ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকাবাসীকে নবনির্বাচিত দুই মেয়রের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ঢাকাবাসীকে নবনির্বাচিত দুই মেয়রের  ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত ঢাকা গড়ার যে রায় দিয়েছেন ঢাকাবাসী এজন্য ঢাকাবাসীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত দুই মেয়র। একই সঙ্গে দ্রুতই নির্বাচনের সব পোস্টার অপসারণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন নব নির্বাচিত দুই মেয়র। রবিবার নির্বাচন পরবর্তী বিজয় নিয়ে আলাদা স্থানে গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন নবনির্বাচিত ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানম-ির ৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ রায় ঢাকাবাসীর বিজয়। আমি এ বিজয় ঢাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করছি। বঙ্গবন্ধু ও সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ বিজয় আমি ঢাকাবাসীকে উৎসর্গ করছি। এ বিজয় ঢাকাবাসীর বিজয়। আমার বিশ্বাস ছিল ঢাকাবাসী উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব সাড়া দেবে। দায়িত্বভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করব। ঢাকাবাসীর কাক্সিক্ষত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। তাপস আরও বলেন, আমাদের অনেক কাজ রয়েছে। বর্তমানে যারা কাউন্সিলর রয়েছেন এবং যারা নির্বাচিত হয়েছেন। একই সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের আমি অনুরোধ করব আমাদের প্রচারে যেসব ব্যানার-ফেস্টুন পোস্টার লাগানো হয়েছে তা যেন সোমবারের মধ্যে অপসারণ করা হয়। আমরা চাই একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা যে গুরু দায়িত্ব পেয়েছি সে দায়িত্ব পালনের সদা সচেষ্ট থাকব। কোন রকম বিশৃঙ্খলা ও অশুভ শক্তি যেন ঢাকাকে অচল না করতে পারে, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। দল-মত-নির্বিশেষে আমরা সবার জন্যই কাজ করব। পরাজিত প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাপস বলেন, যিনি পরাজিত হয়েছেন তার প্রতিও আমার সমবেদনা রইল। আমি আশা করি উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে তিনিও আমাদের সহযোগিতা করবেন। কারও প্রতি আমাদের কোন বিদ্বেষ নেই। ঢাকার উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনে রাজনীতির উর্ধে গিয়ে আমরা কাজ করব। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি হরতাল প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক, ঢাকাবাসী যে রায় ও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটার বিরুদ্ধে হরতাল ঢাকার আমি নিন্দা জানাই। ঢাকাবাসী উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে যে রায় দিয়েছেন এটাকে সবার সম্মান করে গ্রহণ করা উচিত ছিল। জনগণের রায় এভাবে প্রত্যাখ্যান করায় আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। দায়িত্ব পাওয়ার পর কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ইশতেহার অনুযায়ী আমরা প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলো দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব। দায়িত্বগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করব। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কোন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের রূপকল্প, সেটার লক্ষ্যেই আমরা ঢাকাকে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য ঢাকাবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, শুভাকাক্সক্ষী ও গণমাধ্যমকেও নিরলস পরিশ্রমের করে তার প্রচারে সহযোগিতার জন্য শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান। এদিকে, ঢাকা উত্তরে আগামী তিনদিনের মধ্যে পোস্টার সরানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে নির্বাচনের ফলাফল পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। আতিকুল ইসলাম বলেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে উত্তরের পোস্টার সরানো হবে। লেমিনেটিং পোস্টারগুলো রিসাইকেল করা হবে। যারা রিসাইকেল করবে তারা জানিয়েছে পোস্টারগুলো থেকে কাগজ বের করে আনা হবে। আর পলিথিন রিসাইকেল করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আতিক বলেন, এ পোস্টার সরাতে অবশ্যই প্রার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। যারা এগুলো লাগিয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে আজই অনেক এলাকায় পোস্টার সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও দুটি দল এ কাজে নেমেছে। সিটি কর্পোরেশনও পোস্টার সরাচ্ছে। এবার খুব দ্রুত সময়ে পোস্টার সরে যাবে। তিনি বলেন, গত নয় মাস অনুশীলন করেছি। এতদিন একটি সুযোগ চেয়েছিলাম। নগরবাসী আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের নিয়ে নগরের সমস্যা দূর করব। এটি একলা চলার পথ না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করব। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই হবে আমার অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও নতুন ১৮ ওয়ার্ড নিয়েও কাজ করা হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, সবাইকে নিয়ে মোকাবেলা করব। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে উল্লেখ করে আতিক বলেন, সকল সমস্যায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের সহায়তা করবেন। উত্তর সিটির আওয়ামী লীগ গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন নির্বাচনে পরাজয়ের পর হরতালে ব্যর্থতার গ্লানিতে রয়েছে বিএনপি। তাদের হরতালের কোন ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর এই সদস্য অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে জেতার জন্য নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করেছে। ভোটার উপস্থিতির হার কম হয়েছে, কিন্তু কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। তারা (বিএনপি) দেখাতে চেয়েছিল এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। কিন্তু নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তারা হরতাল দিয়েছে, কিন্তু এ হরতালের কোন ভিত্তি নেই। পুরো ঢাকা এদিন স্বাভাবিক ছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপির হরতাল দেয়া রাজনৈতিক ভুল। তারা বলেছিল, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে এসেছে, তাদের আন্দোলনও হলো না, নির্বাচনও হলো না। ভোটার কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তোফায়ের আহমেদ বলেন, এবার ভোট কম কাস্টিং হয়েছে মূলত কয়েকটি কারণে। ভোটের দিন গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং সত্যিকার অর্থেই গাড়ি চলেনি। রিক্সা চলাচলও কম হয়েছে। ভোটের দিন সকালে ঠা-াও ছিল। সবচেয়ে বড় কথা বিএনপি আগের দিন থেকেই সন্ত্রাস হবে, গোলমাল হবে, আমাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেবে না, পোলিং এজেন্ট থাকতে দিবে না এ রকম নেতিবাচক প্রচারের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির নেতিবাচক ও মিথ্যা প্রচারে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা দল করে না, সাধারণ ভোটার তারা ভেবেছে শুধু শুধু ভোট দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ার দরকার কি, বাসায় থাকি। এ রকম নানা কারণে ভোটার কম, নইলে এমন হতে পারে না। এবার যেহেতু ইভিএম এ ভোটাররা সঠিকভাবে ভোট দিতে পেরেছে, মানুষ বুঝতে পেরেছে ইভিএমে কারচুপি করার সুযোগ নেই তাই আগামীতে আর এমন হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে একজন বিদেশী পর্যবেক্ষকও বলে নাই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে এক সাংবাদিক আহতের বিষয়টি দুঃখজনক, কলঙ্কজনক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সংসদ সদস্য (এমপি) সাদেক খান, আসলামুল হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।

আরো পড়ুন  

×