ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ঘাপলা খুঁজছেন পরিকল্পনামন্ত্রী

দেশের ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাচ্ছে 

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশের ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাচ্ছে 

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান

দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার চেষ্টা করছে করছে সরকার। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে শুরু করে সার্জন সবকিছুই আছে বলে দাবি করা হয় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। তারপরও অন্তত ৮০ ভাগ রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। এর পেছনে কি কোনো ঘাপলা আছে কি না তা জানতে চেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। 

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশ আয়োজিত ঢাকা ক্যান্সার সামিট-২০২২ অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রশ্ন তুলেন। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগে চোখ, হার্টসহ দেশে কোনো ইনস্টিটিউট ছিল না, এখন অনেক হয়েছে। তারপরও আরও ভালো করতে হবে। কারণ, ভালো কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুঃখজন বিষয়, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নত হলেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভারত, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিমানে করে দিল্লি, মাদ্রাজ, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক যাচ্ছে। অনেকে পড়াশোনার জন্য যায় সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বড় অংশ যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগে চোখ, হার্টসহ দেশে কোনো ইনস্টিটিউট ছিল না, এখন অনেক হয়েছে। তারপরও আরও ভালো করতে হবে। কারণ, ভালো কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ২৫-৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে যে কারণে এসব ক্লিনিক করা হয়েছে সেটি পূরণ না হওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের যে গতি এসেছে, ২০৪০-৪১ সালের দিকে উন্নতি দেশে পৌঁছানোর যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে সবাইকে পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য গ্রামাঞ্চলেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রামে থাকে।’

গবেষণা জরুরি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে গবেষণা হচ্ছে না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীও অনেকটা ক্ষুব্ধ। চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণা। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে সরকার তা দেবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যয়, অধ্যাপক আব্দুল হাই। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্যান্সার সামিট ২০২২ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. নাজরিনা খাতুন ও সদস্য সচিব ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, ‘ক্যান্সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা। সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রকোপ বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে মুখের ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্যান্সারের রোগী দেখা যায়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ফলে বেশিরভাগ রোগীকে ঢাকামুখী হতে হয়। বিশেষ করে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। স্থানীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে এসব রোগী কমানো সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই ক্যান্সার চিকিৎসা একটি বড় সমস্যা। শুধু বয়স্করা নয়, কম বয়সীরাও নানা রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জন্য ডায়াগনোসিস বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়ে ডায়াগনোসিস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সংকট অবকাঠামো এখনও দুর্বল। কার্ডিয়াক অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু ক্যান্সারে এখনও আমরা পিছিয়ে। আগামীতে ক্যান্সার রোগী কোনো পর্যায়ে যেতে পারে সেজন্য একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার।’

দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ চালু করা দরকার উল্লেখ করে অধ্যাপক পারভিন শাহিদা আক্তার বলেন, ‘যদি তা বাস্তবায়ন হয় তাহলে দেশের মানুষ সহজে চিকিৎসা পেতে পারে।’

ঢাকা ক্যান্সার সামিট ২০২২-এ দেশ ও বিদেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের গবেষণা ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপনা করেন ।

এমএইচ

×