শস্যবীজ
শস্যবীজের অভ্যন্তরে কতটা প্রাণ, কী সম্ভাবনা সে তো বাংলার কৃষক ভাল জানেন। মাধুরী সঞ্চিতা স্মৃতি কৃষক নন। তবে তিনিও বীজের সন্ধান করেন। বীজ সংগ্রহে এখানে ওখানে ছুটে বেড়ান। মাটিতে বুনা বা ফল ফসল প্রাপ্তি তার উদ্দেশ্য নয়। বরং বীজের সম্ভাবনাকে নিজের মতো করে কাজে লাগিয়ে চলেছেন। শস্যের বীজকে গহনায় রূপান্তরিত করেছেন চারুকলা থেকে পাস করা এই শিল্পী। তার গহনাই হয়ে উঠেছে প্রকৃতির উপাদান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুজ্জ্বল রং কিন্তু সে রং আলাদা এক ভাষা পেয়েছে। অকৃত্রিম অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে দেয়। নান্দনিক সাজের নিশ্চয়তা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি প্রিয় প্রকৃতি বন্দনার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে এক একটি গহনা।
বিশেষ বৈশিষ্ট্যের এসব গহনা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। লা গ্যালারি বিচিত্র গহনা দিয়ে সাজানো এখন। রাখা হয়েছে বিভিন্ন জাতের বীজও। চেনা অচেনা এবং অল্প চেনা বীজ পাশাপাশি উপস্থাপন করে এসবের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে তেঁতুল, বকুল, করল্লা, রঞ্জনা, গিলা, রক্তকুঁচ, হরীতকী, আলকুশি, রিঠা ইত্যাদি গাছের বীজ। কোন কোন বীজ অনেকে হয়তো জীবনে প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পেয়েছেন। চায়ের বীজের কথাই যদি বলি, ক’জন আসলে চায়ের বীজ দেখেছেন? প্রদর্শনীতে ঠিক দেখা যাচ্ছে।
শিল্পী নানা জাতের বীজ নিয়ে কাজ করেছেন। কিছু বীজ সুই সুতোয় গেঁথে নিয়ে মালা তৈরি করেছেন। আবার মাটি বা মেটালের গহনায় বীজের সুনিপুণ ব্যবহার করেছেন। কাঠ ঝিনুক, কড়ি, শঙ্খ, মুক্তাসহ আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দেখা যায় প্রদর্শনীতে। এসবের সঙ্গে লোহা, তামা, পিতল ইত্যাদি ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সোনা রূপার গহনায় বীজ জুড়ে দিয়েছেন শিল্পী। গলার মালা, কানের ঝুমকো, হাতে পরার ব্রেসলেট থেকে শুরু করে কনের সাজের টিকলিÑ সবই গড়া হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। গিলাসহ আকারে বড় বীজ চিত্রিত করা হয়েছে। এসবে প্রাকৃতিক রঙের যৌক্তিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এর বাইরে অধিকাংশ বীজ তার নিজস্ব রং নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে গহনাগুলোকে প্রকৃতির উপাদান বলেই মনে হয়।
উপস্থাপনারও প্রশংসা করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহনার বৈচিত্র্যপূর্ণ উপস্থাপনা চোখে পড়ে গ্যালারিতে। কোন কোন গহনার বড়সড় ইনস্টলেশন করা হয়েছে। ইনস্টলেশনগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখছেন দর্শনার্থীরা। এর বাইরে দারুণ কিছু কম্পোজিশন শিল্পীর শিল্পবোধ শিল্পরুচি সর্বোপরি প্রকৃতিপ্রেমকে উর্ধে তুলে ধরে।
শিল্পী নিজেও বলছেন, আমার প্রকৃতি থেকে সৌন্দর্য খুঁজে নেয়ার আশৈশব আগ্রহ। আমার যাপিত জীবনে প্রকৃতির প্রভাব এবং আমার সমসাময়িক ভাবনা ও কাজের উপস্থাপন করা হয়েছে প্রদর্শনীতে। বীজকে আমার মনে হয় সকল সৃষ্টির প্রাণ। বীজ থেকেই নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। তাই এ বীজ ব্যবহার করে আমি ধাতব বস্তুতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করেছি। আমার গহনা প্রকৃতিকে ধারণ করেছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালবাসা বৃদ্ধি পাক, নতুন করে জেগে উঠুক- প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এ বার্তাই দিতে চাই আমি।
খুব জরুরী এ বার্তা গ্রহণ করতে ঘুরে আসুন প্রদর্শনী। গত শুক্রবার শুরু হওয়া প্লেজান্টনেস: দ্য স্টোরি অব মাধুরী, শীর্ষক প্রদর্শনী চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত।