স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর নিয়মিত খাবার পার্কের ঘাসে সিসা এবং বায়ু দূষণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মারা যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের প্রফেসর ও জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডাঃ মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান।
তিনি বলেন, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ঘাস জেব্রাগুলো নিয়মিত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ল্যাব পরীক্ষায় পার্কের এসব ঘাসে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পার্কের আশপাশের পরিবেশটি ঘন শিল্পায়ন এলাকা। তা ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনের জ¦ালানি ও মোবিল থেকে কালো ধোঁয়ার প্রভাব এবং একই সঙ্গে সিসার উপস্থিতিতে প্রাণীগুলোর দেহে বিষক্রিয়া ঘটেছে। একদিকে বায়ু দূষণ, অন্যদিকে প্রচ- শীতের কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পার্কের আটটি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু এসব কিছু জেব্রার মধ্যে প্রভাব ফেলেছে, সেহেতু অন্য প্রাণীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। মারা যাওয়া ১১টি জেব্রার মধ্যে তিনটি জেব্রার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। তবে কি রকম আঘাতে এটি হয়েছে- তা ওই তিনটি মৃত জেব্রার ধারণকৃত ছবি দেখে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, জেব্রাগুলো ভাই-বোন এবং বাবা-মায়ের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়েছে। একই পরিবারের মধ্যে প্রজনন ঘটলে সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। জেব্রাগুলো ঘোড়া প্রজাতির প্রাণী। একই পাত্রে বানর খাবার খেলেও বানর থেকে জেব্রার দেহে জীবাণু ছড়ানোর কথা নয়। মানুষ যে মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, সেভাবেই জেব্রার নিউমোনিয়া হতে পারে। তা ছাড়া জেব্রাগুলোর ম্যানেজমেন্টেও সমস্যা থাকতে পারে। সব বিষয় চিহ্নিত করে প্রাণীর সুস্থতার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমন একটি পার্কে একজন মাত্র ভেটিরিনারি চিকিৎসক এতগুলো প্রাণীকে কীভাবে মোকাবেলা করবে? পার্কের প্রাণীগুলোতে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দিলে একজনের পক্ষে সবগুলোকে একসঙ্গে দেখভাল করা সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ল্যাব পরীক্ষার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বুধবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির একটি মিটিং পার্কে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই মিটিংয়ে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরই সবচেয়ে বেশি প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারি মাসের ২ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনের ব্যবধানে এ পার্কে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহী মারা যায়। অসুস্থ রয়েছে পার্কের আরও কয়েকটি প্রাণী। ইতোমধ্যে জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ২৬ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সরিয়ে নেয়া হয় পার্কের প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে। তাদেরকে বন অধিদফতরের সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। ওই তিন কর্মকর্তার স্থলে নতুন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে যোগদান করেছেন।