
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব সভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশকে ছাড়িয়ে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে।
বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুর কাদের তাঁর সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাঁর ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি পার্টি, এই পার্টিতে দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়। আমরা কেউ নিয়মশৃঙ্খলার উর্ধে নই। তাই কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যে কোন সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি নিতে পারবেন। তাই শেখ হাসিনার উর্ধে কেউ নয়, দল করলে সবাইকে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, দলীয় সভানেত্রীর সভাপতিত্বে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে এবং ব্যক্তিগতভাবে সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যেকোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে আমরা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কেউ ছাড় পাবে না। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি এটা বিশেষ কারও ক্ষেত্রে, বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেয়ার বিষয় নয় এবং সুযোগও নেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার আগে সরকারের এক যুগ পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। আলোচনা শেষে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ছাড়াও করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়নে অর্জিত হয়েছে দৃশ্যমান সফলতা। স্বাধীনভাবে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। করোনার মতে বৈশ্বিক মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্ব নন্দিত। একসময়ে তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্য। পাট রফতানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রথম। ইলিশে প্রথম, তৈরি পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয়, অন্যান্য ক্ষেত্রসহ চাল উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় রেখে চলছে অনবদ্য অবদান উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অতীতের অবিশ্বাসের কৃত্রিম দেয়াল ভেঙ্গে নির্মিত হয়েছে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধ। সমাধান হয়েছে দীর্ঘদিনের ছিটমহল বিনিময় কার্যক্রম। সামাজিক এবং যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ খাতে রীতিমতো বিপ্লব সাধিত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে শতভাগ বিদ্যুত, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসব প্রধানমন্ত্রীর অবদান। শেখ হাসিনার হাত ধরেই মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণাধীন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান।
সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু সরকারের গৃহীত নীতি এবং পরিকল্পনা থাকবে চলমান, ভিন্ন ভিন্ন দল সরকারে আসতে পারে তবে রাষ্ট্রের লক্ষ্য এবং অর্জনের ধারাবাহিকতা থাকবে গতিশীল। প্রতিহিংসা থাকবে না উন্নয়নে। উন্নয়ন প্রবাহমান জলধারার মতো। যতক্ষণ শেখ হাসিনা আছেন জনমানুষের পাশে, ততক্ষণ কোন অপশক্তিই দেশকে পিছিয়ে দিতে পারবে না। সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।