
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় স্বামী ও তার বন্ধুর হাতে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক গৃহবধূ (২৪)। স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে স্বামী তার বন্ধুকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের পর মাথার চুল কেটে দেয়াসহ শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বগুড়া শজিমেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে গৃহবধূর স্বামী রফিকুল (২৬) ও তার অজ্ঞাত বন্ধু (২৫) পলাতক রয়েছে।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, স্কুলে পড়া অবস্থায় বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা দক্ষিণপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের প্রেমে পড়েন। সে সময় রফিকুল একটি বেসরকারী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারের অসম্মতিতে তারা বিয়ে করেন প্রায় ৯ বছর আগে। বিয়ের পর তারা শহরের চকলোকমান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। রফিকুল একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত রয়েছে বলে তার স্ত্রী জানান। নির্যাতিত গৃহবধূ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন ধরে তাদের সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়। তাদের ৮ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। গৃহবধূর অভিযোগ, তার স্বামী তাকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় জানুয়ারি মাসে রফিকুল তাকে মারপিট করে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখে গিয়েছিল। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সে সময় তিনি উদ্ধার পেয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। এরপর থেকে স্বামী রফিকুল বাড়িতে আসত না। শনিবার দুপুরের কিছু আগে ওই গৃহবধূ বাড়িতে একাই ছিলেন। এ সময় তার স্বামী এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রথমেই তার মুখ চেপে ধরে ঘরের ভিতরে নেয়া হয়। সেখানে হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে মারপিট করা হয়। এর পর রফিকুল তার স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে বন্ধুকে ঘরের ভিতর ঢুকে দিয়ে বাইরে থাকে। গৃহবধূর অভিযোগ এ সময় স্বামীর বন্ধু তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে দু’জন গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্লেড জাতীয় কিছু দিয়ে একাধিক আঘাত করে। এক পর্যায়ে তার স্বামী মাথার চুল কেটে দেয় এবং বোতলে থাকা এসিড বা দাহ্য জাতীয় পদার্থ শরীরে ঢেলে দেয়ার পর আগুন দিয়ে দুজনই পালিয়ে যায়। নৃশংস নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ কোন ভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। তার মা ও ভাই একই এলাকায় থাকেন। খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে তারা বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গৃহধূর মা আয়মা বেগম জানান, তার মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করলেও পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া হয়েছিল এবং চকলোকমান এলাকায় মেয়ে জামাই ভাড়া বাসায় থাকতেন। গৃহবধূর ভাই রবিন হোসেন জানান, তার বোনের ওপর নির্যাতনের খবর শুনে তিনি বাড়িতে আসেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তার বোনের শিশু সন্তান স্কুলে ছিল। এ ব্যাপারে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, নির্যাতিত মেয়েটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে। বগুড়ার সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল বগুড়া সদরের মধ্যে নয়, এটি বগুড়ার শাজাহানপুর থানার মধ্যে।