক্রি চললেও কাগজের দামের কারণে তা বন্ধ হয়েছে। আগে প্রতি কাগজ ফটোকপি ৭০ পয়সায় ছিল। এখন তা ঠেকেছে ১ টাকা ৮০ পয়সায়। অফসেট পেপারে ফটোকপি প্রতি পিস নেওয়া হচ্ছে আড়াই টাকা। এ৪ কাগজের প্যাকেটের দাম ছিল ২২০, এখন তা ৪০০ টাকা। অনেক গরিব মানুষ এসে এবার পুরাতন বই খুঁজছে। কাগজের দাম, আঠা ও বাইন্ডিং খরচও বেড়েছে।
বই কিনতে আসা ক্রেতা মো. মুসা বলেন, সিন্ডিকেট করে সব কিছুরই দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন শুধু বাকি ছিল শিক্ষা। সেটাও সিন্ডিকেটের আওতায় এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এর দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে বইয়ের পাইকারি বিক্রেতা ও মিলগুলোর সিন্ডিকেটে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের বাজার তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে পুস্তক প্রকাশনীর সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন কাগজের পাল্প আমদানি বন্ধ থাকায় এ সংকটের তৈরি হয়েছে। এ সংকটের সমাধান সহসাই হচ্ছে না।
শিক্ষা উপকরণের দাম লাগামহীন ॥ বই ছাড়াও সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ- কাগজ, কলম, জ্যামিতি বক্স, ক্যালকুলেটরসহ সব সামগ্রীর দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর বাংলাবাজার আর নীলক্ষেত ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার স্লেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
রাবেয়া বেগম মেয়ের খাতা-কলম কিনতে ৫০০ টাকা নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ের একটি দোকানে এসেছিলেন। কিন্তু দাম বাড়ায় চাহিদামতো খাতা ও কলম তিনি সব না কিনেই বাসায় ফিরেছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এই টাকায় আগে যা পেতাম এখন তা পাচ্ছি না। ৩০০ পেজ ও ১২০ পেজের ১০টি খাতা ও এক ডজন কলম কেনা যেত ৫০০ টাকায়।

এখন ৩০০ পেজের খাতার দাম তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা। নীলক্ষেত মোড়ের শিক্ষা উপকরণের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ব্যবহারিক খাতা ৪০ টাকারটা এখন ৬০ টাকা। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিসের দাম ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকারটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ৯৯১ এক্স ১৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা, ৯৯১ এক্স প্লাস ১৩৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা হয়েছে।

জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। রেজিস্টার খাতা ৩০০ পেজ ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, রাবার ডজনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অভিভাবকরা জানান, খাতা-কলম কেনার দোকানে যা কিনতে চায় তার দামই বেশি। বইয়ের দোকানে দাম শুনলে মনে হয় সেখানেও আগুন লেগেছে।
স্কুল ড্রেস, ব্যাগ-জুতার দাম বাড়তি ॥ সপ্তাহ ব্যবধানেই আসছে নতুন বছর। আর নতুন বছর মানেই নতুন শিক্ষাবর্ষ। এই উপলক্ষে বেড়েছে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ ও জুতার দাম। অনেক স্কুলের নিয়মের ফাঁদে অভিভাবকদের থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ভূরি ভূরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ড্রেস বানানোর ক্ষেত্রে ঠিক করে দিয়েছে নির্দিষ্ট টেইলার্স।

