ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে আদালত নতুন কিছু নয়, আগেও এমন হয়েছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কারাগারে আদালত নতুন কিছু নয়,  আগেও এমন  হয়েছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে আদালত স্থাপন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার এটা নতুন কিছুু নয়, বাংলাদেশে এর আগেও কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার করা হয়েছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়েই এ রকম বিচার হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিচারে কোন রাজনীতি নেই, কোন প্রতিহিংসা নেই। বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন বলেই আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। তিনি যদি নির্দোষ হতেন তাহলে তার আইনজীবীরাই আদালতে প্রমাণ করতে পারতেন যে, বিএনপি নেত্রী নির্দোষ। কিন্তু তা পারেননি। অপরাধী অপরাধীই, তার বিচার হবে। এখানে কোন রাজনীতি নেই, প্রতিহিংসা নেই। কাজেই অপরাধীর সাজা তো হবেই। খালেদা জিয়ার বিচার নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা বলেন প্রতিহিংসা। প্রতিহিংসা কিসের? আমরা কি এতিমের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে খেতে চেয়েছিলাম? খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও নিরাপত্তা বিবেচনা করে কারাগারে কোর্ট বসানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারাগারে কোর্ট বসানো যায়। বিডিআরের মামলার বিচার কারাগারের জায়গায় কোর্ট বসিয়ে করা হয়েছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়কার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কারাগারে কোর্ট বসিয়ে বিচার করেছিল। তাহলে কি জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলে বলে জেলে কোর্ট বসিয়ে বিচার করতে পারবে? তাহলে তারা (বিএনপি) বলুক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। ‘গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে বলেছেন, আমাকে সাজা দেয়ার জন্যই এখানে আদালত বসানো হয়েছে। এখানে ন্যায় বিচার নেই। আপনাদের যা মন চায়, আমাকে ততদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দেন। আমি অসুস্থ বারবার আদালতে আসতে পারব না।’ বিএনপি নেত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা কোন ধরনের কথা? একজন মানুষ যিনি সংবিধান মানেন, আইন মানেন, তিনি কীভাবে বলেন যে, আমি আদালতে যাব না। আপনারা পারলে সাজা দিয়ে দেন! নিজেকের নিরপরাধ মনে করলে তিনি অবশ্যই আদালতে আসবেন। আমার নামেও তো মামলা ছিল। কই আমি তো পালিয়ে যাইনি। বিএনপি নেত্রী কেন আদালতে যান না? অপরাধী বলেই তিনি আদালতে যান না। খালেদা জিয়ার অপরাধী মন! আদালতে খালেদা জিয়ার সময় বিএনপি আইনজীবীদের না আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির অনেক আইনজীবী খালেদা জিয়ার হাজিরা সময়ে আসেন না। এটা বুঝতে হবে যে, হয় তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) আইনে লড়াইয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) নিরাপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন না অথবা তাকে বয়কট করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যে দলের জন্ম হয়েছে সেই দলের কাছ থেকে আমাদের সংবিধানের কথা শুনতে হয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে গৃহ পরিচারিকা থাকে তাকে কোন আইনের বলে তার সঙ্গে রাখেন? খালেদা জিয়া ঘুমাতে পারবেন না বলে বিশেষ অর্থপেডিক গদি সরবরাহ করেছি। এটা কোন আইনে আছে? এটা কী তিনি জানতেন না? অথচ খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বিমান বাহিনীর প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদকে কারাগারের ফ্লোরে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় বিএনপি নেতাদের এই মিথ্যা অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের জোট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকুক। আমরা চাই তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক। কিন্তু তারা যেন বিএনপি-জামায়াতের ওপর ভর না করে। ড. কামালের নাম উল্লেখ না করে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. কামাল) নিজে সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু তিনি কীভাবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা চান? ওই খাল কেটে কুমির আর আনতে দিব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদেরের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সাংগঠনিক ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের বেশ কৌশল চূড়ান্ত করা হয়।
×