এর ফলে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অভিভাবকরা জানান, বাইরে থেকে এক জোড়া ড্রেস দেড় হাজার টাকার মধ্যে বানানো সম্ভব হলেও স্কুল নির্ধারিত টেইলার্সে সেটা লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকা। স্কুল থেকে বিদ্যালয়ের মনোগ্রাম না দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে টেইলার্স মালিকরা জানান, দুই সেট স্কুল ড্রেস, সোয়েটার, টাই ও মোজা দেওয়া হয় এই টাকার মধ্যে। আমাদের কাপড়ের মান বাইরের থেকে বেশ ভালো। তবে স্কুলগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা বলছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থী সবার যেন এক রকম স্কুল ড্রেস হয় তা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত বছর যে ব্যাগের দাম ছিল ৫০০ টাকা তা এখন ঠেকেছে ৮৫০ টাকায়। ভালো মানের হাজার টাকার ব্যাগের দাম দাঁড়িয়েছে ১৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। রাজধানীর একাধিক ব্যাগের দোকানে এ নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষও দেখা গেছে।  দোকানীরা জানান, আগামী মাস থেকে ব্যাগের দাম প্রতি পিসে ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা আরও বাড়বে।  চকবাজারের ব্যাগ আমদানিকারকরা জনকণ্ঠকে বলেন, স্কুলব্যাগগুলো আমদানি নির্ভর। ডলারের দামের কারণে ব্যাগের আমদানি খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া চীনে কোভিড পরবর্তী সময় থেকেই ব্যাগের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি প্রভাব রয়েছে।
রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্কুলের জুতা সাদা রঙের কেডস। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে কালো রঙের সু পড়ার চল আছে। কিন্তু নতুন বছর উপলক্ষে দুই ধরনের জুতারই দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানভেদে সাদা রঙের এক জোড়া কেডস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। কালো রঙের সু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকাতে। গত বছরের তুলনায় এবার এক জোড়া জুতা ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে মোজার। গত বছরের মতো এবারও মোজা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
ভর্তি ও টিউশন ফি বেশি রাখছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ॥ সরকারি স্কুলে বেতন নেওয়া হয় ১২ টাকা। কিন্তু বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন লাগামহীন। ঢাকার মধ্যম সারির স্কুলে গড়ে প্রতি শিক্ষার্থীকে মাসে ৮০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার, বেসরকারিতে ৮ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ১০ হাজার টাকার ফি নেওয়া যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত ফি নেওয়া ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে পৃথক চারটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি, ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফিসহ অন্যান্য ফি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে নিচ্ছে কি না তা সরেজমিনে যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করবে এসব কমিটি। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক গঠিত ঢাকা মহানগরীর ১৬টি মনিটরিং কমিটি, আটটি বিভাগীয় মনিটরিং কমিটি, ৫৫টি জেলা মনিটরিং কমিটি জেলা সদরের এবং উপজেলা মনিটরিং কমিটি উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত বিষয়ে সরেজমিনে মনিটরিং করে মাউশি অধিদপ্তরে রিপোর্ট দেবে।
প্রাইভেট-কোচিংয়ের খরচ বেড়েছে ॥ স্কুলের ক্লাসের পাশাপাশি অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন কোচিংমুখী। ঢাকায় কোচিংয়ের রমরমা বাণিজ্য, যা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। অধিকাংশ অভিভাবকের অভিযোগ, ব্যাচে সন্তানকে পড়াতে প্রতি মাসে শিক্ষককে দিতে হত এক হাজার টাকা। এখন অধিকাংশ শিক্ষক দেড় হাজার টাকা নিচ্ছেন। এর জন্য সব জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণ বলছে তারা।

অন্যদিকে কোচিংয়ে পড়াতে আগে ২ হাজার খরচ হলে এখন লাগছে তিন হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের থেকে বেশিও নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মোটামুটি মানের একটি কোচিংয়ে পড়তে প্রতি মাসে দিতে হয় ১৫০০-৩,০০০ টাকা।  মাধ্যমিক পর্যায়ে এই টাকা ক্লাস অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়। ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক কোচিং মান অনুযায়ী আরও বেশি নিয়ে থাকে।

আজিমপুরের শিক্ষার্থী লামিয়া বলেন, কোচিংয়ে তিনি চার বিষয়ে ক্লাস করি। বাসায় প্রতি বিষয়ে শিক্ষক রাখতে অন্তত ৪-৫ হাজার টাকা লাগত। চার বিষয়ে পড়তে লাগত ২০ হাজার টাকা। কষ্ট হলেও তাই কোচিংয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ কোচিং অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মাহবুব আরেফিন দাবি করে বলেন, অ্যাডমিশন কোচিংগুলো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। গত দুই বছর আগে ওসব কোচিংয়ে ভর্তি হতে লাগত ১৫ হাজার টাকা। এখন তারা শিক্ষার্থীদের থেকে ২০-২৪ হাজার টাকা নিচ্ছে। কিন্তু স্কুল কলেজ পর্যায়ে কোচিং ফি এখনো সহনীয় আছে।

×